দেশজুড়ে মোদি ম্যাজিক

সম্মিলিত প্রতিরােধেও আটকানাে গেল না দেশে মােদি ঝড়। এই ঝড়ে যেমন সারা দেশজুড়ে বিধ্বস্ত বিরােধীরা, তেমনই মােদি ঝড় বড় ধাক্কা দিয়ে গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শক্ত দুর্গকেও।

Written by Sheikh Sadar Naim New Delhi | May 24, 2019 1:04 pm

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Photo: Bidesh Manna/IANS)

সম্মিলিত প্রতিরােধেও আটকানাে গেল না দেশে মোদি ঝড়। এই ঝড়ে যেমন সারা দেশজুড়ে বিধ্বস্ত বিরােধীরা, তেমনই মোদি ঝড় বড় ধাক্কা দিয়ে গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শক্ত দুর্গকেও। এই প্রথম টানা দ্বিতীয়বার কোনও সরকার দিল্লির মসনদ দখল করতে চলেছে পূর্ণ বহুমত নিয়ে।

আগামী দিনে হয়তাে মোদি ঝড়ের কারণ ও উৎপত্তি নিয়ে চুলচেরা বিচার চলবে, কিন্তু বুথ ফেরত সমীক্ষা প্রকাশের আগে ২০১৪ সালের মতাে মোদি ঝড়ের পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন দেশের তাবড় তাবড় সেফোলজিস্ট এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বৃহস্পতিবার ভােটগণনার পর থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে মােটামুটি পরিষ্কার হয়ে যায় যে, দ্বিতীয়বারও সরকার গঠন করতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদি। রাফায়েল থেকে ন্যায় কোনও কৌশলই যে দেশের মানুষের মোদির উপর অবিচল আস্থাকে টলাতে পারেনি, সেটা বােঝা গেল এদিন।

এদিন আরও বােঝা গেল ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগানও বুমেরাং হয়ে তেড়ে গেছে খােদ বিরােধীদের দিকে, জয়ের শেষ হাসি হেসেছেন নরেন্দ্র মোদি। বিজেপি তথা এনডিএ’র এই বিশাল এবং ঐতিহাসিক জয়ের পর বিরােধী দলগুলির তােলা ইভিএম নিয়ে কোনও রকমের ওজর আর যে ধােপে টিকবে না, সেটা বলাই বাহুল্য।

নানা রকম কারণে ভােটগণনা এদিন রাত পর্যন্ত শেষ নাও হতে পারে কিংবা বেশি রাতে ভােট গণনা সম্পূর্ণ হতে পারে— একথা আগেই জানিয়ে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। নিজের শক্তিতে বিজেপি এবার ২০১৪ সালের তুলনায় আরও বেশি আসন পেতে চলেছে মোদি-অমিত শাহের দল।

এই বিশাল জয়ের খবর পেয়েই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইট করে বলেছেন, এক সঙ্গেই আমরা উন্নতি করব, এক সঙ্গেই আমাদের শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে, ‘এক সঙ্গেই আমরা সবাইকে নিয়ে শক্তিশালী ভারত গড়ব। ভারতের আবার জয় হল। বিজয় ভারত।’

বিজেপি এদিন তাদের গােবলয়ের মুখ্য রাজ্যগুলি যে ধরে রাখতে পেরেছে এটাও মোদির এক বিশাল প্রাপ্তি। গুজরাত, মহারাষ্ট্র তাে বটেই, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশকেও প্রায় কংগ্রেসমুক্ত করে দিতে পেরেছে লােকসভা আসন জয়ের নিরিখে, যেখানে বিগত পাঁচ মাস আগে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছিল রাহুল গান্ধির দল।

তেমনই কর্ণাটকে জনতা দলের (সেকুলার) সঙ্গে কংগ্রেসের জোট সরকার থাকা সত্ত্বেও বিজেপি অধিকাংশ আসনে জয়ী হয়েছে।  মােট ৫৪২টি আসনে বিজেপি তথা এনডিএ পেয়েছে ৩৫৩টি আসন। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ টুইট করে বলেছেন, ‘এই জয় ভারতের জয়। এই জয় যুবকদের আশা-আকাঙক্ষাকর জয়। এই জয় গরিব ও কৃষকদের জয়। এই বিশাল জয় সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উন্নয়নমূলক কাজের জন্য।’

যে রাজ্যগুলিতে বিজেপি প্রভূত ভােট পেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে, সেগুলি হল গুজরাত, দিল্লি, বিহার, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং অসম। যে দুটি রাজ্য যেখানে পাঁচ বছর আগে বিজেপিকে কষ্টে খুঁজে পাওয়া যেত যেমন পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশা, সেখানেও একলাফে অনক দূর এগিয়ে যেতে পেরেছে বিজেপি।

পশ্চিমবঙ্গে তাে তৃণমূলের ঘাড়ের উপর নিশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে গেরুয়া বাহিনী। উত্তরপ্রদেশে মায়াবতী-মুলায়েমের জোটের ফলে প্রায় সব রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলতে শুরু করেছিলেন বিজেপি দেশের সবচেয়ে বড় রাজ্য, যেখান থেকে সংসদে ৮০ জন সাংসদ নির্বাচিত হয়ে আসেন, সেখানে বড়সড় ধাক্কা খাবে। কিন্তু মোদি ঝড়ে উড়ে গেল উত্তরপ্রদেশে সেই সম্ভাবনাও।

মোদির প্রভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেল উত্তরপ্রদেশের মায়া-মুলায়েমের জোটের জাত-বর্ণভিত্তিক সমীকরণও। অপরদিকে, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের শুধু সােনিয়া গান্ধি জিততে পেরেছেন রায়বেরিলি থেকে। আমেথির মতাে গান্ধি পরিবারের পরম্পরাগত আসন আমেথিতে এবার বিজেপির স্মৃতি ইরানির কাছে পরাজিত হতে হয়েছে কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধিকে।

তবে ‘মোদি লহর’ প্রভাব ফেলতে পারেনি কেরল, তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্রপ্রদেশে। অন্ধ্রপ্রদেশে লােকসভা আসন প্রাপ্তির নিরিখে এগিয়ে ওয়াইএসআর কংগ্রেস, যারা আবার বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতাচ্যুত করেছে মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুকে, যিনি বিরােধী জোট গড়ার মুখ্য কারিগর হয়ে উঠেছিলেন।

পশ্চিমবঙ্গেও নিজের দুর্গ আগলে জোর লড়াই চালিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কিন্তু শেষমেশ অনেকটাই জমি কেড়ে নিল মোদির দল। গত পাঁচ বছরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর প্রশাসনকে কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করেছেন, শক্তপােক্ত বিদেশনীতি রূপায়ণ করতে সক্ষম হয়েছেন এবং হাই প্রােফাইল প্রচার চালিয়েছেন স্বচ্ছ ভারত গড়ার লক্ষ্যে বলে দাবি বিজেপির, যার ফলে এই জয় সম্ভব হয়েছে।

কিন্তু বিরােধীরা মোদির বিরুদ্ধে নিরলস আক্রমণ করে গেছেন তাঁর আর্থিক নীতি, কর্মসংস্থানের অভাব, কৃষক সমাজের সমস্যা এবং দেশে ঘৃণার রাজনীতির প্রসারের বিরুদ্ধে। কিন্তু মানুষ শেষে বেছে নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদিকেই।

এই বিশাল জয়ের পর মোদি তাঁর মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন শুক্রবার। বিজেপি সূত্রের খবর, আগামী রবিবার সরকার গঠনের দাবি পেশ করবেন রাষ্ট্রপতি ভবনে মোদি। তাঁর এই বিশাল জয়ের পর তাঁকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন বিশ্বের নেতারাও, যেমন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, চিনের প্রেসিডেন্ট জি জিন পিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানইয়াহু, জাপানের প্রধানমন্ত্রী অ্যাবে সিনজো, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসরাফ গণি, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শৰ্মা ওলি প্রমুখ।

কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধিও অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মোদিকে। মোদিকে তাঁর এই জয়ের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ভারতের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি ও বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা এল কে আদবানি।