• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

দুর্ঘটনায় নানা প্রশ্ন

আহমেদাবাদে ড্রিমলাইনার বিমান দুর্ঘটনার পর আতসকাচের তলায় চলে এসেছে আমেরিকার বোয়িং মিান নির্মাণকারী সংস্থা এবং এয়ার ইন্ডিয়ার মালিক টাটা গোষ্ঠীর ভূমিকা।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

মুনাফার লোভ যখন মানুষের জীবনের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে তখন বিমান নির্মাণ থেকে শুরু করে মেরামতি রক্ষণাবেক্ষণ সব কিছুই নির্মমভাবে অবহেলিত হয়। দ্রুত অর্ডার সরবরাহের জন্য বিমান নির্মাণে যেমন গুণগতমানের ঘাটতি থাকছে তেমনই বিমান পরিবহণ সংস্থাগুলিও ন্যূনতম নিরাপত্তার ধার ধারে না। পাইলট ও কর্মী কম থাকায় অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হয়। তেমনই বিমান সংখ্যা কম থাকায় বিশ্রামহীন এবং রক্ষণাবেক্ষণহীন ভাবে বিমানগুলিকে টানা চালানো হয়। সবটাই প্রতিযোগিতার নামে সর্বোচ্চ মুনাফা ও বাজার দখলের জন্য। পুঁজি, বাজার, মুনাফা ইত্যাদি যতদিন মানুষের জীবনের থেকে বেশি গুরুত্ব পাবে ততদিন মানুষের জীবনের বিপন্নতা কাটার সুযোগ নেই।

ভারতের অসামরিক বিমান পরিবহণের ইতিহাসে ভারতের মাটিতে একক বিমানের বৃহত্তম ও ভয়ঙ্করতম দুর্ঘটনাটি ঘটে গেল গুজরাতের আহমেদাবাদ বিমান বন্দরে। একদা রাষ্ট্রায়ত্ত বর্তমানে মোদী সরকারের কল্যাণে টাটাদের মালিকানাধীন এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি ২৪২ জন যাত্রী ও কর্মী নিয়ে আমেদাবাদ থেকে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল। কিন্তু টেক অফের পর এক মিনিট কাটতে না কাটতেই বিমানটি ভেঙে পড়ে একটি মেডিকেল কলেজের হস্টেল ও নির্মীয়মান বহুতলে। একজন ছাড়া বিমানের সব যাত্রীই মারা গিয়েছেন। আর যেখানে বিমানটি ভেঙে পড়ে সেই হস্টেলের ঠিক কতজন মারা গিয়েছেন বা আহত হয়েছেন তা এখনও স্পষ্ট নয়।

Advertisement

মার্কিন সংস্থা বোয়িংয়ের তৈরি ৭৮৭ মডেলটি বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক মডেল হিসাবে প্রচারিত। তেমনই এই মডেলটি নিয়ে নানা জটিলতা ও আশঙ্কার কথাও বারবার শোনা যায় যা অন্য কোনও মডেল নিয়ে শোনা যায়নি। বস্তুত বোয়িং ৭৮৭ বাণিজ্যিকভাবে প্রথম ২০১১ সালে চালু হবার পর থেকেই হাজারো সমস্যায় জর্জরিত। বিপদের আশঙ্কায় অনেক দেশেই এই মডেল বসিয়ে দিয়ে বোয়িং কর্তৃপক্ষ সেগুলি মেরামত করে এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ বদলায়। কিছু বিমান মেরামতির জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে আমেরিকায় বোয়িংয়ের কারখানায় উড়িয়ে আনা হয়।

Advertisement

বিভিন্ন দেশের বিমান সংস্থা এই বিমান চালাতে গিয়ে যেসব সমস্যার কথা বলেছে সেগুলি মেরামত হলেও গলদ যে একেবারে গোড়ায় সেটা জমসমক্ষে তুলে ধরেন ওই সংস্থারই দুই কর্মী। তাঁরা জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় গুণমানের যন্ত্রাংশ ব্যবহার হচ্ছে না। যন্ত্রাংশ জোড়ার অতিরিক্ত দ্রুততার সঙ্গে করার ফলে গঠনগত ত্রুটি থেকে যাচ্ছে, যা নিরাপদ উড়ানের পক্ষে বিপজ্জনক। দুই কর্মীর আরও অভিযোগ নির্মাণ গলদ ও যন্ত্রাংশের মানের কারণে বিমানের আয়ু কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বোয়িং সংস্থা অবশ্য সব অভিযোগই অস্বীকার করেছে।

আহমেদাবাদে ড্রিমলাইনার বিমান দুর্ঘটনার পর আতসকাচের তলায় চলে এসেছে আমেরিকার বোয়িং মিান নির্মাণকারী সংস্থা এবং এয়ার ইন্ডিয়ার মালিক টাটা গোষ্ঠীর ভূমিকা। বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ বিমান হিসাবে সুখ্যাতি হওয়ার চোদ্দো বছর পর এবার দুর্ঘটনার সম্মুখীন হলো আহমেদাবাদে। ২০১১ সালে প্রথমে ড্রিমলাইনার কেনে এয়ার ইন্ডিয়া। আরও ভালো পরিষেবা দিতে ২০২৩ সালে মালিকানার হাতবদল হয়ে এয়ার ইন্ডিয়া এখন টাটা গোষ্ঠীর হাতে। তথ্য সূত্র জানাচ্ছে, রাষ্ট্রায়ত্ত থাকাকালীন এয়ার ইন্ডিয়া মাত্র দু’বার দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়। কিন্তু বেসরকারিকরণের পর গত দু’বছরে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনার সংখ্যা ৮টি। বস্তুত শুধু ড্রিমলাইনার বিমান নিয়েই গত কয়েক বছরে গোটা বিশ্বে একাধিক অভিযোগ ও বিতর্ক উঠেছে। অভিযোগ উঠেছিল প্রযুক্তিগত ত্রুটি নিয়েও। ২০২৫ সালের শুরু থেকে লাগাতার টেকনিক্যাল ফল্ট হয়ে চলেছে বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারে। তাই এয়ারক্র্যাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো বিস্তারিত তদন্ত শুরু করতে চলেছে। বিমান ভেঙে পড়ার মূল কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। উদ্ধারকাজ শেষে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে তদন্ত সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে হবে, এই নিশ্চয়তা এই মুহূর্তে দরকার। অন্য অনেক তদন্তের মতো আর্থিক থেকে রাজনৈতিক নানা স্বার্থসিদ্ধির কারণে এই ভয়ঙ্কর ঘটনাটির তদন্তও যেন ধামাচাপা না পড়ে, সরকারকে তা নিশ্চিত করেতে হবে।

Advertisement