আগরতলা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (এএমসি)-এর কোষাগার থেকে হঠাৎ করে উধাও হয়ে গিয়েছে ১৬ কোটিও বেশি টাকা। এই বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ঘিরে রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপক চাঞ্চল্য। বিরোধী দলগুলো এই ঘটনাকে রাজ্যের অন্যতম বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি হিসেবে চিহ্নিত করে উচ্চপর্যায়ের তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, জাল চেকের মাধ্যমে এই অর্থ ইউকো ব্যাঙ্কের আগরতলার প্রধান শাখা থেকে তোলা হয়েছে। চেকগুলিতে ব্যবহার করা হয়েছে এএমসি কমিশনার ডিকে চাকমা এবং প্রাক্তন ইন-চার্জ কমিশনার পি সামাদের জাল স্বাক্ষর। যদিও মেয়র দীপক মজুমদার দাবি করেছেন, পুরনিগমের কোনও কর্মী এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। তবে তিনি ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন।
Advertisement
বর্তমান কমিশনার ডিকে চাকমা ব্যয়ের হিসাব খতিয়ে দেখতে গিয়ে অনিয়ম লক্ষ্য করেন। এরপরই তিনি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে গোটা বিষয়টি জানান এবং পুলিশ প্রশাসনের নজরে আনেন। কমিশনারের অভিযোগ, চারটি পৃথক চেকের মাধ্যমে মোট ১৬ কোটিরও বেশি টাকা তোলা হয়েছে, অথচ এএমসি এমন কোনও চেক ইস্যু করেনি।
Advertisement
জাল চেকগুলিতে কমিশনার ডিকে চাকমা এবং তৎকালীন ইন-চার্জ কমিশনার পি সামাদের স্বাক্ষর নকল করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য, শৈলেশ কুমার যাদব কমিশনারের পদে না থাকায় সামাদ সাময়িকভাবে কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন। এই সময়েই তাঁর স্বাক্ষরের অপব্যবহার করে প্রতারণা চালানো হয়।
এই ঘটনায় ত্রিপুরা সিভিল সার্ভিস (গ্রেড-টু) অফিসার সুব্রত বণিকের নাম উঠে এসেছে। তিনি ড্রয়িং অ্যান্ড ডিসবার্সিং অফিসার (ডিডিও) হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বে ছিলেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাঁর চাকরির মেয়াদ শেষ হলেও, তাঁকে ছয় মাসের জন্য বর্ধিত দায়িত্বে রাখা হয়। ওই সময়েই অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
অভিযোগ পাওয়ার পর ইউকো ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগেই একটি এফআইআর দায়ের করেছে। ব্যাঙ্ক সূত্রে জানানো হয়েছে, বিষয়টি তারা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে এবং এএমসি-র ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে কীভাবে জাল চেক ব্যাঙ্কে জমা পড়ল এবং এত বড় অঙ্কের অর্থ ছাড়পত্র পেল, তা নিয়েই উঠছে বড় প্রশ্ন।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এই ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়ে সরব হয়েছে। তাদের অভিযোগ, পুরনিগমের কিছু অসাধু কর্মী এবং ব্যাঙ্কের মধ্যে সুস্পষ্ট যোগসাজশ রয়েছে, তা না হলে এই ধরনের প্রতারণা সম্ভব হত না। মেয়র দীপক মজুমদার জানিয়েছেন, ‘পুরো ঘটনার তদন্ত চলছে। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই আমাদের আশ্বস্ত করেছে যে তারা এই অর্থ ফেরত দেবে। তবে ব্যাঙ্কের ভূমিকা অবশ্যই প্রশ্নের মুখে। এত বড় গাফিলতি ক্ষমাযোগ্য নয়।’
ত্রিপুরা সরকারের একাধিক দপ্তর এখন এই ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে। জিএ, পি অ্যান্ড টি বিভাগও বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। ইতিমধ্যেই পূর্ণাঙ্গ অডিটের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, তদন্তে কী উঠে আসে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কী ধরনের পদক্ষেপ করা হয়।
Advertisement



