• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

ভারতীয় রেলওয়ের গতি বৃদ্ধির সহায়ক এবারের বাজেট

গত ১০ বছরে পুরো রেল ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে

প্রতীকী চিত্র

২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন নতুন ও উন্নত ভারতের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। ভারতীয় রেল দেশের লাইফলাইন, পরিবহনের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম। নব্য উন্নত ভারতে মধ্যবিত্ত শ্রেণিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং মধ্যবিত্তের প্রথম পছন্দের যাত্রাসঙ্গী হল ভারতীয় রেল। সেজন্য কোটি কোটি মানুষ তাকিয়ে থাকেন রেল ব্যবস্থার উন্নয়নের দিকে।

জম্মু থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত রেল যোগাযোগ এবং তামিলনাড়ুর পাম্বানে একটি নতুন প্রযুক্তির সেতু নির্মাণ করে ভারতীয় রেল দেশবাসীর যাতায়াতের সুবিধা করেছে। খুব শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই দুটি গৌরবময় প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এবারের বাজেটে যে অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে, তা ভারতীয় রেলকে আরও শক্তিশালী করতে চলেছে। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে ভারতীয় রেলের জন্য ₹২,৫২,২০০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে। একইভাবে, আগামী অর্থবর্ষের জন্য মোট মূলধনী ব্যয় (Capex) নির্ধারণ করা হয়েছে ₹২,৬৫,২০০ কোটি টাকা। এর থেকে স্পষ্ট যে, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রেল প্রকল্পগুলি খুবই গুরুত্তপূর্ণ বিষয়। উল্লেখ্য, ২০০৯-১৪ আর্থিক বছরে ভারতীয় রেলের মূলধন ছিল মাত্র ₹৪৫,৯০০ কোটি টাকা।

Advertisement

রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেছেন যে, ভারতীয় রেল যুব সম্প্রদায়ের আকাঙ্ক্ষা এবং স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে চলেছে। বন্দে ভারত, নমো ভারত ও অমৃত ভারত ট্রেনের প্রচলন এবং ১৩০০-রও বেশি অমৃত ভারত স্টেশনের পুনর্গঠনের মাধ্যমে ভারতীয় রেল এমন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চলেছে। গত ১০ বছরে পুরো রেল ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। সামগ্রিক মূলধন ব্যয়ের লক্ষ্য— নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, সুরক্ষা, বিদ্যুতায়ন, রোলিং স্টক এবং পরিকাঠামোর আধুনিকীকরণ। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, গুজরাট, মহারাষ্ট্র এবং বিহারের মতো রাজ্যগুলিতে গত ১০ বছরে সুইজারল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং বেলজিয়ামের মতো দেশগুলির মোট রেল নেটওয়ার্কের চেয়ে বেশি রেল লাইন পাতা হয়েছে।

Advertisement

নতুন রেল লাইন নির্মাণের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে ₹৩২,২৩৫.২৪ কোটি টাকার বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে। এই অর্থবর্ষে গেজ রূপান্তরের জন্য ৪,৫৫০ কোটি বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে এবং রোলিং স্টকের জন্য ৫৭,৬৯৩ কোটি টাকার বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে। এই পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে কয়েকশো নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস, নমো ভারত র‍্যাপিড রেল এবং অমৃত ভারত ট্রেনের ব্যবস্থা করা হবে। যে শহরগুলির মধ্যে বন্দে ভারত, নমো ভারত এবং অমৃত ভারত চালু হয়েছে, সেখানকার মানুষ সাদরে এই ট্রেনগুলি গ্রহণ করেছেন।

ব্যস্ত রুটগুলিতে দ্বিতীয় এবং চতুর্থ লাইন চালু করার জন্য ভারতীয় রেল বেশ কয়েকটি প্রকল্পও অনুমোদন করেছে। এই কাজের জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে ৩২,০০০ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে। এর ফলে ব্যস্ত রুটের লাইনের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রিয় গন্তব্যে আরও বেশি সংখ্যক ট্রেন পরিচালনা সম্ভব হবে।

ভারতীয় রেলে নিরাপত্তাকে সর্বাগ্রে বিবেচনা করা হয়। পরিবহন ব্যবস্থা নিরাপদ না হলে স্বাচ্ছন্দ্য ও উদ্ভাবনের কোনো গুরুত্ব থাকে না। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে রেল নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রকল্পের জন্য ১,১৬,৫১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে রোড ওভার ব্রিজ (আরওবি) / রোড আন্ডার ব্রিজ (আর ইউ বি) নির্মাণের জন্য ৭,০০০ কোটি টাকা এবং রেললাইন পুনর্নবীকরণের জন্য ২২,৮০০ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে। নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে বাজেটে ১৭,৫০০ নন-এসি জেনারেল কোচ তৈরির সংস্থান রাখা হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ বহুল উপকৃত হবেন।

আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ভারতীয় রেলওয়ে প্রচলিত কোচগুলিকে অত্যাধুনিক এলএইচবি কোচ দিয়ে প্রতিস্থাপনের পরিকল্পনা করেছে। এর ফলে যাত্রা আরও আরামদায়ক হবে। এলএইচবি কোচগুলিতে উন্নত বৈশিষ্ট্য থাকায় সুরক্ষা আরও বৃদ্ধি পাবে।

বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের বিপুল জনপ্রিয়তা ভারতীয় রেলকে বন্দে স্লিপার ট্রেন তৈরি করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। তৈরি করা হয়েছে প্রথম বন্দে ভারত স্লিপার রেক এবং বর্তমানে এটি পরীক্ষাধীন রয়েছে। ট্রায়ালের সাফল্যের পর এই ট্রেন যাত্রী সেবায় ভারতীয় রেলওয়ে নেটওয়ার্কের অংশ হয়ে উঠবে। এরপর ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে মোট ৫০টি বন্দে ভারত স্লিপার ট্রেন তৈরি করা হবে। ভারতীয় রেল ১০০টি উন্নত বৈশিষ্ট্যযুক্ত নন-এসি অমৃত ভারত ট্রেন তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন।

ভারতীয় রেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য কবচ সিস্টেমকে আরও উন্নত করা হয়েছে। এই সংঘর্ষ বিরোধী ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য, ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত ১০,০০০ লোকোমোটিভ এবং ৩,০০০ কিলোমিটার রেলপথকে কবচ দিয়ে সুরক্ষিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ভারতীয় রেল শুধুমাত্র যাত্রী পরিবহণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমই নয়, পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রেও সমান গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে পণ্য পরিবহনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১,৭০০ মিলিয়ন টন, যা ২০২৪-২৫ এর তুলনায় ৬৫ মিলিয়ন টন (৪%) বেশি। ভারতীয় রেল বিভিন্ন পণ্যের পরিবহণের প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে আধুনিক ওয়াগন তৈরির দিকেও নজর দিয়েছে।

Advertisement