• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

খনিজ সম্পদে বকেয়া রয়্যালটি আদায়ে অংশীদার রাজ্যও

রয়্যালটিকে কর বা ট্যাক্স বলে গন্য করা যাবে না

অবশেষে সুপ্রিম আদেশে ভরতে চলেছে রাজ্যের ঘর। খনিজ সম্পদ রয়্যালটি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রের একতরফা আয়ের রাস্তা বন্ধ করে রাজ্যগুলিকে আয়ের নতুন পথ দেখাল। কয়লা, লৌহ আকরিক-সহ যাবতীয় খনিজ সম্পদ থেকে রয়্যালটি বাবদ আয় মামলায় বুধবার তার দ্বিতীয় রায় ঘোষণা করেছে শীর্ষ আদালত। তাতেই প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন নয় সদস্যের বেঞ্চ বলেছে, রাজ্যগুলি ২০০৫-এর ১ জুলাই থেকে এই খাতে বকেয়াও আদায় করতে পারবে। ফলে এই খাতে রাজ্যগুলির সামনে বিপুল অর্থ রোজগারের রাস্তা খুলে গেল। সুপ্রিম কোর্ট গত মাসের ২৪ তারিখ এই মামলায় তার প্রথম এবং এক ঐতিহাসিক রায়ে এই ব্যাপারে রাজ্যগুলির দীর্ঘদিনের দাবি মেনে নিয়েছিল। এতদিন শুধু কেন্দ্রীয় সরকার এক তরফা রয়্যালটি আদায় করত।

একাধিক রাজ্য সরকার দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছিল খনিজ সম্পদের উপর রয়্যালটি বাবদ আয়ের অংশ রাজ্যগুলিকে দেওয়া হোক। অথবা রাজ্যগুলিকে রয়্যালটি চাপানোর অধিকার দেওয়া হোক। এরফলে খনির উপর রাজ্যগুলির মালিকানা বলবৎ হয়। কিন্তু সরকার নির্বিশেষে কেন্দ্র এই অধিকার দিতে রাজি হচ্ছিল না। এ বিষয়ে সবথেকে বড় ভূমিকা পালন করেছে বঙ্গ সরকার। বামফ্রন্ট সরকারের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন কেন্দ্র-রাজ্য আলোচনায় এই প্রসঙ্গ তুলে রয়্যালটি খাতে প্রাপ্ত অর্থের ভাগ দাবি করে আসছিল। এমনকি এই মামলায় বাংলার সরকারের আবেদন বেশ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন নয় সদস্যের বেঞ্চ গত মাসে জানিয়েছে, এই ক্ষেত্রে রয়্যালটিকে কর বা ট্যাক্স বলে গন্য করা যাবে না। নয় বিচারপতির একজন বিবি নাগরত্না বাকিদের সঙ্গে সহমত হননি।

Advertisement

আইনের চোখে রয়্যালটি হল জমির মালিকের সঙ্গে ব্যবহারকারীর এক ধরনের বোঝাপড়া বা চুক্তি। তা নির্দিষ্ট মেয়াদের লিজও হতে পারে। যেহেতু ভারতে জমির প্রকৃত মালিক রাষ্ট্র তাই রয়্যালটি চাপানোর এক তরফা অধিকার শুধু কেন্দ্র ভোগ করে আসছিল।

শীর্ষ আদালত সুপ্রিম কোর্টের এই সংক্রান্ত পুরনো রায়গুলি খারিজ করে দিয়ে রাজ্যগুলির অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। এরফলে রাজ্য সরকারগুলি রাজস্ব বাবদ বিপুল অর্থ উপার্জনের রাস্তা খুলে গেল। শীর্ষ আদালতের রায়ে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে ওডিশা, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগড় এবং পশ্চিমবঙ্গ।

খনিজ সম্পদের উপর রয়্যালটি চাপানো এবং সেই বাবদ উপার্জিত অর্থের ভাগাভাগি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যগুলির সঙ্গে কেন্দ্রের বিবাদ আছে। এই বিবাদে অগ্রগণ্য ভূমিকা ছিল বাংলার। বামফ্রন্ট সরকারের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনও কেন্দ্র-রাজ্য আলোচনায় এই প্রসঙ্গ তুলে রয়্যালটি খাতে প্রাপ্ত অর্থের ভাগ দাবি করে আসছিল। আসানসোল, রানিগঞ্জ এলাকা ছাড়াও বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়ার বিভিন্ন খনি থেকে তোলা খনিজ সম্পদ থেকে রাজ্য সরকারের আয়ের কোনও সুযোগই ছিল না। সুপ্রিম কোর্টের ১৯৯৭ সালের একটি রায় এই ব্যাপারে রাজ্যগুলির জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল।

আসলে এই খাতে আদায়কৃত অর্থ রাজ্যগুলির সঙ্গে ভাগ করার দায় থাকে না কেন্দ্রের। পুরো অর্থই কেন্দ্রীয় সরকার খরচ করতে পারে। গত বছরের বাজেটে মোদী সরকার বেশ কিছু পণ্যে তাই নতুন করে রয়্যালটি চাপায়, যাতে রাজ্যগুলিকে আদায়কৃত অর্থের ভাগ দিতে না হয়। কর চাপালে তার ভাগ রাজ্যগুলির প্রাপ্য। যেমন আয়কর বাবদ আয় রাজ্যগুলির সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয় কেন্দ্রীয় সরকারকে।

Advertisement