মরণোত্তর “ভারতরত্ন” নরসিমহা রাও, চৌধরি চরণ সিং, এমএস স্বামীনাথন-কে

Written by SNS February 9, 2024 2:32 pm

দিল্লি, ৯ ফেব্রুয়ারি: প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমা রাওকে মরণোত্তর ভারতরত্ন প্রদান করল কেন্দ্র। আজ দেশবাসীকে এই সুখবর জানিয়ে ট্যুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেন, ‘অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি, আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমহা রাও গারু সম্মানিত হতে চলেছেন ভাকতরত্নে।’

পাশাপাশি ভারতের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী তথা লোক দলের প্রতিষ্ঠাতা চৌধরি চরণ সিং-কেও ভারতরত্ন সম্মান দেওয়া হবে। এই দুই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি এক বিজ্ঞানীকেও দেশের সর্বোচ্চ সম্মান প্রাপক হিসাবে ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর নাম এমএস স্বামীনাথন। গত বছর সেপ্টেম্বরে মৃত্যু হয়েছে দক্ষিণ ভারতীয় কৃষি বিজ্ঞানী তথা একদা রাজ্যসভার সাংসদ স্বামীনাথনের। ভারতের সবুজ বিপ্লবের অন্যতম রূপকার বলা হয় তাঁকে। তাঁকে এবং বাকি দুই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে মরণোত্তর ভারতরত্ন সম্মান দেওয়া হবে। এ বছর এই নিয়ে পঞ্চম ভারতরত্ন প্রাপকের নাম ঘোষণা করল কেন্দ্র। যার মধ্যে বিজেপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তথা দেশের প্রাক্তন উপ প্রধানমন্ত্রী আডবাণী ছাড়া বাকি চারটিই মরণোত্তর সম্মান।

দেশের এক কঠিন আর্থিক পরিস্থিতিতে কীভাবে তিনি দেশকে সংকটমুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন, তা আজও চর্চিত বিষয়। ‘দেশের আর্থিক সংস্কারের জনক’ হিসাবে পরিচিত এই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নরসিমহা রাওয়ের সাফল্যের নজির কম নয়। দেশের আর্থিক সংস্কারের জনক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং নরসিমহা রাওকে ভারতের অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রকৃত জনক বলে বর্ণনা করেন। রাও গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উত্তরণের জন্য মনমোহন সিং-কে তাঁর অর্থমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ করেন। নরসিমহার নির্দেশ মতো, মনমোহন সিং ভারতের বিশ্বায়নের সূচনা করেন। নরসিমহা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলি হল, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল  নীতিগুলিকে বাস্তবায়িত করা। যার হাত ধরে প্রায় দেউলিয়া অবস্থায় থাকা দেশকে অর্থনৈতিক পতন থেকে উদ্ধার করা হয়।

রাজনৈতিক সফর- ১৯৯১ সালে দেশের সবচেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে ভোটে জেতে কংগ্রেস। সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারের নেতৃত্বের সুযোগ আসে নরসিমা রাওয়ের কাছে। দেশের প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসেন নরসিমহা রাও। গান্ধী-নেহরু পরিবারের বাইরে তিনিই হন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যিনি টানা ৫ বছর ওই পদে ছিলেন। এছাড়াও দক্ষিণ ভারত থেকে তিনিই প্রথম যিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। সংসদে ফিরতে তিনি নানন্দিয়াল থেকে উপনির্বাচনে লড়েন। জিতে যান ৫ লাখ ভোটে। যা সেই সময় গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান পেয়েছিল।

নরসিমহা রাওই প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি তৎকালীন সময়ে একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে অর্থমন্ত্রী করেন। আর সেই অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন মনমোহন সিং। এছাড়াও তখন বিরোধী দলনেতা ছিলেন অটল বিহারী বাজপেয়ী। নরসিমা তাঁকে দেন মন্ত্রিপরিষদের পদমর্যাদা। বিরোধী দলের একজন সদস্যকে মন্ত্রিপরিষদের পদমর্যাদা দেওয়া একমাত্র উদাহরণ নরসিমা রাখেন। তিনি জেনেভায় জাতিসংঘের বৈঠকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য বিরোধী নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ীকেও পাঠান।

পি.ভি. নরসিমহা রাও-এর জন্ম ১৯২১ সালের ২৮ জুন। বর্তমান তেলেঙ্গানার ওয়ারঙ্গল জেলার নরসাম্পেটের লাকনেপল্লী গ্রামে। একটি তেলেগু নিয়োগী ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম নরসিমহার। ছোটবেলায় তেলাঙ্গানার বাঙ্গারা গ্রামে বেড়ে ওঠা। আর সেখানেই তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা। এরপর ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ও পরে নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন। ততদিনে ১৯৩০ এর ‘বন্দেমাতরম’ আন্দোলনে শামিল হয়ে যান। দেশ তখন স্বাধীনতার আন্দোলনের আগুনে জ্বলছে।

এছাড়াও স্বামীনাথনের ব্যাপারে  প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, এটি অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে, ভারত সরকার কৃষি ও কৃষকদের কল্যাণে জাতির জন্য তাঁর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ডঃ স্বামীনাথনজিকে ভারতরত্ন প্রদান করছে। ”তিনি চ্যালেঞ্জিং সময়ে ভারতকে কৃষিতে স্বনির্ভরতা অর্জনে সহায়তা করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এবং ভারতীয় কৃষিকে আধুনিকীকরণের দিকে অসামান্য প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। আমরা একজন উদ্ভাবক এবং পরামর্শদাতা হিসাবে তাঁর অমূল্য কাজকে স্বীকৃতি দিই। এভাবে বেশ কিছু ছাত্রদের শেখার ও গবেষণাকে উৎসাহিত করার সুযোগ করে দেয়। ”