• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

আর জি করের কাণ্ডে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা সুপ্রিম কোর্টের, মঙ্গলবার শুনানি

মামলা শুনবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের তিন বিচারপতির বেঞ্চ।

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণের মামলার স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করল সুপ্রিম কোর্ট। ২০ অগস্ট, মঙ্গলবার এই মামলার শুনানি রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হবে।

সূত্রের খবর, আর জি করের পুরো বিষয়টির উপর নজর রাখতেই সরাসরি মামলা হাতে নিয়েছে দেশের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। ওই ঘটনায় তদন্তের গতিপ্রকৃতি, হাসপাতাল ও রাজ্যের ভূমিকা খতিয়ে দেখবে শীর্ষ আদালত। কর্মস্থলে মহিলাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও শুনানি করতে পারে সর্বোচ্চ আদালত।

Advertisement

৯ অগস্ট কলকাতার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সেমিনার রুমে ৩১ বছর বয়সী এক ট্রেনি ডাক্তারকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। নারকীয় ওই হত্যাকাণ্ডের পর থেকে বিচারের দাবিতে সারাদেশে চিকিৎসকরা ধর্মঘট করছেন। কলকাতা হাইকোর্টে নির্দেশে বর্তমানে মামলার তদন্ত করছে সিবিআই।

Advertisement

আর জি কর হাসপাতাল থেকে শুরু করে সল্টলেকের পুলিশ ক্যাম্প, কলকাতার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে চষে বেড়াচ্ছে সিবিআইয়ের একাধিক টিম। আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে টানা তৃতীয় দিনে সিবিআই তলব করেছে এবং তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

গত ৯ অগস্ট সকাল ৯টা নাগাদ আর জি কর হাসপাতালের সেমিনার হলে এক শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের দেহ পাওয়া যায়। এর পর বেলা ১০টা নাগাদ টালা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। নিহত চিকিৎসকের শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে হাসপাতালের আধিকারিকরা শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলে আখ্যা দিলেও পরে ময়নাতদন্ত উঠে আসে তাঁকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছে।

কলকাতা পুলিশ মামলার তদন্ত শুরু করে। হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ এবং ভাঙা হেডফোনের মাধ্যমে তারা অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের সন্ধান পায়। সঞ্জয় কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার। ধর্ষণ-খুনের সঙ্গে যোগসূত্র মিলতেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে অভিযোগ স্বীকার করেছে।

আর জি করের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার প্রেক্ষিতে একাধিক মামলা দায়ের হয় কলকাতা হাইকোর্টে। কলকাতা হাইকোর্ট মামলার তদন্তের নির্দেশ দেয় সিবিআইকে। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে এই মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। এই মামলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০ জনকে জেরা করেছে সিবিআই। কলেজের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে টানা তৃতীয় দিনে জেরা করছে সিবিআই।

সিবিআই টিম আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জরুরি ওয়ার্ডের ভিতরে এবং বাইরে থ্রিডি লেজার ম্যাপিং তদন্ত করছে। থ্রিডি লেজার স্ক্যানারের সাহায্যে হাসপাতালে ডিজিটাল ম্যাপিং করা হচ্ছে। এদিকে মৃত ডাক্তারের বিচারের দাবিতে সারাদেশে চিকিৎসকরা ধর্মঘট করছেন। কলকাতা-সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ চলছে।

এদিকে সিবিআই তদন্ত চলাকালীনই আবার আর জি করে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ‘রাত দখল’ কর্মসূচি চলাকালীন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে হামলা চালায় একদল দুষ্কৃতী। গত বুধবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ আর জি করের লাগোয়া এলাকায় ‘রাত দখল’ কর্মসূচির একটি মিছিল চলছিল।

অভিযোগ, সেই সময় আর জি করের জরুরি বিভাগের বাইরে তাণ্ডব চালায় একদল দুষ্কৃতী। গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর চালানো হয়। ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট), সিসিইউ (ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট), ওষুধের স্টোর রুমে ভাঙচুর চলানো হয়।

আর জি করের পুলিশ ফাঁড়ি এবং আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের মঞ্চেও ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। ঘটনাস্থলে কিছু পুলিশকর্মী উপস্থিত থাকলেও প্রাথমিকভাবে তারা কিছু করে উঠতে পারেননি। পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। নামানো হয় র‌্যাফও।

এদিকে আর জি কর মেডিক্যালে হামলার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত গ্রেফতারির সংখ্যা ৩২। ‘কল ডাম্পিং প্রযুক্তির মাধ্যমে ১ হাজার জন শনাক্ত করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, হামলার দিন আর জি কর মেডিক্যালের গেটের সামনে তাঁরা হাজির ছিলেন। তাঁদের সবাইকে নোটিস পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে লালবাজার, খবর সূত্রের।

সময় যত গড়াচ্ছে আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলনের ঝাঁজও যেন ততই বাড়ছে। একটানা কর্মবিরতিতে শামিল জুনিয়র চিকিৎসকরা। রাজ্যের অধিকাংশ হাসপাতালে বহির্বিভাগে ব্যাহত চিকিৎসা পরিষেবা। দিল্লি সহ অন্যান্য রাজ্যেও আছড়ে পড়েছে প্রতিবাদের ঢেউ। শনিবার আইএমএ-র ডাকে দেশজুড়ে কর্মবিরতিতে অংশ নেন চিকিৎসক, চিকিৎসা কর্মীরা। পাকিস্তান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনও তরুণী চিকিৎসকের হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করেছে।

Advertisement