• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

পরিযায়ী শ্রমিক, ফেরিওয়ালাদের জন্য ‘এক জাতি এক রেশন কার্ড’

সরকার এক জাতি এক রেশন কার্ড-এর মাধ্যমে পরিযায়ী শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও প্রান্তিক কৃষকদের দেশের যে কোনও স্থানেই রেশন পাওয়ার ব্যবস্থা করছে।

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। (Photo: IANS/PIB)

এবার কেন্দ্রীয় সরকার ‘এক জাতি এক রেশন কার্ড’ চালু করতে চলেছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমান বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর ঘােষণা মতে ২০ লাখ কোটি টাকার প্যাকেজের বিস্তারিত জানাতে গিয়ে জানান, সরকার এক জাতি এক রেশন কার্ড-এর মাধ্যমে পরিযায়ী শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও প্রান্তিক কৃষকদের দেশের যে কোনও স্থানেই রেশন পাওয়ার ব্যবস্থা করছে। আপতকালীন ব্যবস্থা হিসেবে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য দেওয়ার কথা ঘােষণা করা হয়েছে। এছাড়া ওই বিশেষ রেশন কার্ডের ভিত্তিতে শ্রমিকদের কাজের জায়গায় সহজ ও সুবিধাজনক শর্তে ভাড়ায় থাকার বাসস্থানও দেওয়া হবে।

তিনি জানান, পরিযায়ী শ্রমিকদের এমন দমবন্ধ করা অবস্থায় নিজ রাজ্যে ফিরে যাওয়া খুবই যুক্তিগ্রাহ্য দাবি। পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশাকে সরকার একেবারেই আমল দিচ্ছে না বলে বিরােধীদের অভিযােগের উত্তরে অর্থমন্ত্রী জানান, সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের কষ্ট নিয়ে যথেষ্টই ওয়াকিবহাল। তিনি জানান, ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য কিষাণ কার্ড চালু করা হয়েছে। যার মাধ্যমে কৃষকরা ঋণ নিতে পারবেন এবং ফেরিওয়ালাদের ও আদিবাসীদের জন্যও ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

Advertisement

দরিদ্র মানুষের দুর্দশা কমাতে কেন্দ্রীয় সরকার যে অতিরিক্ত খাদ্য শস্য দিচ্ছে তা দেওয়া বন্ধ হবে না। কিন্তু যাদের রেশন কার্ড নেই তাদের পরিবার পিছু পাঁচ কেজি চাল বা গম এবং পাঁচ কেজি ছােলা দেওয়া হবে। এতে প্রায় আট কোটি মানুষ উপকৃত হবে এবং এজন্য সরকার ৩৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। পরবর্তী তিন মাস পর্যন্ত এই সুবিধা দেওয়া হবে।

Advertisement

অর্থমন্ত্রী জানান, এক জাতি এক রেশন কার্ড-এর মাধ্যমে যে কোনও ব্যক্তি যে কোনও স্থানেই তার রেশন পাবেন। ইতিমধ্যেই ৮৩ শতাংশ এমন রেশন কার্ড দেওয়া হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। এমন রেশন কার্ড দেওয়ার কাজ ২০২১ সালের মার্চ মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে বলে তিনি জানান।

প্রধানমন্ত্রী আবাস যােজনা প্রকল্পে ভাড়ায় থাকার ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানগুলিকে তাদের আবাসনে ন্যায্যভাড়ায় থাকার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার সকল রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিযায়ী শ্রমিক, মজুর এবং দরিদ্র মানুষের জন্য সাধ্যমূল্যের আবাসনের প্রকল্প রূপায়ণের পরিকল্পনা করেছে। এই সকল আবাসন সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে তৈরি করা হবে।

যে ব্যক্তির আয় ৬ লাখ টাকা থেকে ১৮ লাখ টাকার মধ্যে তাদের ভর্তুকি মূল্যে আবাসনে থাকার ব্যবস্থা করতে ৭০ হাজার কোটি টাকার হাউসিং প্রকল্প রূপায়ণ করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের মেয়াদ বর্তমানে ২০২০-২০২১ মার্চ পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পে ইতিমধ্যেই ৩.৩ কোটি মানুষ উপকৃত হবেন। এক বছরের মেয়াদ বৃদ্ধির ফলে অতিরিক্ত ২.৫ লাখ পরিবার উপকৃত হবেন এবং আবাসনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চাহিদার সৃষ্টি হবে বলে অর্থমন্ত্রী দাবি করেছেন।

ফেরিওয়ালাদের জন্য অর্থমন্ত্রী ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ ঋণ সুবিধার কথা ঘােষণা করেছেন। এই সুবিধা একমাসের মধ্যেই চালু করা হবে। এই প্রকল্পে একজন ফেরিওয়ালা দশ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন। এর ফলে পঞ্চাশ লাখ ফেরিওয়ালা উপকৃত হবেন বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। আদিবাসী ক্ষেত্রে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য ৬০০ কোটি টাকার এক তহবিল গঠন করা হয়েছে।

ব্যবসার জন্য যারা পঞ্চাশ হাজার টাকার ঋণ নেবেন তাদের কেবল দুই শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। এর ফলে মুদ্রা শিশু ক্যাটাগরি অধীনে আনুমানিক তিন কোটি মানুষ উপকৃত হবেন। এদের জন্য সামগ্রিকভাবে দেড় হাজার কোটি টাকার সুবিধা দেওয়া হবে। কিষাণ ক্রেডিট কার্ড প্রকল্পের অধীনে পশুপালন ও মৎস্যচাষীদেরও সুবিধা দেওয়া হবে। এই প্রকল্পে অতিরিক্ত ২.৫ কোটি কৃষক সুবিধা পাবেন। এজন্য ২ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

নাবার্ডের অধীনে বর্তমান ৯০ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্তে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের জন্য অতিরিক্ত ত্রিশ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়েছে। এর ফলে কেবল রবি মরসুমে তিন কোটি কৃষক উপকৃত হবেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের লকডাউনের ফলে রাতারাতি আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং থাকা খাওয়ার সংস্থান অনিশ্চিত হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের চরম উদাসীনতার জন্য বিরােধীরা সমালােচনায় মুখর ছিলেন।

এর মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস, ডিএমকে, বামদল সকলেই কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের নিন্দা করেছেন। বিজেপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি ২০ লাখ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘােষণা করে অভিযােগ বন্ধ করার চেষ্টা করেন। অবশ্য এই প্যাকেজের মধ্যে রিজার্ভ ঘােষিত ৫.৬ লাখ কোটি টাকা ও সরকারের ১.৭ লাখ কোটি টাকাও ধরা হয়েছে।

গতকালই অর্থমন্ত্রী এমএসএমইর জন্য প্যাকেজের মধ্যে থেকে ৫.৯৪ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘঘাষণা করেন। তবে পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরত পাঠানাের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারি ব্যবস্থা যে খুব একটা সুবিধাজনক হয়নি তা দলে দলে কচিকাচাদের নিয়ে রেল লাইন বা সড়ক পথে শ্রমিকদের হেঁটে বাড়ি ফেরার দৃশ্যই বলে দিয়েছে।

Advertisement