• facebook
  • twitter
Tuesday, 15 July, 2025

সাড়ে চার হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতার হদিশ মিলল রাজস্থানে

সবচেয়ে আশ্চর্ষজনক বিষয় হল, এই খননে মিলেছে পাঁচটি ভিন্ন ঐতিহাসিক সময়ের স্তর। সেগুলি হল-- হরপ্পার আগের যুগ, মহাভারত যুগ, মৌর্য যুগ, কুষাণ যুগ, গুপ্ত যুগ।

সংগৃহীত চিত্র

সাড়ে চার হাজার বছরের পুরনো এক সভ্যতার হদিশ। গত ১০ জানুয়ারি থেকে রাজস্থানের ডিগ জেলার বাহাজ গ্রামে এই প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য শুরু হয়েছিল। সেই কাজ যতই এগোচ্ছে, ততই নতুন নতুন ঐতিহাসিক তথ্য উঠে আসছে। খননের সময় উদ্ধার হয়েছে ৮০০-র বেশি প্রত্নসম্পদ—প্রাচীন মৃৎপাত্র, ব্রাহ্মী লিপির আদিম সিলমোহর, তাম্র মুদ্রা, যজ্ঞ কুণ্ড, মৌর্য যুগের মূর্তি, শিব ও পার্বতীর মাটির মূর্তি, পশুর হাড় দিয়ে তৈরি সূচ, চিরুনি ও ছাঁচ।

প্রায় ২৩ মিটার গভীরে পৌঁছনো এই খনন রাজস্থানে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে গভীর প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে পাওয়া গিয়েছে মৌর্য যুগের ‘মাদার গডেস’-এর মূর্তির অংশ, গুপ্তযুগীয় স্থাপত্যে ব্যবহৃত কাদামাটির দেওয়াল ও স্তম্ভ এবং ধাতুবিদ্যার চুল্লি, যা তামা ও লোহার ব্যবহার নির্দেশ করে।

গুরুত্বপূর্ণ সেই প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলির মধ্যে রয়েছে, ২৩ মিটার গভীর একটি প্রাচীন নদীখাত বা প্যালিও চ্যানেল। প্রত্নতাত্ত্বিকরা যাকে ঋগ্বেদের পৌরাণিক সরস্বতী নদীর সঙ্গে যুক্ত করছেন। প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই নদীখাতটি সরস্বতী অববাহিকা সংস্কৃতির সঙ্গে বাহাজকে যুক্ত করেছিল। সেটি প্রাচীন মানব বসতির জন্ম দিতে সাহায্য করেছিল বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এই আবিষ্কার ভারতীয় উপমহাদেশে হাড়ের সরঞ্জাম ব্যবহারের অন্যতম প্রাচীন প্রমাণ হিসেবে গণ্য হয়। এমনকি, একটি মানব কঙ্কালও পাওয়া গিয়েছে, সেটির বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের জন্য ইজরায়েলে পাঠানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে এএসআই-এর খননকার্যের প্রধান পবন সরস্বত জানিয়েছেন, এই জলপ্রবাহ সরস্বতী উপত্যকা, ব্রজ ও মথুরা অঞ্চলের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী ছিল বলে প্রমাণ করে। এএসআই সংস্কৃতি মন্ত্রকে ইতিমধ্যেই প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিয়েছে। এই এলাকাকে ‘জাতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক সংরক্ষিত অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণা করারও সম্ভাবনা রয়েছে বলে সূত্রের খবর। এই আবিষ্কার শুধু রাজস্থান নয়, উত্তর ভারতের প্রাচীন ধর্ম, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। সরস্বতী নদীর সম্ভাব্য অস্তিত্ব যেমন গবেষণার দিশা বদলাতে পারে, তেমনই বাহাজের মাটি মহাভারত থেকে মৌর্য, কুষাণ ও গুপ্ত যুগের ধারাবাহিকতা তুলে ধরেছে।

সবচেয়ে আশ্চর্ষজনক বিষয় হল, এই খননে মিলেছে পাঁচটি ভিন্ন ঐতিহাসিক সময়ের স্তর। সেগুলি হল– হরপ্পার আগের যুগ, মহাভারত যুগ, মৌর্য যুগ, কুষাণ যুগ, গুপ্ত যুগ। প্রত্নতাত্ত্বিকরা দাবি করেছেন, মহাভারত যুগের স্তরে পাওয়া গিয়েছে আয়তাকার ও গোল যজ্ঞ কুণ্ড, পোড়ামাটির পাত্র ও হবনের চিহ্ন— যা সেই সময়ের পূজা-পদ্ধতির সাক্ষ্য বহন করে। এমনকি, পাওয়া গিয়েছে ১৫টিরও বেশি যজ্ঞ কুণ্ড, যা বেদ ও উত্তরবেদ যুগের ধর্মাচরণের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।