• facebook
  • twitter
Tuesday, 23 December, 2025

দিল্লি–শিলিগুড়ির পর আগরতলার ভিসা কেন্দ্রও বন্ধ করল ইউনূস সরকার

গত সোমবার শিলিগুড়ির ভিসা কেন্দ্রের সামনে একদল জনতা বিক্ষোভ দেখায়। ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাসের হত্যার প্রতিবাদেই ওই কর্মসূচি বলে জানান বিক্ষোভকারীরা।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

রাজধানী দিল্লি ও শিলিগুড়ির পর এবার আগরতলার ভিসা কেন্দ্রও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিল বাংলাদেশ। মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশে রাতারাতি এই তিনটি ভিসা কেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে আগরতলায় শুধু ভিসা পরিষেবাই নয়, দূতাবাসের অন্যান্য কনসুলার পরিষেবাও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রক। কী কারণে এই পরিষেবা স্থগিত করা হচ্ছে, সে বিষয়ে কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। সোমবার রাতে আচমকাই একটি সংক্ষিপ্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানায় আগরতলার সহকারী হাইকমিশন।

তবে একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, কলকাতার ডেপুটি হাইকমিশনের সমস্ত পরিষেবা এখনও স্বাভাবিকভাবেই চালু রয়েছে। ফলে পূর্ব ভারতের মধ্যে আপাতত একমাত্র কলকাতাতেই বাংলাদেশের ভিসা ও অন্যান্য কনসুলার পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে।

Advertisement

কূটনৈতিক মহল সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে একের পর এক হিংসা এবং সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের অভিযোগে ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্কের টানাপোড়েন ক্রমশই বাড়ছে। সেই টানাপোড়েনের সরাসরি প্রভাব পড়ছে ভিসা কেন্দ্রগুলির উপর। সম্প্রতি বাংলাদেশের ছাত্রনেতা ওসমান শরীফ হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে হিংসার ঘটনা ঘটে। সেই অস্থির পরিস্থিতির মধ্যেই সংখ্যালঘু হিন্দু যুবক দীপু চন্দ্র দাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘিরে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও তীব্র হয়।

Advertisement

দীপু চন্দ্র দাসের হত্যার প্রতিবাদে এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে বাংলাদেশে চট্টগ্রামের ভিসা কেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত সরকার। এর আগেই ঢাকায় ভারতীয় ভিসা আবেদনকেন্দ্র সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। পরে রাজশাহী এবং খুলনাতেও ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, দিল্লি, শিলিগুড়ি ও আগরতলায় বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্র বন্ধ করে ভারতের ওই পদক্ষেপের পাল্টা জবাব দিতে চাইছে ইউনূস সরকার।

যদিও ভারতের তরফে স্পষ্ট করা হয়েছে, তাদের সিদ্ধান্তের নেপথ্যে সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তাজনিত কারণ ছিল। সম্প্রতি বাংলাদেশে ভারতের কূটনৈতিক দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ হয়। সেই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সাময়িক ভাবে ঢাকায় ভিসা কেন্দ্র বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় দিল্লি। পরে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর পর ঢাকার পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সেই সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ভারতের ডেপুটি হাইকমিশন ঘেরাওয়ের ডাক দেয় একটি গোষ্ঠী।

এইসব উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই চট্টগ্রামে ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনের দপ্তর লক্ষ্য করে ইট ছোঁড়ার অভিযোগ ওঠে। পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সিলেটেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিলেটে ভারতের উপদূতাবাসের নিরাপত্তা বাড়ায় বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনার পরেই রবিবার চট্টগ্রামের ভিসা কেন্দ্র বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করে ভারত।

অন্যদিকে, দিল্লিতেও বাংলাদেশের হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ হয়। বাংলাদেশের কিছু সংবাদমাধ্যমে সেই ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করে দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে দিল্লি। এর বিরোধিতা করে বিবৃতি দেয় ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। সেখানে স্পষ্ট করে জানানো হয়, বিক্ষোভ হলেও কেউই বাংলাদেশের কূটনৈতিক দপ্তরের ভিতরে প্রবেশ করেননি। তবে ওই ঘটনাকে ঘিরে কূটনৈতিক টানাপোড়েন জিইয়ে রাখার চেষ্টা করছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার, এমন অভিযোগ উঠেছে। ইউনূস সরকারের দাবি, ভারত সরকার পুরো বিষয়টিকে ‘সরলীকরণ’ করার চেষ্টা করছে।

এই আবহেই রবিবার বাংলাদেশের ওই বিবৃতির পরের দিনই দিল্লিতে ভিসা কেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশের হাইকমিশন। তার কিছু সময়ের মধ্যেই জানা যায়, শিলিগুড়িতেও ভিসা কেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের কোনও ঘোষিত কূটনৈতিক দপ্তর নেই। সেখানে একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে ভিসা কেন্দ্র পরিচালিত হয়। কেন হঠাৎ করে সেই কেন্দ্র বন্ধ করা হল, তা এখনও পরিষ্কার নয়।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার শিলিগুড়ির ভিসা কেন্দ্রের সামনে একদল জনতা বিক্ষোভ দেখায়। ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাসের হত্যার প্রতিবাদেই ওই কর্মসূচি বলে জানান বিক্ষোভকারীরা। আন্দোলনের অন্যতম মুখ লক্ষ্মণ বনসল বলেন, ‘আমাদের এখানকার কর্মীদের সঙ্গে কোনও সমস্যা নেই। পুলিশ বাধা দিলেও আমরা সেই বাধা মানিনি। অফিসের আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলার পরেই এই কেন্দ্র বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

ক্রমশ একের পর এক ভিসা কেন্দ্র বন্ধ হওয়ায় ভারত–বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক কোন পথে এগোবে, তা নিয়ে কূটনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

Advertisement