কেন্দ্রকে সুপ্রিম কোর্টের সাফ নির্দেশ ছিল ওয়াকফ সম্পত্তি কেন্দ্রের পোর্টালে নথিভুক্ত করতেই হবে। সেই কাজ সম্পূর্ণ করতে কেন্দ্রেকে ৬ মাসের সময় ধার্য করে দেয় দেশের শীর্ষ আদালত। ৬ ডিসেম্বর ছিল এর শেষ দিন। তার আগে গত ৬ জুন একটি স্বতন্ত্র পোর্টাল ‘উমিদ’ খোলা হয় কেন্দ্রের তরফে। সুপ্রিম নির্দেশ মেনে সেই ‘উমিদ’ পোর্টালে ৫.১৭ লক্ষ ওয়াকফ সম্পত্তি নথিভুক্ত করা হল। জানা গিয়েছে, নথিভুক্ত নামের মধ্যে ২ লক্ষেরও বেশি সম্পত্তিতে অনুমোদন মিলেছে। পরিসংখ্যান প্রকাশ করে এক কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রক। মন্ত্রক আরও জানিয়েছে, এ ছাড়া বেশ কিছু আবেদন তথ্য যাচাইয়ের পর বাতিল করে দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার ৮৬৯টি আবেদন। আবার পরিসংখ্যান বলছে, ওয়াকফ সংক্রান্ত ২ লক্ষ ১৩ হাজার ৯৪১টি সম্পত্তি এখনও অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
তবে কেন্দ্রের এই ওয়াকফ সম্পত্তি নথিভুক্তিকে লোক দেখানো এবং সুপ্রিম কোর্টের চোখে ধুলো দেওয়ার কাজ বলে কটাক্ষ করছে বাংলার তৃণমূল কংগ্রেস। এ প্রসঙ্গে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ ববি হাকিম বলেন, ওয়াকফ নিয়ে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মামলা আজও সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। রাতের অন্ধকারে বিলটা পাশ হয়েছিল। সেই বিলের বিরুদ্ধে আমরা এখনও রয়েছি। ওয়াকফের সম্পত্তি নথিভুক্ত করার কথা জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। নথিকরণের আগে থেকেই একটি পোর্টাল ছিল। এখন শুধু নাম পরিবর্তন হয়েছে। আমরা তো কোনও সম্পত্তি লুকোতে চাইছি না। তাই সেই সম্পত্তি নথিভুক্ত থাকে তাহলে অসুবিধা কোথায়? এটা সুপ্রিম কোর্টের অর্ডার।
Advertisement
ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে বাংলার তৃণমূল কংগ্রেসের অবস্থান নিয়ে বিরোধীরা দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলেছে । বিরোধীদের অভিযোগের পাল্টা মেয়র জানান, বিরোধীরা অনেক কিছু বলে। কিন্তু এই নিয়ে কোনও দ্বিচারিতা নেই। আমরা যে ওয়াকফ বিলের বিরুদ্ধে তার রেজুলেশন বিধানসভায় নেওয়া আছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু গত সপ্তাহেই কেন্দ্রের নির্দেশ মনে করিয়ে জানিয়েছিলেন, কোর্টের দেওয়া ৬ ডিসেম্বর আর বৃদ্ধি করা যাবে না। তার পর সোমবার ওয়াকফ পোর্টালের তথ্য ও পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হল।
Advertisement
সোমবার, কেন্দ্রীয় মন্ত্রক জানিয়েছে, ৫ লক্ষ ১৭ হাজার ৪০টি ওয়াকফ সম্পত্তি পোর্টালে নথিভুক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে ২ লক্ষ ১৬ হাজার ৯০৫টি সম্পত্তিতে অনুমোদন মিলেছে। সবচেয়ে বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি নথিভুক্ত হয়েছে উত্তরপ্রদেশ থেকে (৯২,৮৩০ থেকে ৮৬,৩৪৫ সুন্নি এবং ৬৪৮৫ শিয়া)। এ ছাড়া, মহারাষ্ট্র থেকে ৬২,৯৩৯টি, কর্নাটক থেকে ৫৮,৩২৮টি এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে ২৩,০৮৬টি ওয়াকফ সম্পত্তি কেন্দ্রের পোর্টালে নথিভুক্ত করা হয়েছে।
কেন্দ্রের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওয়াকফ কর্মসূচি সম্পন্ন করার জন্য অনবরত বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে প্রশিক্ষণ, ওয়ার্কশপ চলেছে। কীভাবে পোর্টালে এই সংক্রান্ত তথ্য নথিভুক্ত করতে হবে, তা হাতেকলমে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং প্রশাসনিক দল দেশ জুড়ে সাতটি আঞ্চলিক বৈঠকেরও আয়োজন করে। চালু করা হয়েছিল বিশেষ হেল্পলাইন নম্বর।
প্রসঙ্গত, ওয়াকফ সংশোধনী বিলের পক্ষে লোকসভায় ২৮৮টি ভোট পড়েছিল। বিপক্ষে গিয়েছিল ২৩২টি ভোট। অন্য দিকে রাজ্যসভায় ১২৮ জন সাংসদ এই বিলের পক্ষে ভোট দেন এবং বিপক্ষে ভোট পড়ে ৯৫টি। সংসদের উভয় কক্ষে এই সংশোধিত বিল পাশ হওয়ার পরে গত ৫ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সম্মতিক্রমে সেটি আইনে পরিণত হয়। পরে এই সংক্রান্ত মামলা সুপ্রিম কোর্টে যায়। আদালত জানায়, সংসদে পাশ হওয়া আইনকে অসাংবিধানিক বলা যায় না।
তবে ওই আইনের দু’টি ধারা নিয়ে আপত্তি জানায় শীর্ষ আদালত। এবং সেই দুটি ধারা স্থগিত রাখা হয়ে। স্থগিত ধারার প্রথমটি হল– সংশোধিত আইনে বলা হয়েছিল, কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ না কি সরকারি, তা জেলাশাসক বা সম পদমর্যাদার কোনও আধিকারিক ঠিক করতে পারেন। আদালত মনে করছে, এই সিদ্ধান্ত জেলাশাসক নিতে পারেন না। এটা আদালতের কাজ। দ্বিতীয়ত, আইনে বলা হয়েছে, যিনি ওয়াকফে দান করবেন, তাঁকে অন্তত পাঁচ বছর ইসলাম ধর্ম পালন করার প্রমাণ দিতে হবে। কিন্তু এটি কার্যকর করার কোনও নিয়ম সরকার বানায়নি।
Advertisement



