কাঁটাতার-কংক্রিট-ব্যারিকেড ভেঙে কৃষকদের মহামিছিল, মিছিল রুখতে ড্রোন থেকে ছোড়া হল কাঁদানে গ্যাসের শেল  

Written by SNS February 13, 2024 6:48 pm
দিল্লি, ১৩ ফেব্রুয়ারি –  কৃষকদের ‘দিল্লি চলো’ অভিযান শুরু হয়েছে মঙ্গলবার। দীর্ঘ দিন ধরে তাঁরা যাতে আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারেন সেজন্য আগাম  প্রস্তুতি নিয়েই রাজধানীর দিকে অগ্রসর হন হাজার হাজার কৃষক। রাজধানীর দিকে এগোতেই পাঞ্জাব ও হরিয়ানার শম্ভু সীমানায় কৃষকদের প্রতিবাদ মিছিল লক্ষ্য করে ড্রোন থেকে ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল । জানা যাচ্ছে, মিছিলের মধ্যে শেলগুলি আছড়ে পড়ার পর গোটা এলাকা কিছুক্ষণের জন্য ধোঁয়ায় ঢেকে যায়।  সরকারি সূত্রে খবর, শম্ভু সীমানার কাছে কয়েকজন কৃষককে আটক করা হয়েছে।  
 
মঙ্গলবার সকাল ১০তা নাগাদ ফতেহগড় সাহিব থেকে দিল্লির দিকে যাত্রা শুরু করে কৃষকদের মহামিছিল। বহু কৃষক তাঁদের ট্র্যাক্টর নিয়ে দিল্লি চলো যাত্রার সূচনা করেন।  কৃষক সংগঠনগুলি তাদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে আগেই এই প্রতিবাদ মিছিলের হুমকি দিয়েছিল। পাল্টা মিছিল রুখতে তৎপর ছিল পুলিশ-প্রশাসনও। জারি করা হয় ১৪৪ ধারা।  ব্যারিকেড, কাঁটাতার, কংক্রিটের স্ল্যাব দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় পাঞ্জাব-হরিয়ানা সীমানা। আম্বালা, জিন্দ, ফতেহবাদ, কুরুক্ষেত্র, সিরসায় বিভিন্ন এলাকা কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়। 
 
মিছিল রুখতে সিঙ্ঘু, টিকরি ও গাজিপুর সীমানা বন্ধ করে দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশবাহিনী। এক মাসের জন্য জমায়েতও নিষিদ্ধ হয়েছে দিল্লিতে। একইভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে হরিয়ানার সীমানাও। হরিয়ানা সীমান্তে বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়। মোতায়েন রয়েছে জলকামান। বিক্ষোভকারীরা যাতে অন্যান্য জেলা থেকে হরিয়ানায় ঢুকতে না পারেন, সেই উদ্দেশ্যে রাজ্যের সীমানায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অতিরিক্ত ৫০ কোম্পানি পুলিশ মোতায়েন করেছে সে রাজ্যের সরকার। হরিয়ানার সরকার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার কথা জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে।
 
 এদিকে মিছিল আটকাতে যে বন্দোবস্ত করা হয় , তার প্রভাব পড়ে যান চলাচলের উপর। কয়েক কিলোমিটার জুড়ে দাঁড়িয়ে যায় গাড়ির লম্বা লাইন। দিল্লির সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের গাজ়িয়াবাদ এবং নয়ডার সংযোগকারী গাজ়িপুর এবং চিলা সীমানার মূল প্রবেশপথগুলি পুরোপুরি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় । ফলে পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশ থেকে দিল্লিগামী গাড়িগুলি ঘুরপথে যাচ্ছে। আর তার জেরেই হাইওয়েগুলিতে কয়েক কিলোমিটার ধরে গাড়ির দীর্ঘ জটের সৃষ্টি হয়েছে। চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
 
দুপুর নাগাদ, পাঞ্জাব থেকে পাঞ্জাব-হরিয়ানার শম্ভু সীমানায় মিছিল পৌঁছতেই কৃষকদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়তে থাকে পুলিশ। এমনকি ড্রোন থেকেও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। জানা গিয়েছে, কৃষকদের তরফে কোনও উসকানি ছাড়াই অন্তত দু’ডজন শেল ছোড়া হয় প্রতিবাদ মিছিল লক্ষ্য করে। সূত্রের খবর, আম্বালায় শম্ভু সীমানার কাছে লোহার ব্যারিকেড দেওয়া ছিল। মিছিলের কয়েকজন তরুণ সমর্থক ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করে।  একটি ব্যারিকেড ভেঙে গেলে সেটি নদীর সেতু থেকে ফেলার চেষ্টা করা হয়।  সেই সময় পুলিশ তাঁদের আটকাতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ব্যবহার করে।  
 
সূত্রের দাবি, শুধু পাঞ্জাব থেকেই ১৫০০টি ট্র্যাক্টর, ৫০০ গাড়ি নিয়ে দিল্লি অভিযানে রওনা হন কৃষকেরা। ওই গাড়িতেই প্রায় ছ’মাসের খাবার নিয়েছেন তাঁরা। পাঞ্জাবের গুরদাসপুরের কৃষক হরভজন সিংহ এক সংবাদমাধ্যমে বলেন, “সুচ থেকে হাতুড়ি, সব কিছু ট্রলিতে করে নিয়ে যাচ্ছি আমরা। ব্যারিকেড ভাঙার যন্ত্রও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমরা ছ’মাসের জন্য খাবার নিয়ে রওনা দিয়েছি। আমাদের সঙ্গে প্রচুর জ্বালানিও রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “এবার যত দিন না পর্যন্ত আমাদের দাবিদাওয়া মানা হবে, তত দিন আন্দোলন থেকে আমরা পিছু হটব না।” ফলে স্বাভাবিক ভাবেই চর্চা চলছে, তা হলে কি আরও একটি দীর্ঘ দিনব্যাপী কৃষক আন্দোলনেই সম্মুখীন হতে চলেছে  দিল্লি-সহ গোটা দেশ ? ২০২০ সালে দিল্লির সীমানায় যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন কৃষকেরা, সেই আন্দোলন ১৩ মাস ধরে চলেছিল।
 
কৃষকদের এই ‘দিল্লি চলো’ অভিযান রুখতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রচেষ্টা চালিয়েছে কেন্দ্র। দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কৃষক নেতাদের সঙ্গে দেখা করে বৈঠক করেন। কিন্তু সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে কোন রফাসূত্র মেলেনি। কৃষকদের মূল তিনটি দাবি— ফসলের ন্যায্য সহায়ক মূল্য, কৃষিঋণ মকুব এবং স্বামীনাথন কমিশনের প্রস্তাবের রূপায়ণ নিয়ে দু’পক্ষ কোনও সমঝোতায় আসতে পারেনি।
 
কৃষকদের মিছিল নিয়ে সতর্ক দিল্লিও। কৃষকদের কর্মসূচির আগে দিল্লিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে । ১২ মার্চ পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি থাকবে রাজধানীতে। সীমানা অবরুদ্ধ করতে ব্যারিকেড বসানো হয়েছে জায়গায় জায়গায়। কংক্রিটের দেওয়াল তুলে কাঁটাতারের বেড়া এবং পেরেকের পাটাতন বসানো হয়েছে। মোতায়েন রয়েছে বিশাল পুলিশবাহিনী। ড্রোনের মাধ্যমেও চলছে নজরদারি। কৃষকদের দিল্লিতে ঢুকতে বাধা দেওয়ার ব্যবস্থার জন্য কেন্দ্রের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে বিরোধী দল এবং কৃষক সংগঠনগুলি।