গোয়া থেকে বিজেপিকে উৎখাতের ডাক বিকল্প তৃণমূলই: মমতা

‘এডিটর’স মিট’ থেকে জানিয়ে দিলেন, কীভাবে সাজানো হবে গোয়াকে, তা পরিকল্পনা করেই এগোনো হবে। তিনদিনের সফরে গোয়া গিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Written by SNS Panaji | December 14, 2021 3:11 pm

বিজেপির বিকল্প তৃণমূল-ই। অন্য কেউ ঘাসফুল শিবিরকে সমর্থন করতে চাইলে করতেই পারে। কিন্তু নেতৃত্ব থাকবে তৃণমূলের হাতেই। সোমবার গোয়ার কর্মিসভা থেকে এটা স্পষ্ট করে দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পাশাপাশি এদিনের ‘এডিটর’স মিট’ থেকে জানিয়ে দিলেন, কীভাবে সাজানো হবে গোয়াকে, তা পরিকল্পনা করেই এগোনো হবে। তিনদিনের সফরে গোয়া গিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সঙ্গে রয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং গোয়ার ভারপ্রাপ্ত নেতা-নেত্রীরা। এদিন সকালে গোয়া চলচ্চিত্র উৎসবে হাজির হন মমতা। সেখানে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক সারেন তিনি। তার পরই কর্মিসভায় যোগ দেন তৃণমূল সুপ্রিমো।

সেই কর্মিসভা থেকে মমতার বার্তা আমরা এখানে বিজেপি বিরোধী ভোট ভাগাভাগি করতে আসিনি। বিজেপি বিরোধী ভোট একসঙ্গে করতে এসেছি। সে রাজ্যের একাধিক দল তৃণমুলের সঙ্গে জোট বাঁধার প্রস্তাব দিয়েছে। আবার গোয়ায় তৃণমূলের সংগঠন বৃদ্ধিকে কটাক্ষ করেছে কংগ্রেস।

এদিন নাম না করেই কংগ্রেসকেও বার্তা দেন তৃণমূল নেত্রী। বলেন, আর কেউ বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করে না। লড়াইটা করছি আমর। অন্যরা কেউ আমাদের সমর্থন করতে চাইলে স্বাগত।

কিন্তু আপনাদের কথা শুনে বিজেপির সঙ্গে আধা আন্ডারস্ট্যান্ডিং করতে পারব না। তৃণমূলনেত্রী বুঝিয়ে দিলেন, বিজেপি বিরোধিতায় অন্য কোনও দল তৃণমূলকে সমর্থন করতেই পারে, কিন্তু নেতৃত্ব থাকবে ঘাসফুল শিবিরের হাতেই।

তৃণমূল নেত্রীর কথায় আমরা এখানে জিততে এসেছি। অন্য দল বিজেপির বিরোধী লড়াই করতে পারলে আমরা এখানে আসতাম না কিন্তু কেউ লড়াই করতে পারে না।

কংগ্রেসের উদ্দেশে তৃণমূল নেত্রীর বার্তা, আপনারা আমাদের রাজ্যের সব ভোটে লড়াই করছেন। তখন কোনও সমস্যা হয় না? আমরাও তাই ভাবলাম এখানে লড়াই করি। একই কথা শোনা গেল দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলাতেও।

বললেন, আমরা এখানে ২-৪টে আসন জিততে আসিনি। গোয়ায় সরকার গড়তে এসেছি। গোয়া সফরে গিয়ে আবারও চমক দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সোমবার তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েয়র হাত ধরে ঘাসফুল শিবিরে যোগ দিলেন সেখানকার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আলেমাও চার্চিল।

গোয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক সফরের নেপথ্যে দু’টি উদ্দেশ্য ছিল। একদিকে রাজনৈতিকভাবে গোয়ার মার্টিতে তৃণমূলের কলেবর বৃদ্ধি।

অন্যদিকে ভোট ব্যাঙ্কের দিকে তাকিয়ে জনসংযোগ বাড়ানো। সোমবার তৃণমূলের জনসভায় গিয়ে গোয়ার মানুষের সঙ্গে একাত্মতা বোঝাতে মমতা বললেন, আমি গোয়ার লোক, আপনাদের ভাষা জানি।

তবে এখানে মুখ্যমন্ত্রী বা ভোট ভাগ করতে আসিনি। এসেছি বিজেপিকে হটাতে। পশ্চিমবঙ্গে একুশের বিধানসভা ভোটের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘বাংলার মেয়ে’ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল সেই সময় বিজেপিকে বহিরাগত তকমা দেওয়া হয়েছিল।

গোয়ায় তৃণমূলের রাজনৈতিক সক্রিয়তা বাড়ার পর থেকেই শাসক বিজেপি এবং প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস ধারাবাহিকভাবে নিশানা করছে জোড়াফুল শিবিরকে। বিজেপি বর্তমানে দাবি করছে তৃণমূল গোয়ায় বহিরাগত।

অন্যদিকে কংগ্রেসের অভিযোগ, গোয়ায় বিরোধী ভোট বিভাজন করে বিজেপিকে সুবিধে পাইয়ে দিচ্ছে তৃণমূল। আসন্ন গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে জেতার লক্ষ্য নিয়েই প্রচার চালাচ্ছে তৃণমূল।

সোমবারও গোয়ার জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বাংলার মতো গোয়াতেও খেলা হবে। তৃণমূলনেত্রী সরাসরি জনতাকে প্রশ্ন করেন, আপনার কি মনে করেন, গোয়ায় আমরা জিতব?

সমবেত জনতা সদর্থক সাড়া বার্তা দেন, তৃণমূলের ওপর ভরসা রাখুন। তৃণমূল সবার জন্য কাজ করে। বিজেপির বিকল্প একমাত্র তৃণমূল। মমতা বলেন, গোয়া থেকে উন্নয়নের পরিকল্পনা করব। দল সাফল্য পেলে ভূমিপুত্রকেই মুখ্যমন্ত্রী করা হবে।

গোয়ায় মুখ্যমন্ত্রী হবেন আপনাদেরই লোক। তৃণমূল সুপ্রিমো এদিন গোয়াবাসীর উদ্দেশে ইতিমধ্যেই গোয়ার প্রাক্তন শাসক দল মহারাষ্ট্রবাদী গোমস্তক পার্টির সঙ্গে তৃণমুলের জোট হয়েছে।

অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আম আদমি পার্টির সঙ্গেও সমঝোতা হতে পারে বলে জল্পনা তৈরি হয়েছে। সোমবারই এনসিপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ জিলেন আলেমাও চার্চিল। এদিনে তাকেও স্বাগত জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সোমবার মমতা স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিলেন, আমরা লড়লে পুরোপুরি লড়ি। অর্ধেক লড়াইতে বিশ্বাস করি না। আসন্ন গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে লড়ব। কেউ চাইলে আমাদের সঙ্গে আসতে পারেন।

অনেকে বলছেন, এতদিন কংগ্রেসের ঘর ভাঙছিল তৃণমূল। এবার শরদ পাওয়ারের দলেও থাবা বসাল। যাঁর সঙ্গে সপ্তাহ দেড়েক আগেই মুম্বইতে বৈঠক করে এলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

গোয়ায় চার্চিলই ছিলেন একমাত্র এনসিপি বিধায়ক। তিনিও এদিন তৃণমূলে যোগ দিলেন। বেনোলিমের জনসভা থেকে গোয়ার বিজেপি সরকারকে উৎখাতের ডাক দিলেন তৃণমুলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

বাংলায় তৃণমূলের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরার পাশাপাশি সমালোচনা করলেন কংগ্রেসেরও। ২০১৭ সালে জনাদেশ অমান্য করে সরকার গড়েছিল বিজেপি। একক বৃহত্তম দল হওয়ার পরও সরকার গড়তে কীভাবে ব্যর্থ হয়েছিল কংগ্রেস।

গোয়া থেকে বিজেপিকে উৎখাতের ডাক দিয়ে অভিষেকের বার্তা ২০১৭ সালে পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকেছিল বিজেপি। ২০২২ সালে সামনের দরজা দিয়ে বের করে দিতে হবে।