• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

পাকিস্তান সেনা এগোচ্ছে ভারতীয় সীমান্তের দিকে, মোকাবিলায় প্রস্তুত ভারত

বিদেশ মন্ত্রক এবং সেনার যৌথ বিবৃতিতে জানালেন বিদেশ সচিব ও ২ সেনা আধিকারিক

ফাইল চিত্র

পাকিস্তানের সেনা ক্রমশ ভারতীয় সীমান্তের দিকে এগিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে পাকিস্তানের ভূমিকা উসকানিমূলক বলে মনে করছে ভারত। এই পরিস্থিতিতে ভারতও যে কোনও সামরিক মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত, বলে শনিবার সকালে সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি। অপারেশন সিঁদুর-এর পর শনিবারও ভারতীয় সেনার কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং-কে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন বিক্রম মিস্রি। সাংবাদিক বৈঠকে তাঁরা বলেন, ‘পাকিস্তান আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে অগ্রসর হতে চাইছে, উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে চাইছে। এর মোকাবিলার জন্য ভারতীয় সেনাও চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েছে। পাকিস্তানের বিভিন্ন দিক থেকে আক্রমণের সব প্রচেষ্টা রুখে দেওয়া হয়েছে। যথাযোগ্য প্রত্যাঘাত করছে ভারতও। পাকিস্তান বারবার প্ররোচনা দিয়ে আসলেও সংযমী মনেভাব দেখিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।’

বিদেশ মন্ত্রক এবং সেনার যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ভারতের পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তান আক্রমণ চালাচ্ছে। ভারতীয় সেনাঘাঁটিগুলিকে নিশানা করা হচ্ছে। ড্রোন এবং অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণ চলছে। অধিকাংশ হামলাই ভারত নিষ্ক্রিয় করেছে। আদমপুর, উধমপুর, ভাটিন্ডার মতো কিছু কিছু জায়গায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শ্রীনগর, অবন্তিপোরা, উধমপুরে চিকিৎসাকেন্দ্র, স্কুলগুলিকে নিশানা করেছে পাকিস্তানি সেনা। হাই স্পিড মিসাইল ছোড়া হয়েছে।’

Advertisement

 
সেনা আধিকারিক সোফিয়া কুরেশি এবং ব্যোমিকা সিং এদিন বলেন, ‘ এয়ারক্র্যাফ্ট, দূরপাল্লার অস্ত্র, ইউক্যাম দিয়ে সাধারণ মানুষের বসবাসের জায়াগুলিকে নিশানা করা হচ্ছে।নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর গোলাগুলি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। আকাশসীমা লঙ্ঘন করে ভারতে ঢুকছে পাকিস্তানের ড্রোন। শ্রীনগর থেকে নালিয়া পর্যন্ত বেশ কিছু জায়গায় আক্রমণ চালিয়েছে তারা। সাংবাদিক বৈঠকে কর্নেল সোফিয়া কুরেশি বলেন, পাকিস্তানের বিমানহানায় উধমপুর, ভুজ, পাঠানকোট ও ভাটিন্ডার ভারতীয় বিমানঘাঁটির সামান্য কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পুরোপুরি যুদ্ধের কায়দায় জেট বিমান দিয়ে আক্রমণ চালাচ্ছে ভারতীয় ঘাঁটিগুলি লক্ষ্য করে। প্রায় ২৬টি জায়গা দিয়ে পাক বিমান ভারতে ঢোকার চেষ্টা করেছিল শুক্রবার রাত থেকে ভোর পর্যন্ত। পাল্টা ভারতীয় সেনা এই সবকটি হামলাই রুখে দিতে সমর্থ হয়েছে।’  
 
উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং শুক্রবার গভীর রাতের হামলা সম্পর্কে বলেন. ‘রাত ১টা ৪০ মিনিট নাগাদ পাঞ্জাবের একাধিক বায়ুসেনা ঘাঁটি লক্ষ্য করে পাকিস্তান শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।’ হাসপাতাল, স্কুলও ছিল তাদের নিশানার মধ্যে। ব্যোমিকা সিং বলেন,’ যুদ্ধের শর্ত লঙ্ঘন করে শ্রীনগর, অবন্তিপোরা, উধমপুরে বায়ুসেনা ঘাঁটির কাছাকাছি স্কুল ও চিকিৎসা পরিষেবা কেন্দ্রে কাপুরুষোচিত হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। এই হামলা নিন্দনীয়।’ ভারতীয় সেনাও এর জবাব দিয়েছে। ভারত চায় উত্তেজনা প্রশমিত হোক, কিন্তু পাকিস্তান যদি তাতে সাড়া দেয় তবেই, বলেন উইং কমান্ডার ব্যোমিকা।
 
ব্যোমিকা সিং তথ্য দিয়ে জানান, ভারতীয় বাহিনী অত্যন্ত দ্রুততা ও নির্দিষ্ট লক্ষ্য করে পাকিস্তানি সেনা ঘাঁটি ও জঙ্গি তালিম শিবিরগুলিকে আক্রমণ করে। এর মধ্যে বিএসএফ সিয়ালকোটের একটি জঙ্গিঘাঁটি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। তিনি আরও জানান, ভারতীয় বাহিনী প্রত্যাঘাতে কোমর ভেঙে যাওয়া পাকিস্তান এখনও কুরুচিকর, মিথ্যা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তান যে দাবি তুলেছে তারা ভারতের সুরাত ও সিরসায় বিমানঘাঁটিতে থাকা এস-৪০০ সিস্টেম নষ্ট করেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি।
এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে দুই সেনা আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘ভারতীয় সেনা শুধুমাত্র কয়েকটি প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো, সেনা পরিকাঠামো, কম্যান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার , রেডার সাইট, অস্ত্র মজুতের এলাকাগুলিতে হামলা চালিয়েছে। রফিকি, মুরিদ, চাকলালা. রহিম ইয়ার খান, সুক্কুর, চুনিয়ায় ভারতের এয়ারক্র্যাফ্ট থেকে আক্রমণ করা হয়েছে। শিয়ালকোট, পাসরুরে বিমানঘাঁটিতেও হামলা চালিয়েছে ভারতীয় সেনা।’
 
এদিন বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি বলেন, পাকিস্তান মিথ্যে প্রচার চালাচ্ছে। সমাজ মাধ্যমে ভুয়ো তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। ভ্রান্ত প্রচার চালানো হচ্ছে। ভারতের গুরুত্বপূর্ণ শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র, পরিকাঠামো এবং সাইবার সিস্টেম ধ্বংস সকার পাকিস্তানের দাবিও মিথ্যে। পাকিস্তান সরকারের এই ধরণের মিথ্যে প্রচারে কারও কর্ণপাত করা উচিত নয়।’ বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি এদিন বলেন, ‘সাধারণ মানুষ এবং নাগরিকদের পরিকাঠামোগুলিকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে পাকিস্তান সেনা। বিশেষত হামলা চালানো হচ্ছে জম্মু-কাশ্মীর ও পাঞ্জাবে। তারা ভারতের সম্প্রদায়গুলির মধ্যে সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
 
প্রসঙ্গত, শনিবার ভোরে জম্মু-কাশ্মীরের রাজৌরিতে পাকিস্তানের হামলায় মৃত্যু হয়েছে প্রশাসনিক কর্তা রাজকুমার থাপার। সারারাত ধরে নিয়ন্ত্রণ রেখা ও সীমান্ত এলাকার ফিরোজপুর ও জলন্ধরে ক্ষেপামাস্ত্র, ও ড্রোন ছোড়ার ফলে সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আহতও হয়েছেন অনেকে। তাঁর কথায়, ‘ পাক আধিকারিকদের দাবি, ভারত শ্রী অমৃতসর সাহিবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এই দাবি হাস্যকর। আমি আগেই বলেছি, এভাবে ভারতকে বিভাজনের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে।’      

Advertisement

Advertisement