হিমাচল প্রদেশে বৃষ্টি, হড়পা বান ও ধসের জেরে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। রবিবারে প্রশাসনিক তথ্য অনুযায়ী গত ২০ জুন থেকে মৃতের সংখ্যা ছিল ৭৪ জন। সোমবার আরও চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। ফলে এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে হিমাচল প্রদেশে সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৮ জন। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত অন্তত ৩৭ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি এই রাজ্যের মান্ডিতে। এখানে প্রাণ হারিয়েছেন ১৪ জন। আবার ৩০ জনের এখনও কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাঁদের খোঁজে উদ্ধারকাজ শুরু করেছে প্রশাসন।
এই ঘটনার জেরে কেন্দ্রের শাসক দলের বিজেপি সাংসদ কঙ্গনা রানাউতের অনুপস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছে রাজ্যের শাসকদল কংগ্রেস। বিতর্ক শুরু হওয়ার পরেই বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে কঙ্গনার পাল্টা জবাব, তিনি মান্ডির সাংসদ। কিন্তু মন্ত্রী নন। ত্রাণের জন্য তাঁর কাছে তহবিলও নেই। তা সত্ত্বেও তিনি কেন্দ্র সরকারের কাছ থেকে টাকা আনার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ‘বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য আমার কাছে কোনও তহবিল নেই। আমি কোনও মন্ত্রীও নই। সাংসদদের কাজ সংসদেই সীমাবদ্ধ। প্রকল্পের ক্ষেত্রে আমরা ক্ষুদ্র। কিন্তু কেন্দ্রের থেকে বিপর্যয় মোকাবিলার অনুদান আনার চেষ্টা করছি।’
Advertisement
কঙ্গনা কংগ্রেসের এই মন্তব্যের জবাব দেওয়ার পরই পাল্টা আঙুল তুলেছেন হিমাচল প্রদেশের কংগ্রেস সরকারের দিকে। তাঁর দাবি, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজনকে কোনও সাহায্য দিচ্ছে না কংগ্রেস সরকার। তাঁর কথায়, ‘যাঁরা এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী, তাঁরা মুখ লুকিয়ে রয়েছেন। দুর্নীতি করছেন। কেন্দ্রীয় অনুদান ওঁদের কাছে আসে। আমার বা হিমাচল প্রদেশের বিরোধী দলনেতা জয়রাম ঠাকুরের কাছে আসে না। তাই আমার নীতি নির্ধারণের ক্ষমতা নেই।’
Advertisement
এখানকার থুনাগের হিমাচল সমবায় ব্যাঙ্ক ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। প্রায় ৮০০০ শহরবাসীর জীবনের সমস্ত সঞ্চয় হড়পা বানে ভেসে গিয়েছে। ব্যাঙ্কটির একতলার লকার ভেসে গিয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিংহ সুখু জানিয়েছেন, গত কয়েক দিনে ১৯ বার মেঘভাঙা বৃষ্টি হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। হড়পা বান এবং ধসে বহু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৭০০ কোটির সম্পত্তি।
জানা গিয়েছে, সোমবার পর্যন্ত হিমাচলে মোট ২৩টি হড়পা বান, ১৯ বার মেঘ ভাঙা বৃষ্টি এবং ১৬টি ভূমিধসের খবর পাওয়া গিয়েছে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মৃতের সংখ্যাও। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর (এসডিএমএ) জানিয়েছে, এর মধ্যে বৃষ্টিজনিত কারণে ৫০ জন মারা গিয়েছেন, আর সড়ক দুর্ঘটনায় ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। হড়পা বানে ১৪ জন ভেসে গিয়েছেন। জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে আট জনের। ভূমিধস, বজ্রপাত, সাপের কামড় এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েও অনেকের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যাও শতাধিক। এদিকে মান্ডি জেলার ধস ও বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছে স্থানীয় প্রশাসন। এখনও পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ স্পষ্ট জানা না গেলেও থুনাগের হিমাচল সমবায় ব্যাঙ্ক ধ্বংস হওয়ার ফলে মনে করা হচ্ছে, আনুমানিক কয়েক কোটি টাকা এবং লক্ষ লক্ষ টাকার গহনা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে হিমাচলের বেশ কিছু জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা রয়েছে। হিমাচল প্রদেশের ১০ জেলায় আরও ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রাজ্যের তিন জেলা কাংড়া, সিরমৌর এবং মন্ডীতে বুধবার পর্যন্ত অতি ভারী বৃষ্টির লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শিমলা, সোলান, বিলাসপুর, হামিরপুর, উনা, চম্বা এবং কুল্লুতেও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। টানা দুর্যোগে রাজ্যের ২৬৯টি রাস্তা বন্ধ, যার মধ্যে দু’টি জাতীয় সড়কও রয়েছে। ২৭৮টি জলপ্রকল্পের কাজ থমকে গিয়েছে। কোথাও আবার ট্রান্সফর্মার, পাম্প এবং জলের পাইপ ভেঙে গিয়েছে। ফলে রাজ্য জুড়ে দেখা দিয়েছে তীব্র জলসঙ্কট।
Advertisement



