• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ নিয়ে জেলাশাসকদের বিশেষ নির্দেশ

একুশে জুলাই শহিদ দিবসের সভার পরদিনই ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ কর্মসূচির ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

একুশে জুলাই শহিদ দিবসের সভার পরদিনই ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ কর্মসূচির ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার সেই কর্মসূচি কার্যকর করতে কোমর বেঁধে নামছে রাজ্য প্রশাসন। আগামী ২ আগস্ট (শনিবার) থেকে রাজ্যজুড়ে শুরু হচ্ছে এই শিবির। চলবে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত। এই কর্মসূচিকে সফল করতে সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ জেলাশাসকদের নিয়ে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি শিবিরের রূপরেখা স্পষ্ট করেন এবং বাস্তবায়নের জন্য দেন একগুচ্ছ নির্দেশ।

নবান্ন সূত্রে খবর, প্রতিটি ক্যাম্পে উপস্থিত থাকতে হবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর সরকারি আধিকারিক এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। শিবির শুরুর আগে এলাকাভিত্তিক প্রচার চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষ উৎসাহের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিটি ক্যাম্পে জমা পড়া অভিযোগ ও সমস্যার অগ্রগতি নিয়মিত রাজ্য সদর দফতরে পাঠাতে হবে জেলাশাসকদের। সেই রিপোর্ট বিশ্লেষণ করেই নির্ধারিত হবে পরবর্তী দিকনির্দেশ।

Advertisement

মোট ৮০ হাজার বুথকে ভিত্তি করে রাজ্যজুড়ে গঠিত হবে প্রায় ২৭ হাজার ক্যাম্প। তিনটি বুথ নিয়ে হবে একটি করে ক্যাম্প, যেখানে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে সরাসরি সমস্যা শোনা হবে। এরপর আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিরা সেই এলাকা পরিদর্শন করে ফের শিবিরে এসে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প বাছাই করবেন। প্রত্যেক বুথের জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ হয়েছে ১০ লক্ষ টাকা করে। এই কর্মসূচির জন্য রাজ্য কোষাগার থেকে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা। এই বাজেট থেকেই নেওয়া হবে রাস্তাঘাট নির্মাণ, নলকূপ বসানো, গ্রামীণ সেতুর মেরামতি, স্কুল পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং পানীয় জলের ব্যবস্থার মতো ক্ষুদ্র অথচ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলি।

Advertisement

নবান্নের এক আধিকারিকের কথায়, ‘এই কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য প্রশাসনকে নীচুতলার মানুষের আরও কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া এবং তাঁদের দৈনন্দিন সমস্যার দ্রুত সমাধান করা।’ সময়মতো ক্যাম্প ও কাজের অগ্রগতি তদারকির জন্য একটি মনিটরিং কমিটি গঠনের কথাও ভাবা হচ্ছে।

সূত্রের খবর, প্রত্যেকটি শিবিরে উপস্থিত থাকবেন সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের প্রধান, পঞ্চায়েত সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, পঞ্চায়েত সমিতির সংশ্লিষ্ট সদস্য, সংশ্লিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক, জেলা পরিষদের সভাধিপতি এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জেলা পরিষদের সদস্য। জনপ্রতিনিধিরা ছাড়াও ব্লকের বিডিও, জয়েন্ট বিডিও, পঞ্চায়েত ও বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকদের উপস্থিত থেকে শিবির পরিচালনা করতে হবে।

প্রশাসনিক মহলের মতে, এটি একপ্রকার ‘বুথ স্তরের উন্নয়ন-শিবির’, যার মাধ্যমে নাগরিক ও প্রশাসনের সরাসরি সংযোগ গড়ে তোলা হবে। তবে রাজনৈতিক মহলে এই কর্মসূচি নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা। অনেকের মতে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এটি এক প্রকারে ‘বুথভিত্তিক জনসংযোগ’ বৃদ্ধির কৌশল। বিরোধীদের বক্তব্য, এটি আসলে নির্বাচনের আগেই বুথস্তরের রাজনীতিকে সক্রিয় করার উদ্যোগ। তবে সব বিতর্ককে পাশে রেখে প্রশাসনের স্পষ্ট বার্তা – এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য, মানুষের কাছে গিয়ে দ্রুত সমস্যার সমাধান এবং প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা।

Advertisement