আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে। তার প্রায় এক বছর আগে বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারের জনসভা থেকে ভোটের দামামা বাজিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তৃণমূল সরকারকে ‘নির্মম’ বলে কটাক্ষ করে রাজ্যের পাঁচ সংকটের কথা তুলে ধরেন তিনি। সেই বক্তব্যের পাল্টা হিসেবে দেশের পাঁচটি সমস্যার কথা তুলে ধরেছে তৃণমূল কংগ্রেস। মুর্শিদাবাদ–মালদহের সংঘর্ষের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তৃণমূল সরকারকে নিশানা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বক্তৃতায় উঠে এসেছে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির প্রসঙ্গও। মোদী ফের একবার মনে করিয়ে দিয়েছেন, অপারেশন সিঁদুর এখনও শেষ হয়নি। এই ইস্যুতে ফের পাকিস্তানকে আক্রমণ শানিয়েছেন তিনি।
জনসভা থেকে বাংলার পাঁচ সংকটের কথা তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী। এক, সমাজের হিংসা ও অরাজকতা। দুই, মা-বোনেদের নিরাপত্তাহীনতা, তাঁদের উপর হতে থাকা জঘন্য অপরাধ। তিন, বেকারত্ব। চার, বেলাগাম দুর্নীতি, এর ফলে প্রশাসনের উপর থেকে মানুষের বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। পঞ্চম, গরিবের অধিকার ছিনিয়ে নিতে শাসক তৃণমূলের স্বার্থপর রাজনীতি। মোদীর এই পাঁচ সংকটের পাল্টা হিসেবে দেশের পাঁচ সমস্যার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন রাজ্যের শাসকদল। এক, আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে মণিপুর ইস্যুকে হাতিয়ার করেছে তৃণমূল। ২ বছর ধরে এই রাজ্য জ্বলছে। সবার আগে বিজেপিকে নিজের ঘর সামলাতে বলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দুই, মহিলাদের নিরাপত্তার বিষয়ে উন্নাও ও হাথরাস প্রসঙ্গ তুলে বিজেপিকে নিশানা করেছে বাংলার শাসকদল। তিন, যুব সমাজের হতাশার প্রসঙ্গে কেন্দ্রের অধীনে থাকা নিটে দুর্নীতি, পেপার লিক ও দেশের ৪৫ শতাংশ বেকারত্বের সমস্যা নিয়ে খোঁচা দিয়েছে তৃণমূল। চার, দুর্নীতি প্রসঙ্গেও মোদীকে পাল্টা আক্রমণ, প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিসভার অর্ধেক মন্ত্রী জামিনে মুক্ত রয়েছেন। পাঁচ, রাজ্যের সরকারকে স্বার্থপর বলে কটাক্ষ করেছিলেন মোদী। তার পাল্টা হিসেবে তৃণমূলের দাবি, মোদী সরকারের প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণে আবাস যোজনা ও ১০০ দিনের কাজে বকেয়া পায়নি রাজ্য।
আলিপুরদুয়ারে আসার আগে বুধবারই এক্স হ্যান্ডলে দুর্নীতি ইস্যুতে তৃণমূলকে আক্রমণ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারে বিজেপির জনসভা থেকে ফের একবার তৃণমূলকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে তোপ দেগেছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, মালদহ–মুর্শিদাবাদে যা হয়েছে তা বাংলার সরকারের নির্মম আচরণের উদারহণ। গরিব মা–বোনেদের সারা জীবনের পুঁজি পুড়িয়ে শেষ করে দেওয়া হয়েছে। তুষ্টিকরণের নামে গুণ্ডাগিরিকে মদত দেওয়া হয়েছে। শাসকদলের বিধায়ক, কাউন্সিলর বেছে বেছে লোকেদের বাড়িতে আক্রমণ করেছে। আর পুলিশ তা দাঁড়িয়ে দেখেছে। মোদীর প্রশ্ন, এভাবে সরকার চলবে? মোদীর এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মণিপুরে ২ বছর ধরে চলতে থাকা হিংসার প্রসঙ্গ তুলে ধরেছে তৃণমূল।
নরেন্দ্র মোদীকে পরিযায়ী পাখি বলে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। পাশাপাশি ফের একবার মনে করিয়ে দিয়েছে, রাজ্য কেন্দ্রের আর্থিক বঞ্চনার শিকার। বাংলার প্রাপ্য ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকা আটকে রাখা হয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার এই ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী একটা কথাও খরচ করেননি। আলিপুরদুয়ারে প্রধানমন্ত্রীর জনসংখ্যার পরও ফের একবার এ বিষয়ে কেন্দ্রকে নিশানা করেছে তৃণমূল। দলের নেতৃত্বের দাবি, বাংলা হল বিজেপির পুরনো টার্গেট। কিন্তু প্রতিবারই বাংলায় এসে তাঁদের ব্যর্থ হতে হয়। তাই এবার বিধানসভা নির্বাচনের প্রায় এক বছর আগে থেকেই ময়দানে নেমে পড়েছেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি শেষবার ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে আলিপুরদুয়ারে এসেছিলেন। ৯ বছর পর তিনি ফের একবার আলিপুরদুয়ারে এলেন শুধুমাত্র নির্বাচনকে পাখির চোখ করেই।