পদত্যাগে অনড় রাহুল, বিকল্প খুঁজতে দিশেহারা কংগ্রেস হাইকম্যান্ড

পদ ছাড়ার ব্যাপারে এখনও অনড় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধি। তাই আবারও কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকে রাহুলকে বােঝানাের চেষ্টা করা হবে।

Written by SNS New Delhi | May 29, 2019 1:31 pm

রাহুল গান্ধি ও সোনিয়া গান্ধি (Photo: IANS)

পদ ছাড়ার ব্যাপারে এখনও অনড় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধি। তাই আবারও কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকে রাহুলকে বােঝানাের চেষ্টা করা হবে বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর। সম্ভবত চলতি সপ্তাহেই ফের ডাকা হতে পারে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক।

এদিকে আজই রাহুলের বাড়িতে এ নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধি, আহমেদ প্যাটেল, রণদীপ সিং সূরজেওয়ালা সহ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। কংগ্রেস সূত্রে খবর, সিদ্ধান্ত বদলানাের জন্য রাহুলের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হতে পারে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষে।

লােকসভা ভােটের ফল প্রকাশের পরে দলীয় স্তরে একাধিকবার রাল স্পষ্ট করে দিয়েছেন, সভাপতির দায়িত্ব তিনি আর পালন করবেন না। তাই নতুন কাউকে সভাপতি হিসেবে বেছে নিক কংগ্রেস। এ ব্যাপারে তিনি গতকাল আহমেদ প্যাটেল এবং কে কে বেণুগােপালের মতো শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কাছেও নিজের মত স্পষ্ট করেছেন।

রাহুল বলেছেন, সভাপতির পদ ছেড়ে তিনি দলের অন্য দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত। নিজের মা এবং বােন প্রিয়াঙ্কা গান্ধিও যে সভাপতির দায়িত্ব পালন করতে আসবেন না, তাও স্পষ্ট করেছে রাহুল। বলেছেন, গান্ধি-নেহরু পরিবার থেকেই যে সভাপতি হতে হবে তার কোনও মানে নেই।

কংগ্রেস সূত্রের খবর, দলের এই পরাজয়ের কারণ খুঁজে বেড়াচ্ছেন রাহুল দেশে অধিকাংশ রাজ্যে কংগ্রেসের প্রদেশ নেতৃত্বের ওপর তাঁর প্রচণ্ড বীতরাগ তৈরি হয়েছে। দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক এবং তারপরে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের সময় রাহল সপষ্ট ভাষায় বলেছেন, বিরােধী আসনে থেকে বিজেপির মতাে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ পরিচালিত একটি সংঘবদ্ধ দলের বিরুদ্ধে নির্বাচনী সাফল্য আনতে গেলে যে সংকল্পবদ্ধ মানসিকতা, নিষ্ঠা, অধ্যবসায় এবং সর্বোপরি দিনরাত এক করে পরিশ্রম করার দরকার ছিল, নেতৃত্বের বেশির ভাগের মধ্যেই তার নিদারুণ অভাব লক্ষ্য করেছেন। এতে যারপরনাই ক্ষুব্ধ রাহুল গান্ধি।

তিনি লক্ষ করেছেন, এরকম কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে প্রচার চলাকালীন নেতৃত্বের একটা অংশ একই রকম আয়েশ ও বিলাসিতার মধ্যে দিয়ে কাটিয়েছে। নীচুতলার কর্মীদের সঙ্গে মিশে তাঁদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করায় নেতৃত্বের এই অংশের মধ্যে চরম অনীহা দেখা গিয়েছিল। ফলে হতাশ রাহুলের ধারণা, নেতৃত্বের এই বর্তমান কাঠামােকে দিয়ে মানুষের মধ্যে সাড়া ফেলতে পারার মতাে কোনও রাজনৈতিক অভিযানে ঝাপানাে সম্ভব নয় শতাব্দীপ্রাচীন এই জাতীয় দলের পক্ষে।

অন্যদিকে রাহুলের বিকল্প খুঁজতে গিয়ে রীতিমতাে নাকানিচোবানি খেতে হচ্ছে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বকে। গান্ধি-নেহরু পরিবারের বাইরে কংগ্রেসের যিনিই নতুন সভাপতি হােন না কেন, তাঁকে সরাসরি লড়াই করতে হবে নরেন্দ্র মােদির মতাে একজনের বিরুদ্ধে। ফলে কংগ্রেস সভাপতির যেমন ব্যক্তিগত ক্যারিশমা এবং ভাবমূর্তি থাকা দরকার, তা একমাত্র আছে রাহুল গান্ধির মধ্যেই।

দ্বিতীয়ত দলের সমস্ত অংশের মধ্যে সঠিক গ্রহণযােগ্যতা না থাকলে কংগ্রেসে আবার নতুন করে শুরু হয়ে যেতে পারে গােষ্ঠীদ্বন্দ্ব। তাতে কংগ্রেসের এখনও যেটুকু শক্তি আছে বিভিন্ন রাজ্যে, তাতেও ক্ষয় হবে। ফলে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের বেশির ভাগ নেতাই চান রাহুল গান্ধিকে কোনও রকমে বুঝিয়েসুজিয়ে তাঁকেই সভাপতির পদে রাখতে। পাশাপাশি নতুন পরিস্থিতিতে দল পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি যা যা শর্ত দেবেন, গােটা দল তা একবাক্যে মেনে নেবে।

কিন্তু তাতেও যদি রাহুল দলীয় সভাপতির পদ ছাড়ার প্রশ্নে অনমনীয় থাকেন, তাহলে কংগ্রেসের পরবর্তী সভাপতি নির্বাচনের বিষয়টি দেখতে হবে গান্ধি পরিবারকেই। কারণ সােনিয়া, প্রিয়াঙ্কা এবং রাহুল গান্ধিরা যদি নিজেরা আলােচনা করে সর্বসম্মত কোনও সভাপতির নাম স্থির করতে পারেন, একমাত্র তাহলেই সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে দলের পক্ষে তাঁকে মেনে নেওয়ার একটা সুযােগ থাকবে। তবে স্বল্প সংখ্যক হলেও দলের আরেকটা অংশের অভিমত হল, এই অবস্থায় একমাত্র সমাধান গােপন ব্যালট ভােটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচন করা।

 

এই পরিস্থিতিতে আগামী দিনে দল কীভাবে পরিচালিত হবে, তা ঠিক করতেই আবারও ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে বসতে চলেছে কংগ্রেস। এরই মধ্যে কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা শশী থারুর বলেছেন, রাহুল এই হারকে ব্যক্তিগত নিচ্ছেন বলে পদত্যাগ করতে চাইছেন। এতে তাঁর নিজের বা কংগ্রেসের ভালাে হবে না। গতকালই কংগ্রেসের দুই শীর্ষ নেতা আহমেদ প্যাটেল এবং কে কে বেণুগােপালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাহুল। সেখানে তিনি আবারও বলেন, দলে তাঁর বিকল্প খোঁজা শুরু হােক। অর্থাৎ তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দিলে কাকে সভাপতি করা হবে, তা নিয়ে আলােচনা শুরু করুক কংগ্রেস। যদিও গতকালই টুইট করে সে বক্তব্য খারিজ করেছেন সােনিয়া গান্ধির রাজনৈতিক সচিব তথা রাজ্যসভার সাংসদ আহমেদ প্যাটেল।

ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে রাহুল দলের শীর্ষ নেতাদের একাংশের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বলে খবর। আনুষ্ঠানিকভাবে জানানাে না হলেও জানা গিয়েছে, রাহুল অভিযােগ করেন শীর্ষ নেতারা যথেষ্ট পরিশ্রম করেননি। দলের প্রচারের মূল ধারা অনুসরণ করেননি। অশােক গেহলট, কমলনাথ, পি চিদম্বরমের সমালােচনা করে রাহুল বলেন, তাঁরা ছেলেদের প্রার্থী করা ও জেতাতেই ব্যস্ত ছিলেন।

বরিষ্ঠ নেতাদের সমালােচনার ফলে দলের মধ্যে নেতাদের ভূমিকা নিয়ে সমালােচনা আরও তীব্র হয়েছে। তবে কংগ্রেস সূত্রে আশা করা হচ্ছে প্রাথমিক উত্তাপ কেটে যাবে। রাহুলকে ইস্তফার ইচ্ছা থেকে নিরস্ত করা সম্ভব হবে। রাজ্যভিত্তিক রদবদলের প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে যাবে। বিশেষ করে যে যে রাজ্যে কংগ্রেসের ফল খারাপ হয়েছে, সেখানে প্রদেশ সভাপতি পরিবর্তনের পথে যাবে কংগ্রেস।