লােকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্রকে হাতিয়ার করেছে বিজেপি থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি। পরিবারের বাইরে অন্য কারাের হাতে দল পরিচালনার ভার দেওয়ার ক্ষমতা কংগ্রেসের নেই বলেও কংগ্রেসকে খোঁচা দিয়েছে বিজেপি।
রাহুল গান্ধির গায়ে আভিজাত্যের তকমা জুড়ে দিতে বিজেপি তাঁকে ‘নামদার’ বলে কটাক্ষ করতেও ছাড়েনি। রাহুল গান্ধির সঙ্গে তুলনা টানার সময় মােদি চাওয়ালা বলে নিজেকে সব সময় তুলে ধরেছেন। সব মিলিয়ে কংগ্রেসের গা থেকে পরিবারতন্ত্রকে ছেটে ফেলতে কংগ্রেস সভাপতি পদ ছাড়ার সিদ্ধান্তে অনড় রইলেন রাহুল গান্ধি। তাছাড়া গােটা দেশে দলের বিপর্যয়ের জন্য নিজেকেই দায়ী করেছেন রাহুল।
সভাপতি পদে তাঁর বিকল্প খোঁজার জন্য ইতিমধ্যেই কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছেন রাহুল গান্ধি। তিনি যে সভাপতি পদ থেকে সরছেন তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। রাহুলের সিদ্ধান্তে সম্মতি দিয়েছেন সােনিয়া গান্ধি এবং বােন প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বঢ়রাও।
প্রাথমিকভাবে রাহুলকে সিদ্ধান্ত বদলের পরামর্শ দিলেও সােনিয়া এবং প্রিয়াঙ্কা দু’জনেই রাহুলের কথায় মনে করছেন কংগ্রেসের নেতৃত্বে বদল আসার প্রয়ােজন রয়েছে। সেই সঙ্গে দলের সাংগঠনিক পরিবর্তন আনতে হবে। দলের ভরাডুবির দায় পুরােটাই নিজের কাধে নিয়েছেন রাহুল গান্ধি।
বেশ কয়েকটি কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে তাঁরই নির্দেশে। দলের নব নির্বাচিত সাংসদদের সঙ্গে তিনি দেখা করতে চাননি। এই সাংসদরা তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য ফোনে আর্জি জানিয়েছিলেন। কিন্তু রাহুল কারাের সঙ্গেই দেখা করতে চাননি। দুই প্রবীণ কংগ্রেস নেতা আহমেদ প্যাটেল এবং কে সি বেণুগােপালের সঙ্গে বৈঠক করে রাহুল পদত্যাগের ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন বলে দলীয় সূত্রে খবর।
সেই সঙ্গে নতুন নেতা খোঁজার জন্য দলের দুই প্রবীণ নেতাকে জানিয়েছেন রাহুল। তবে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি রাহুলের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেনি। লােকসভা নির্বাচনে মােদি সহ বিজেপিকে চাপে ফেলতে রাহুল যেভাবে চেষ্টা করেছে তাতে তিনিই যােগ্য নেতৃত্ব বলে মনে করছে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি। কংগ্রেসের অনেক নেতানেত্রীই রাহুল গান্ধিকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য বােঝাবার চেষ্টা করছেন। তবে তিনি এখনও নিজের সিদ্ধান্তেই অনড় রয়েছেন বলে দলের অন্দরের খবর।
রাহুল গান্ধির ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, পদ ছাড়ার ব্যাপারে কোনও দ্বিমত নেই রাহুলের। নতুন সভাপতি নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব সামলাবেন। তবে এই সময়ের মধ্যে কোনও সাংগঠনিক বা দলীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন না। দলের অন্দরে কান পাতলে শােনা যাচ্ছে পরবর্তী বৈঠকেই রাহুলের পদত্যাগের কথা ঘােষণা করা হবে।
সােমবার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু মৃত্যুবার্ষিকীতে শান্তিভবনে গিয়ে তাঁর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান রাহুল গান্ধি। শনিবার কার্যকরী বৈঠকে ইস্তফা দেওয়ার পর আজ প্রথম টুইট করলেন রাহুল। টুইটে লিখেছেন, ‘জওহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে শক্তিশালী, স্বাধীন, আধুনিক গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। তাঁর এই অবদানের জন্য ভারতবর্ষে ৭০ বছর গণতন্ত্র জীবিত রয়েছে। চলুন মৃত্যু দিবসে আমরা জওহরলাল নেহরুর অবদানকে স্বীকার করি। অনেক গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের থেকেও ছােট, শীঘ্রই একনায়কতন্ত্র অধঃপতিত হবে।’