ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে বাংলা ভাষা বলার অভিযোগে বাংলার শ্রমিকদের উপর অত্যাচারের ঘটনা ঘটেই চলেছে। দিল্লি, গুজরাত, আসাম ও ওড়িশা সহ ভিনরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচারের কথা নতুন নয়। বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচারের ঘটনার প্রতিবাদে বার বার সরব হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। এবার ওড়িশায় মুর্শিদাবাদের ৪ পরিযায়ী শ্রমিককে অত্যাচারের ঘটনায় ওড়িশা সরকারের কাছ থেকে রিপোর্ট চাইল ওড়িশা হাই কোর্ট। বিজেপি শাসিত ওড়িশায় মুর্শিদাবাদের সাগরপাড়ার ৪ জন বাঙালি শ্রমিককে পুলিশের হেনস্থার ঘটনায় ওড়িশা সরকারের কাছে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ওড়িশা হাই কোর্ট। শুক্রবার এই ৪ শ্রমিককে পুলিশি হেনস্থার ঘটনায় করা মামলার শুনানিতে আদালতের তরফে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওড়িশা উচ্চ আদালত ১৪ দিনের মধ্যে সে রাজ্যের সরকারকে ঘটনার দিনের বিস্তারিত বর্ণনা লিখিত আকারে দিতে নির্দেশ দিয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় গত ২৭ নভেম্বর। এদিন ওড়িশার নয়াগড় জেলায় কাজ করতে যাওয়া মুর্শিদাবাদের এক শ্রমিকের বাড়িতে হানা দেয় ওদাগাঁও থানার পুলিশ। অভিযোগ, ঘরে ঢুকেই ওই ব্যক্তিকে একাধিক প্রশ্ন করতে থাকে পুলিশ। এরপরে বাংলায় কথা বলার জন্য বাংলাদেশি বলেও দাগিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি ওই শ্রমিককে মারধর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদের ওই শ্রমিক ওড়িশায় ফেরিওয়ালার কাজ করতেন। ওই ফেরিওয়ালার সঙ্গে থাকতেন আরও তিনজন বাঙালি শ্রমিক। পুলিশি হেনস্থার পরের দিন সন্ধ্যায় আবার ওই ফেরিওয়ালা ও তাঁর তিন সঙ্গীকে থানায় তলব করা হয়। সেখানেও নানাভাবে তাঁদের উপর হেনস্থা করা হয়। এরপরেই থানা থেকে ছাড়া পেয়ে ওই ফেরিওয়ালা সহ চার শ্রমিক মুর্শিদাবাদে ফিরে আসেন।
Advertisement
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই চরম উত্তেজনামূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ঘটনার তীব্র নিন্দা করে সমাজমাধ্যমে ওড়িশা পুলিশ আধিকারিককে উদ্ধৃত করেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। সেইসময় তিনি আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন। এরপরেই ওড়িশা হাই কোর্টে ঘটনার বিরুদ্ধে মামলা করেন আব্দুল সালাম শেখ নামের এক ব্যক্তি। গত ৯ ডিসেম্বর অর্থাৎ, মঙ্গলবার মামলাটি আদালতে ওঠে। এরপরেই ওড়িশা হাই কোর্ট ওড়িশা সরকারের কাছ থেকে ওই দিন কী ঘটেছে, তার বিস্তারিত লিখিত বিবরণ জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে। ওড়িশা হাই কোর্ট আগামী ১৪ দিনের মধ্যে ওড়িশা সরকারকে এই হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। আগামী বছরের ১৩ জানুয়ারিতে মামলার পরবর্তী শুনানি হবে বলে জানা গিয়েছে।
Advertisement
প্রসঙ্গত, গত ২৩ নভেম্বর বৈধ পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশি বলে লালগোলা এবং রঘুনাথগঞ্জের ১৭ জন শ্রমিককে ওড়িশার জেলে আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে। রাতভোর তাঁদের আটকে রেখে থানায় অত্যাচার করার অভিযোগ ওঠে।
Advertisement



