মঙ্গলবার ছিল অযোধ্যার ইতিহাসে এক বিশেষ দিন। রামমন্দিরে ‘ধর্মধ্বজা’ উত্তোলন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিন জনগণের উদ্দেশে রামমন্দির থেকে ভাষণ দেন মোদী। প্রতিটি ভারতীয়কে এই দিনটি স্মরণ রাখার পরামর্শ দেন তিনি। আত্মবিশ্বাস, স্ব-পরিচয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এবং গর্বিত হওয়ার জন্য আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
অযোধ্যার রামমন্দির থেকে এদিন ভাষণে মেকলে-প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন মোদী। ব্রিটিশ শিক্ষাবিদ মেকলেকে নিশানা করেন প্রধানমন্ত্রী। মেকলে ভারতীয়দের মধ্যে দাসত্ব মানসিকতা তৈরি করেছিলেন বলে তোপ দাগেন। তার প্রভাব আজও ভারতীয়দের মধ্যে রয়ে গিয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, ‘আগামী ১০ বছরে আমাদের লক্ষ্য হল ভারতকে এই দাসত্বের মানসিকতা থেকে মুক্ত করা।‘
Advertisement
প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন আমরা স্বাধীনতা পেলেও হীনমন্যতা থেকে মুক্ত হতে পারিনি। তাই বিদেশি মানেই শ্রেষ্ঠ আর ভারতীয় সব কিছু নিকৃষ্ট, আমাদের মধ্যে তুলনা করার একটা সহজ অভ্যাস তৈরি হয়েছে। দেশের সংবিধানকেও বিদেশি সংবিধান দ্বারা অনুপ্রাণিত হওয়ার বিষটি এদিন উত্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী জোরের সঙ্গে বলেন, ‘ভারত হল গণতন্ত্রের জননী। গণতন্ত্র আমাদের রক্তে, গণতন্ত্র আমাদের ডিএনএ-তে রয়েছে।‘
Advertisement
‘নিম্নগামী পরিস্রাবণ তত্ত্ব’ হল ব্রিটিশ ভারতে প্রবর্তিত একটি শিক্ষানীতি। এই শিক্ষানীতি অনুযায়ী প্রথমে সমাজের উচ্চবিত্ত ও উচ্চ-শিক্ষিত একটি ক্ষুদ্র অংশকে শিক্ষা দেওয়া হবে এবং তাদের মাধ্যমেই জ্ঞান সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। এই তত্ত্বের মূল লক্ষ্য ছিল সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে ব্রিটিশদের জন্য প্রয়োজনীয় কেরানি তৈরি করা। ভারতের শিক্ষাব্যবস্থায় মেকলে ১৮৩৫ সালে এই তত্ত্ব চালু করতে চেয়েছিলেন।
উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ভারতীয়কে ব্রিটিশ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তাদের মাধ্যমে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করতে চেয়েছিলেন মেকলে। আর এভাবেই ব্রিটিশের দাসত্বের বীজ ভারতীয় রক্তে প্রবেশ করাতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে ভারতবর্ষের নিজস্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এতটাও ঠুনকো নয় যে তা সহজে চোরাবালিতে মিশে যাবে বলে মন্তব্য প্রধানমন্ত্রীর।
তামিলনাড়ুর উথিরামেরুর গ্রামে প্রায় ১,১০০ বছর আগে এক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। চোল রাজা প্রথম পরান্তকের রাজত্বকালে এই গ্রামে ‘কুদাবোলাই প্রথা’ চালু ছিল। এই প্রথায় পাম পাতা বা তালপাতায় নাম লিখে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে গ্রামের বিভিন্ন কমিটিতে সদস্যদের নির্বাচন করা হত। ভারতে মাটি গণতন্ত্রের মাটি। এখানে আদি যুগ থেকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত। তাই বিদেশি শক্তির এ বিষয়ে ভারতকে কিছু না শেখানোই ভালো বলে, এদিন ভাষণে মত প্রকাশ করেন তিনি।
এদিনের ভাষণে কংগ্রেসকেও একহাত নেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। রাহুল গান্ধী আমেরিকা সফর এবং গণতন্ত্র বাঁচানোর প্রচেষ্টা নাটক ছাড়া আর কিছুই নয় বলে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেন। বিদেশি প্রভাব থেকে বেরিয়ে নিজের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাস রেখে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার পাঠ এদিন রামমন্দিরে ‘ধর্মধ্বজ’ উত্তোলনের অনুষ্ঠান থেকে দেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
Advertisement



