উত্তর প্রদেশের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী নিয়োগের ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ। আইসিডিএসের ডিরেক্টরকে চিঠি দিয়ে গোটা দুর্নীতির পর্দাফাঁস করলেন খোদ মন্ত্রী। শিশু উন্নয়ন পরিষেবা ও পুষ্টি দপ্তরের প্রতিভা শুক্লার অভিযোগ, অঙ্গনওয়াড়ি নিয়োগে দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিস্ট্রিক্ট প্রোগ্রাম অফিসার এবং তাঁর অফিসের কর্মীরা বিভিন্ন উপায়ে কারচুপি করছে। সরাসরি আবেদনকারীদের কাছে ফোন করে ২ লক্ষ টাকা চাওয়া হচ্ছে। জেলা স্তরে যে নিয়োগ হচ্ছে, অবিলম্বে তা বাতিল করে রাজ্য স্তরে করারও দাবি জানিয়েছেন মন্ত্রী। সূত্রের খবর, যোগী আদিত্যনাথ সরকার এই বিষয়ে বড় পরিসরে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন জেলায় ৫২ হাজারেরও বেশি অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর পদ খালি রয়েছে। ২০২৪ সাল থেকে এ জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু অনেক জেলায় নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ ও হাইকোর্টে আবেদনের কারণে এখনও নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। বাকি অনেক জেলায় নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। সেই জন্য জেলা পর্যায়ে ডিস্ট্রিক্ট প্রোগ্রাম অফিসারদের (ডিপিও) দায়িত্ব দিয়েছে রাজ্য সরকার। এ জন্য গঠিত কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে সংশ্লিষ্ট জেলার চিফ ডেভেলপমেন্ট অফিসারকে (সিডিও) মনোনীত করা হলেও গোটা নিয়োগে বড় ভূমিকা রয়েছে ডিপিওর।
এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই একাধিক বার বিতর্ক দেখা গিয়েছে। সেই কারণে প্রয়োজনীয় যোগ্যতার মাপকাঠিতে অনেকবার পরিবর্তন আনা হয়েছে। তা সত্ত্বেও নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রায়ই ‘সেটিং-গেটিং’-এর খেলা চলছে বলে অভিযোগ। পছন্দ-অপছন্দের ভিত্তিতে নির্বাচন করার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে জেলা পর্যায়ের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে। এমন অনেক অভিযোগ সরকার ও আইসিডিএসের কাছে পৌঁছালেও দপ্তর পর্যায়েও তা চাপা দেওয়া হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে নারীকল্যাণ, শিশু উন্নয়ন পরিষেবা এবং পুষ্টি প্রতিমন্ত্রী প্রতিভা শুক্লা আইডিএসের ডিরেক্টরকে চিঠি লিখে ডিপিও এবং তাঁর অফিসের কর্মীদের নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন। মন্ত্রী চিঠিতে লিখেছেন, যে জেলায় তিনি সফর করছেন, সেখানে নিয়োগে দুর্নীতির প্রচুর অভিযোগ রয়েছে। আবেদন নেওয়া থেকে শুরু করে বাছাই পর্যন্ত কাজ চলছে ডিপিওর তত্ত্বাবধানে। এই প্রক্রিয়ার গোপনীয়তাও মানা হচ্ছে না। ডিপিও অফিসের কর্মীরা আবেদনকারীদের সরাসরি ফোন করে টাকা দাবি করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন মন্ত্রী।
প্রতিভা শুক্লার দাবি, প্রত্যেকের কাছে ২ লক্ষ টাকা করে দাবি করা হচ্ছে। ২১ ফেব্রুয়ারি লেখা এই চিঠিতে মন্ত্রী অবিলম্বে জেলাভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে রাজ্য স্তরে নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন। নিয়োগ দুর্নীতির বিষয়টি যে এই প্রথম প্রকাশ্যে এসেছে, তা নয়। এর আগে, উনচাহার বিধায়ক তথা সমাজবাদী পার্টির নেতা মনোজ পাণ্ডে ধারা ৫১-এর অধীনে বিধানসভায় নিয়োগে অনিয়মের বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন এবং এটি নিয়ে আলোচনার দাবি করেছিলেন। আর এবার রাজ্যের মন্ত্রী প্রতিভা শুক্লা নিজেই ডিরেক্টর আইসিডিএসকে চিঠি লিখে দুর্নীতি ফাঁস করলেন। মন্ত্রী চিঠি নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। তবে দোষীদের বিরুদ্ধে আদৌ ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি না, সেটাই এখন দেখার।
অনেক জেলায় ইনকাম সার্টিফিকেট তৈরির ক্ষেত্রেও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতার জন্য আয়সীমাও নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি, অফিসার, নেতা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের বেছে দেওয়া লোক নিয়োগের জন্য তহসিল কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করছে। যদিও এই অভিযোগ নিয়ে এখনই কিছু বলতে নারাজ শিশু উন্নয়ন পরিষেবা ও পুষ্টি দপ্তর।