• facebook
  • twitter
Thursday, 18 December, 2025

তদন্ত কমিটির রিপোর্টের বিরুদ্ধে বিচারপতি বর্মার আর্জি খারিজ সুপ্রিম কোর্টে

আদালত সাফ জানিয়ে দিল, বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে নিয়ম মেনেই তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছিল। সেই কমিটি নিয়ম মেনে তদন্ত করেছে।

নগদকাণ্ডে অভিযুক্ত বিচারপতি যশবন্ত বর্মার আর্জি খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। এর ফলে তাঁর অপসারণ প্রক্রিয়া আরও গতি পেতে পারে বলে মনে করছে সংসদ ও বিচারবিভাগের সংশ্লিষ্ট মহল। শীর্ষ আদালতের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত ও বিচারপতি এজি মসীহের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার রায় জানায়, বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে গঠিত অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান কমিটি যথাযথ নিয়ম মেনেই তদন্ত করেছে। সেই তদন্তের ভিত্তিতে করা সুপারিশ খারিজের কোনও প্রয়োজন নেই বলেই আদালতের পর্যবেক্ষণ।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের দোলের দিন আগুন লাগে দিল্লি হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাসভবনের গুদামে। দমকলকর্মীরা আগুন নেভাতে গিয়ে উদ্ধার করেন আধপোড়া নোটের বান্ডিল। এই ঘটনা ঘিরেই শুরু হয় তীব্র বিতর্ক। পরে তাঁকে দিল্লি হাইকোর্ট থেকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে বদলি করা হয়। ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের অভ্যন্তরীণ কমিটি গঠন করে সুপ্রিম কোর্ট। ৩ মে মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট জমা পড়ে।

Advertisement

সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না বিচারপতি বর্মার অপসারণের সুপারিশ করে চিঠি লেখেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে। তবে রিপোর্টের তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি। সেই রিপোর্টকেই চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন বিচারপতি বর্মা। তাঁর হয়ে সওয়াল করেন বর্ষীয়ান আইনজীবী কপিল সিব্বল। তিনি রিপোর্টটিকে অসাংবিধানিক দাবি করে বলেন, এভাবে অপসারণ প্রক্রিয়ার সুপারিশ একটি বিপজ্জনক নজির গড়বে। কিন্তু আদালত জানিয়ে দেয়, তদন্ত প্রক্রিয়ায় কোনও অনিয়ম হয়নি এবং এমন মামলা দায়েরও উপযুক্ত নয়।

Advertisement

এদিকে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি বর্মা দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে যে তদন্ত কমিটি তৈরি হয়েছে সেটা আইন মেনে হয়নি। তিনি বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগেই জনসমক্ষে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা, সংবাদমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। এই ধরনের ঘটনা সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় লঙ্ঘন করে।’ পাল্টা বিচারপতিরা প্রশ্ন তোলেন, যখন যশবন্ত বর্মার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল, তখন কেন আপত্তি করা হয়নি? তাতে বিচারপতির আইনজীবী উত্তর দেন, উদ্ধার হওয়া নগদ অর্থ কার, তা জানার জন্য বিচারপতি বর্মা তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হয়েছিলেন। গত ৩০ জুলাই মামলার চূড়ান্ত শুনানিতে রায়দান স্থগিত রেখেছিল আদালত।

ইতিমধ্যেই বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব এনেছেন রাজ্যসভার বিরোধী সাংসদরা। প্রস্তাবে সম্মতি দেন তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়। কিন্তু তাঁর পদত্যাগের ফলে সেই প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত। কেন্দ্রীয় সূত্রের খবর, নতুন উপরাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেওয়ার পরে রাজ্যসভায় আবার শুরু হতে পারে এই প্রক্রিয়া। বিকল্প হিসেবে লোকসভাতেও প্রস্তাব আনার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়াকে একপ্রকার নৈতিক সমর্থন জোগাল বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞমহল। সুপ্রিম কোর্ট তাঁর আর্জি খারিজ করে দেওয়ায় বিচারপতি বর্মার কাছে আর কোনও আইনি পথ খোলা রইল না।

Advertisement