• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

দিল্লিতে তালিবান বিদেশমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠকে নিষেধ মহিলা সাংবাদিকরা! দায় অস্বীকার কেন্দ্রের

প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা রাহুল-প্রিয়াঙ্কার, প্রতিবাদ মহিলা সাংবাদিকদের

ফাইল চিত্র

দিল্লির আফগান দূতাবাসে তালিবান সরকারের বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সাংবাদিক বৈঠকে নিষিদ্ধ মহিলা সাংবাদিকেরা। এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে শুক্রবার থেকে তোলপাড় দিল্লির রাজনীতি। এবার সব অভিযোগ অস্বীকার করল বিদেশমন্ত্রক। আফগান বিদেশমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনে মহিলা সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ না জানানোর বিষয়ে ‘তাদের কোনও হাত নেই’, স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলে কেন্দ্র।

বিদেশ মন্ত্রক তরফে জানানো হয়েছে, এই সাংবাদিক সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্র তাঁরা পাঠায়নি। মুম্বইয়ে অবস্থিত আফগানিস্তানের কনসাল জেনারেল তাঁদের নির্বাচিত সাংবাদিকদের কাছে এই আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছেন। মুত্তাকির সফরের জন্য দিল্লিতে রয়েছেন কনসাল জেনারেল। বিদেশমন্ত্রকের বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে আফগান দূতাবাসের এলাকা ভারত সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত নয়।

Advertisement

উল্লেখ্য, শুক্রবার দিল্লির চাণক্যপুরীতে হাতে গোনা কয়েকজন পুরুষ সাংবাদিকের মুখোমুখি হয়েছিলেন আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রী।  সেখানে কোনও মহিলা সাংবাদিককে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ। প্রসঙ্গত, শুক্রবার ছয় দিনের জন্য ভারতে এসেছেন আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রী। ওই দিনেই তিনি দিল্লিতে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেন।

Advertisement

মুত্তাকির সাংবাদিক বৈঠকের ঘটনাকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন একাধিক মহিলা সাংবাদিক। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করার পাশাপাশি মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে সাংবাদিক নয়নিমা বসু এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘ভারত সরকারের নাকের ডগায়, রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে আফগান বিদেশমন্ত্রী মুত্তাকি সাংবাদিক বৈঠক করলেন। সেখানে মহিলা সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হল না। এটা কীভাবে সম্ভব? মহিলা সাংবাদিকদের প্রতি এই জঘন্য আচরণের সিদ্ধান্ত কে অনুমোদন করেছে?’

‘দ্য হিন্দু’র সাংবাদিক সুহাসিনী হায়দার লিখেছেন, ‘এই ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। তালিবান তাদের দেশে মহিলাদের প্রতি ঘৃণ্য আচরণ করে, লিঙ্গ বৈষম্যকে মান্যতা দেয়। তাঁদের সেই চিন্তাধারাকে সরকার প্রটোকলের মাধ্যমে ভারতে জায়গা দিল। এই ঘটনাকে কোনও ভাবে মেনে নেওয়া যায় না।’

সাংবাদিক গীতা মোহন এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘আফগান বিদেশ মন্ত্রীর প্রেস কনফারেন্সে মহিলা সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এটি একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না।‘ সাংবাদিক পৌলমী সাহা সমাজ মাধ্যমে লেখেন, ‘কেন তালিবান সরকার ভারতের মাটিতে সংবাদ সম্মেলন করার অনুমতি পাচ্ছে? যেখানে দেশের নারী সাংবাদিকদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয় এবং তাঁদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না?’

সাংবাদিক বরখা দত্ত এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন , ‘আজ তালিবান সরকারের মন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠকে মহিলা সাংবাদিকদের ডাকা হয়নি। অবশ্যই ওই সম্মেলনে উপস্থিত পুরুষ সাংবাদিকরা তালিবানদের এই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারতেন। ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি, ওদের দূতাবাসের বাইরে সাংবাদিক বৈঠক করার জন্য সরকারের চাপ দেওয়া উচিত ছিল। তাতে প্রত্যেকে সমান সুযোগ পেতেন।

তালিবানের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানে গোঁড়া, রক্ষণশীল, লিঙ্গবৈষম্যমূলক শাসনব্যবস্থা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। তার প্রতিফলনই ভারতে দেখা গেল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তালিবানি চাপের মুখে ভারত এই বিষয়ে নীরব রইল কি না, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও।

লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘মাননীয় মোদী, প্রকাশ্য মঞ্চে মহিলা সাংবাদিকদের বাদ দিয়ে দেওয়া হল। যার অর্থ ভারতের প্রত্যেক মহিলাকে এটাই বললেন যে আপনি তাঁদের হয়ে দাঁড়াতে ব্যর্থ।‘ কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরাও প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি নিশানা করেছেন। সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে তিনি লেখেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজি, তালিবান প্রতিনিধির ভারত সফরে সাংবাদিক বৈঠকে মহিলা সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হল না। এই বিষয়ে দয়া করে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করুন।‘

প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম জানান, মহিলা সহকর্মীদের না-দেখতে পেয়ে পুরুষ সাংবাদিকদের ওই সাংবাদিক বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসা উচিত ছিল। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁর বক্তব্য, ‘সরকার দেশের প্রতিটি মহিলার সম্মানহানি করেছে। তালিবান মন্ত্রীকে মহিলা সাংবাদিকদের বাদ দিতে অনুমতি দিয়ে একেবারে মেরুদণ্ডহীনতার প্রমাণ দিল কেন্দ্র।‘

তালিবান ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আফগানিস্তানে মহিলাদের ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে। মেয়েদের স্কুল ও কলেজে যাওয়া বন্ধ করা হয়েছে। কর্মক্ষেত্র থেকে মহিলাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এই সব নারীবিদ্বেষী নীতির জন্য আন্তর্জাতিক মহলে আগেই সমালোচিত হয়েছে তালিবান। জুলাই মাসে রাষ্ট্রসংঙ্ঘও এই নীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।

২০২১ সালে আফগানিস্তানের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে তালিবান ক্ষমতায় আসার পর এটাই মুত্তাকির প্রথম ভারত সফর। তবে সফরের শুরুতেই মহিলা সাংবাদিকদের বাদ দেওয়া নিয়ে যে আন্তর্জাতিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও বড় প্রশ্ন তুলে দিল বলে অনেকেই মনে করছেন। বিদেশ মন্ত্রক অবশ্য মনে করছে, এতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কোনও আঁচ পড়বে না।

 

Advertisement