অদ্ভুত তুলনা

বিতর্কিত এক সাধ্বীকে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামিয়ে দেওয়া থেকে বোঝা যাচ্ছে ‘বিকাশ’ এখন গুরুত্ব পাচ্ছে না।সেই সঙ্গে তাদের সামরিক কার্ডও খেলতে হচ্ছে এবং তার জন্য ১৯৭১-এ ইন্দিরা গান্ধির কৃতিত্বকে টেনে আনতেও তারা কসুর করছে না।এই ধরনের তুলনা ভাল কিছু প্রতিফলিত করে না।

Written by SNS Kolkata | April 24, 2019 9:53 am

রাজনাথ সিং(ছবি- PIB)

ভালােবাসা ও নির্বাচনের মরশুমে সব কিছুই ঠিক বলে যদি মেনে নেওয়া হয় তাহলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন ১৯৭১-এর যুদ্ধের সঙ্গে বালাকোটের কৌশলগত বিমান হামলার তুলনা করেন তখন তিনি অতি সহজ বিশ্বাসের পথেই ধাবিত হন।নির্বাচনী ফায়দার জন্য সামরিক সাফল্যকে ব্যবহার করার মতাে বিতর্কিত বিষয়ের মধ্যে প্রবেশ না করেও একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে দেশের প্রবীণরা নিশ্চয়ই রাজনাথ সিংয়ের এই যুক্তিতে বিমােহিত হবেন না যে বাংলাদেশের মুক্তির জন্য যদি ইন্দিরা গান্ধিকে কৃতিত্ব দেওয়া হয় তাহলে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে জইশ সন্ত্রাস শিবিরে বিমান হামলার জন্য নরেন্দ্র মােদি কেন প্রশংসিত হবেন না? এটা যেন আপেল ও কমলালেবুর মধ্যে তুলনা,দুটি ভিন্ন পরিস্থিতির বাস্তবতার সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।

অটলবিহারী বাজপেয়ী যেভাবে কারগিল যুদ্ধ সম্পন্ন করেছিলেন তার জন্য তিনি সামরিক ও কুটনৈতিক বিচারে সারা বিশ্বের প্রশংসা অর্জন করেছিলেন।কিন্তু বালাকোট নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে,এমনকী দেশের বাইরেও।১৯৭১ সালে পাকিস্তান দ্বিখণ্ডিত হয়ে একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়।কিন্তু সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ও বালাকোটে বিমান হামলার পরেও সন্ত্রাস কিন্তু থামেনি।সংক্ষেপে বলতে গেলে সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদাররা কিন্তু এই ধরনের তুলনায় খুবই বিব্রত।

মুল কথাটা হল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্বাচনী সমাবেশের শ্রোতারা এই  কথায় প্রভাবিত হলেও এমন কিছু ভােটদাতা তাে থাকতে পারেন যাঁরা তাঁদেরও এই দলে ধরে নেওয়ার জন্য অপমানিত বােধ করতে পারেন।মানুষকে কি এত সহজে বােকা বানানাে যায়?সামরিক বাহিনীকে রাজনীতিতে টেনে আনার প্রয়াসের বিরুদ্ধে বেশ কিছু প্রাক্তন সামরিক কর্তা মুখ খােলায় কি বিজেপি তার জবাব দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে?পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থার উদাহরণ দিতেই কি ১৯৭১-এর অবতারণা?

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে রাজনাথ সিংয়ের নেতৃত্বে যে খুব সফল এমনটা বলা যাবে না।২০১৪-তে যে অগ্রাধিকারগুলি ছিল তার প্রেক্ষিতে বিষয়টি বিচার করলে এটা স্পষ্ট হয়ে যায়।জঙ্গিদের শিরদাঁড়া ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি বারবার দাবি করলেও জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হয়নি।নির্বাচনের মরশুমে মাওবাদীরা তাদের অস্বস্তি জাহির করতে জোর ধাক্কা দিতেও কসুর করেনি।

সারা দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সামান্যই উন্নতি ঘটেছে।পুলিশ রাজ্য সরকারগুলির অধীনে কাজ করে বলে বাংলার যে যুক্তি দেখানাে হয় তার একটা প্রতীকী মূল্য ছাড়া কিছু নেই। দিল্লি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে থাকলেও তা যে নিরাপদ নয় তা জানতে কারুর বাকি নেই। বিতর্কিত এক সাধ্বীকে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামিয়ে দেওয়া থেকে বোঝা যাচ্ছে ‘বিকাশ’ এখন গুরুত্ব পাচ্ছে না।সেই সঙ্গে তাদের সামরিক কার্ডও খেলতে হচ্ছে এবং তার জন্য ১৯৭১-এ ইন্দিরা গান্ধির কৃতিত্বকে টেনে আনতেও তারা কসুর করছে না।এই ধরনের তুলনা ভাল কিছু প্রতিফলিত করে না।