• facebook
  • twitter
Monday, 28 July, 2025

মোদি জমানায় বেড়েছে দেশে গরিবের সংখ্যা, স্বীকার করলেন গড়করি

রমেশ বলেন, দারিদ্র্য রেখার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেখায় যে, জনসংখ্যার একটি বড় অংশ আন্তর্জাতিক চরম দারিদ্র্য রেখার সামান্য উপরে রয়েছে।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

মোদী জমানা সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করে বিতর্ক বাড়িয়েছেন বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি নীতিন গড়করি। মোদী সরকারের এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানিয়েছেন, দেশে গরিবের সংখ্যা বাড়ছে। দেশের মুষ্টিমেয় ব্যক্তির হাতে ধনসম্পদ কুক্ষিগত হয়ে যাচ্ছে। এজন্য তিনি সম্পদের বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োজন রয়েছে বলে দাবি করেছেন।

শনিবার নাগপুরে একটি অনুষ্ঠানে কৃষি, উৎপাদন, কর এবং পরিকাঠামো উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মতো একাধিক বিষয়ে মত প্রকাশ করার সময় গড়করি এই চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেন। তিনি স্বামী বিবেকানন্দকে উদ্ধৃত করে বলেছেন, ‘খালি পেটে ধর্ম হয় না।’ এরপরই বলেন, ‘ধীরে ধীরে গরিব মানুষের সংখ্যা বাড়ছে এবং সম্পদ কিছু ধনী ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। এটা হওয়া উচিত নয়। আমরা এমন একটি অর্থনৈতিক বিকল্পের দিকে তাকিয়ে আছি, যা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং অর্থনীতির গতি বাড়াবে। সম্পদের বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োজন রয়েছে এবং সেই দিকে অনেক পরিবর্তন ঘটাতে হবে।’

এদিন গড়করি তাঁর মন্তব্যের সময় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিমা রাও এবং মনমোহন সিংয়ের উদার অর্থনীতি চালুর জন্য প্রশংসা করেন। তিনি জিডিপি-খাতভিত্তিক অবদানের ভারসাম্যহীনতার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘জিডিপির অবদান উৎপাদন খাতে ২২-২৪ শতাংশ এবং পরিষেবা খাতে ৫২-৫৪ শতাংশ। অন্যদিকে, কৃষিক্ষেত্রে তার অবদান গ্রামীণ জনসংখ্যার ৬৫-৭০ শতাংশকে সম্পৃক্ত করা সত্ত্বেও মাত্র ১২ শতাংশ। টোল বুথের মাধ্যমে আমরা প্রায় ৫৫,০০০ কোটি টাকা আয় করি। আগামী দু’বছরে তা ১.৪০ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছবে। যদি আগামী ১৫ বছরের জন্য এটি বজায় রাখতে পারি, তা হলে আয় হবে ১২ লক্ষ কোটি টাকা।’

অন্যদিকে, বিশ্ব ব্যাঙ্কের একটি সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে যে, দারিদ্র্য এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য ভারতে যেভাবে বাড়ছে, তা গভীর উদ্বেগের। এই রিপোর্টকে হাতিয়ার করে রবিবার কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র আক্রমণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আর্জি জানানো হয়েছে, যাতে জিএসটি ব্যবস্থা সংস্কার করা হয় এবং কর্পোরেটদের প্রতি বিশেষ সুবিধা দেওয়া বন্ধ করা হয়। ২০২৫-এর এপ্রিলে প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাঙ্কের ওই রিপোর্টটি তুলে ধরে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক (যোগাযোগ) জয়রাম রমেশ বলেন, ‘গত তিনমাস হল এটি প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু মোদী সরকারের চিয়ার লিডাররা সেই তথ্য ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে এমনভাবে নিজেদের ঢাক পেটাতে শুরু করেছে, যেন ভারত বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের সঙ্গে সমান্তরাল পর্যায়ে রয়েছে। স্পষ্টভাবে এই তথ্য তারা প্রকাশ করছে না।’

রমেশ বলেন, ‘গত ২৭ এপ্রিল বিশ্বব্যাঙ্কের তুলে ধরা এই তথ্যগুলি খুবই উদ্বে গজনক এবং প্রাসঙ্গিক। এই প্রতিবেদনের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত বিষয়গুলিকে খুবই গুরুত্ব সহকারে মোকাবিলা করতে হবে।’ তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে যে, ভারতে মজুরি বৈষম্য বেশি, ২০২৩-২৪ সালে আয়ের নিরিখে দেশের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ মানুষের গড় আয় সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ মানুষের আয়ের তুলনায় ১৩ গুণ বেশি।’

রমেশ রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে আরও বলেন,’নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের দেশ হিসেবে, ভারতে দারিদ্র্য পরিমাপের উপযুক্ত হার হল দৈনিক ৩.৬৫ মার্কিন ডলার। এই পরিমাপ অনুসারে, ২০২২ সালে ভারতের দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি, ২৮.১ শতাংশ। তাই রিপোর্টে স্পষ্ট, দেশে দারিদ্র্য উল্লেখযোগ্যভাবে উচ্চ হারে রয়ে গিয়েছে।’

রমেশ বলেন, দারিদ্র্য রেখার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেখায় যে, জনসংখ্যার একটি বড় অংশ আন্তর্জাতিক চরম দারিদ্র্য রেখার সামান্য উপরে রয়েছে। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, ‘মনরেগা এবং জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন, ২০১৩-এর মতো সমাজকল্যাণ ব্যবস্থাগুলি পরিত্যাগ করা যাবে না। বরং এগুলিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে, যাতে তারা এই অংশকে নেতিবাচক প্রভাব থেকে রক্ষা করে।’

রমেশ বলেন, মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি আইন (মনরেগা) এর অধীনে মজুরি বৃদ্ধি, দশকব্যাপী জনসংখ্যা আদমশুমারি (এখন ২০২৭ সালে সম্পন্ন হওয়ার কথা) পরিচালনা এবং ১০ কোটি অতিরিক্ত মানুষকে এনএফএসএ-এর আওতায় আনার জন্য কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের দাবিগুলি এই সংখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

রাজ্যসভার সাংসদ জয়রাম রমেশ বলেন, দারিদ্র্য সম্পর্কে কেন্দ্র সরকারের বিভ্রান্তিকর এবং অস্বচ্ছ নীতি নির্ধারণের ফলে ভারতের ব্যাপক দারিদ্র্য ও আর্থিক বৈষম্য ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ইউপিএ আমলে ২০১৪ সালে রঙ্গরাজন কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর থেকে, মোদী সরকার দেশের দারিদ্র্য রেখা নির্ধারণে আরো নতুন কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তিনি দাবি করেন, কেন্দ্রীয় সরকারকে দারিদ্র্যদূরীকরণে ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি বলেন, ‘জিএসটির প্রতিকূল প্রভাব কমাতে কর সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। অবসান ঘটাতে হবে কর্পোরেট সংস্থার প্রতি একপেশে পক্ষপাতিত্ব। সেই সঙ্গে সাধারণ পরিবারের জন্য আয় সহায়তা এবং পারিবারিক সঞ্চয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।’