• facebook
  • twitter
Tuesday, 19 August, 2025

ওয়াকফ আইন নিয়ে প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের, স্থগিতাদেশ নয়

পরবর্তী শুনানি ৫ মে

ফাইল চিত্র

বৃহস্পতিবারও সুপ্রিম কোর্টে স্বস্তি পেলেন না ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা মামলাকারীরা। এদিনও এই আইনের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল না সুপ্রিম কোর্ট। মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হল ৫ মে, দুপুর দু’টোয়। পরবর্তী শুনানির দিন ধার্যের পাশাপাশি প্রধান বিচারপতির ইঙ্গিত ওই দিনে প্রয়োজনে কোনও নির্দেশ দেওয়া হলেও হতে পারে।

এদিনের শুনানিতে কেন্দ্রের কাছে শীর্ষ আদালতের প্রশ্ন, ওয়াকফ কাউন্সিলে যে অ-মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে, সেই একই পদ্ধতিতে কোনও হিন্দু চ্যারিটিতে কি মুসলিমদের অংশ হতে দেবে তারা?

দ্বিতীয়দিনের শুনানি পর্বে কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবী সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, কেন্দ্রের কাছে প্রচুর তথ্য জমা পড়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, বহু জমি ওয়াকফ জমি হিসাবে নথিভুক্ত রয়েছে। নিজেদের সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বহু মানুষের মনে। ওয়াকফ বা ওয়াকফ ব্যবহারকারী (ওয়াকফ-বাই-ইউজার) হিসেবে নিবন্ধিত রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য সময় চায় কেন্দ্র। তার ভিত্তিতে কেন্দ্রকে এক সপ্তাহ সময় দিয়েছে শীর্ষ আদালত।

নতুন ওয়াকফ আইনের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এদিন বিচারপতি বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছি, এই আইনে কিছু ভাল দিক অবশ্যই রয়েছে। এই পুরোপুরি স্থগিত করে দেওয়ার কথা কখনওই বলা হয়নি। কিন্তু আমরা চাই না, এখন যা পরিস্থিতি, তা বদলে যাক। পরিস্থিতি যাতে না বদলায়, সেটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।’

ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বৈধতা নিয়ে গুচ্ছ আবেদনের শুনানিতে কোনও অন্তর্বর্তী রায় বা নির্দেশ বুধবারেও দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার রায় স্থগিত রেখে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় শুনানির দিন ধার্য করে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনকে নিয়ে গঠিত তিন সদস্যের বেঞ্চ। তবে দ্বিতীয়বার শুনানির দিন ধার্য করলেও ওয়াকফ আইন নিয়ে যে হিংসাত্মক ঘটনা দেশ জুড়ে ঘটছে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল আদালত। প্রধান বিচারপতি জানিয়েছিলেন, ‘ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় শুরু হওয়া হিংসাত্মক ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। সেই ইস্যুটিও আদালতের নজরে এসেছে এবং আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’

এদিন শুনানি শুরু হতেই আইনজীবী তুষার মেহতার সওয়ালের জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের সামনে তিনটি পথ। এক, আমরা পিটিশন শুনব। দুই, হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেব। তিন, হাইকোর্টে পড়ে থাকা পিটিশনও গ্রহণ করে আমরাই সিদ্ধান্ত নেব।’ সুপ্রিম কোর্ট তিনটি অন্তর্বর্তী নির্দেশ নিয়ে আলোচনাও করে। সেগুলি হল— এক) কোর্ট যে সম্পত্তিকে ওয়াকফ বলে ঘোষণা করবে, তাকে ‘ওয়াকফ নয়’ বলে ধরা যাবে না। দুই) যে ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ রয়েছে, তা নিয়ে জেলাশাসক প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া চালাতে পারবেন। কিন্তু সেই বিধান কার্যকর করা যাবে না। তিন) ওয়াকফ বোর্ড এবং ওয়াকফ কাউন্সিলের সদস্যদের মুসলিম হতেই হবে। শুধু যাঁরা পদাধিকার বলে ওয়াকফে যোগ দেবেন, তাঁরা ভিন্ন‌ধর্মের হতে পারেন।

উল্লেখ্য, ২ এপ্রিল গভীর রাতে লোকসভায় পাশ হয়েছিল ওয়াকফ সংশোধনী বিল। ৩ এপ্রিল মধ্যরাতে রাজ্যসভায় পাশ হয়েছে। ৫ এপ্রিল রাতে তাতে স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। তারপর তা আনুষ্ঠানিকভাবে আইনে পরিণত হয়।
এরপরই এই আইনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিরোধে নাম কংগ্রেস, এনডিএ থেকে শুরু করে একাধিক বিরোধী দল। নয়া ওয়াকফ আইনের বিরোধ করে মামলা করা হয় সুপ্রিম কোর্টে। কেন্দ্রীয় সরকারের আনা ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে ৭২টি পিটিশন জমা পড়েছিল। শুধুমাত্র ইসলামিক সংগঠন নয় দেশ জুড়ে একাধিক রাজনৈতিক দলের তরফেও মামলা দায়ের হয়েছে।

তৃণমূল, সিপিআই, সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি, জেডিইউ, ইন্ডিয়ান মুসলিম লিগ-সহ একাধিক দল রয়েছে এই পিটিশনকারীদের মধ্যে। মামলাকারীদের মধ্যে রয়েছেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য তথা রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র, বিধায়ক হুমায়ুন কবীর এবং আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। মামলা করেছে আরজেডিও। সেই মামলাগুলির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্য থাকলে মুসলিমদের ধর্মপালনের স্বাধীনতা খর্ব হতে পারে।

মামলাকারীদের তরফে আইনজীবীরা হলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট কপিল সিব্বল, রাজীব দাভেন, অভিষেক মনু সিংভি প্রমুখ। কেন্দ্রের তরফে রয়েছেন সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা।

এই মামলার শুনানি চলাকালীন সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রের কাছ জানতে চায়, আপনারা কি হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, মন্দির কমিটিতে মুসলিমদের অংশ নিতে দেবেন? এছাড়া, প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না বুধবার তিনটি অন্তর্বর্তী নির্দেশের প্রসঙ্গ তোলেন। তার প্রথমটি হল, আদালত ঘোষিত ওয়াকফ সম্পত্তি অবিধিবদ্ধ বা ওয়াকফের নয় বলা যাবে না, তা সে ব্যবহারকারীর হোক বা না হোক। দ্বিতীয়টি হল, কালেক্টর বা জেলাশাসক ওয়াকফ নিয়ে বিবাদ নিষ্পত্তি করতে পারলেও সেটা এখনই হচ্ছে না। বোর্ড ও কাউন্সিল যাই হোক সেখানে এক্স অফিসিও সদস্য নিয়োগ করা গেলেও অন্য সদস্যদের মুসলিম হতে হবে।