প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী জুবিন গর্গ। সিঙ্গাপুরে ওয়াটার স্পোর্টস অ্যাক্টিভিটি করতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তিনি। সেখান থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টা নাগাদ এই দুর্ঘটনা ঘটে। মৃত্যুকালে জুবিনের বয়স হয়েছিল ৫২ বছর। অসমের বিশিষ্ট এই সঙ্গীতশিল্পীর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন সেরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তিনি বলেছেন, ‘অসমের বড় ক্ষতি। ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না জুবিন আমাদের কাছে কী ছিল। যে শূন্যস্থান রেখে গেল, তা পূরণ করা অসম্ভব।’
গুয়াহাটির একটি কোম্পানি সিঙ্গাপুরে নর্থ ইস্ট ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করেছিল। সেই অনুষ্ঠানে শুক্রবার রাতে পারফর্ম করার কথা ছিল জুবিন গর্গের। সিঙ্গাপুরের অনুষ্ঠানের আয়োজকের তরফে জানানো হয়, দুপুরে ওয়াটার স্পোর্টস অ্যাক্টিভিটি করার সময় শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা শুরু হয় গায়কের। আইসিইউতে ভর্তি করা হলে দুপুর আড়াইটে নাগাদ মৃত বলে ঘোষণা করা হয় শিল্পীকে। এর আগে চলতি বছর মে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন জুবিন। সেই সময় জ্বর ও সর্দিতে ভুগছিলেন তিনি। তখন তাঁকে হাসপাতালেও ভর্তি করানো হয়েছিল।
Advertisement
১৯৭২ সালের ১৮ নভেম্বর মেঘালয়ের তুরায় জন্ম জুবিন গর্গের। ছোট থেকে গানের প্রতি ভালোবাসা ছিল তাঁর। মোহিনী মোহন বরঠাকুর এবং প্রয়াত ইলি বরঠাকুর পুত্র ছিলেন জুবিন। বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক জুবিন মেহতার নামে নামকরণ করা হয় তাঁর। জুবিন একাধারে গায়ক, সুরকার, গীতিকার, সঙ্গীত পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক এবং চিত্রনাট্যকার ছিলেন। কবিতাও লিখতেন তিনি।
Advertisement
জুবিন গান গেয়েছেন ‘ফিজা’, ‘গ্যাংস্টার’, ‘রাজ’, ‘থ্রিডি’, ‘কৃষ থ্রি’র মতো সিনেমায়। বাংলা চলচ্চিত্রেও একাধিক গান গেয়েছেন তিনি। রংবাজ, খিলাড়ি, খোকা ৪২০-এর মতো সিনেমায় দিয়েছেন কণ্ঠ। অসমিয়া ছবিতে গানের পাশাপাশি অভিনয়ও করেছেন তিনি। গায়কের ঘনিষ্ঠমহলও একাধিকবার তাঁর বিরুদ্ধে অত্যাধিক মদ্যপানের অভিযোগ তুলেছে, যার জেরে তাঁর একাধিক শো-ও বাতিল সাম্প্রতিক অতীতে।
আপার অসমের বাসিন্দা গরিমা সাইকিয়াকে ২০০২ সালে ৪ ফেব্রুয়ারি বিয়ে করেন জুবিন। জুবিনের অ্যালবাম অনামিকা এবং মায়ার রিলিজের পর মুগ্ধ হয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন গরিমা। জুবিন শুধুমাত্র অসমের অন্যতম সেরা গায়ক ছিলেন না, তরুণদের আইকনও ছিলেন। বিভিন্ন সামাজিক ঘটনায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতেন উত্তর-পূর্বের এই সঙ্গীতশিল্পী।
মাত্র তিন বছর বয়সে গান গাওয়া শুরু করেন জুবিন। মা-ই ছিলেন তাঁর প্রথম গুরু। পণ্ডিত রবিন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ১১ বছর তবলা শেখেন জুবিন। পরে গুরু রমানি রাইয়ের কাছে অসমীয়া লোকসঙ্গীতের তালিম নেন। ৪০টিরও বেশি ভাষা-উপভাষায় ৩৮,০০০ এরও বেশি গান রেকর্ড করেছেন জুবিন। অসমিয়া, বাংলা এবং বলিউড সিনেমায় গান গেয়ে খ্যাতি লাভ করেন।
ঢোল, গিটার, তবলা, ম্যান্ডোলিন সহ ১২টি যন্ত্র বাজাতে পারতেন জুবিন। ১৯৮০ শেষের দিকে স্কুলে পড়ার সময়ই রক ব্যান্ড ‘বুম বুম’ তৈরি করেন জুবিন। অসমের লোকসঙ্গীতে সঙ্গে রক গানের সংমিশ্রণ ঘটিয়েছিল এই ব্যান্ড। স্কুলে পড়াশুনা শেষ করে গুয়াহাটির কলেজে বিএসসি কোর্সে ভর্তি হন তিনি। যদিও গানের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার জন্য তিনি মাঝপথেই কলেজ ছেড়ে দেন।
২০০২ সালে ফেব্রুয়ারিতে ছোট বোন অভিনেত্রী-গায়িকা জংকি বরঠাকুর হারান জুবিন। একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার পথে অসমের তেজপুরের কাছে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। জুবিন তাঁর স্মরণে একটি অ্যালবাম প্রকাশ করেন। পাম বোরঠাকুর নামে জুবিনের আরেক বোন রয়েছে।
Advertisement



