• facebook
  • twitter
Monday, 4 August, 2025

ভোটমুখী বিহারে মোদী ফের ‘স্বপ্নের’ ফেরিওয়ালা!

আবহাওয়ার পূর্বাভাসের ছলে কটাক্ষ লালুর

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

মোদী মানেই একঝাঁক স্বপ্ন! হিন্দি সিনেমার মতো ঝাল, ঝাল ‘ডায়ালগ’! সব কিছু যেন তাঁর বাঁ হাতের খেল মাত্র। তাই বিধাসভা ভোট আসতেই ফের বিহারে গিয়ে ‘স্বপ্ন’ ফেরি করতে ছাড়লেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। চলতি বছরের শেষেই বিহারে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগেই বিহার সফরে গিয়ে সেই নির্বাচনী ডঙ্কা বাজিয়ে দিয়ে এলেন। তাঁর দীর্ঘ বক্তৃতায় আদ্যোপান্ত উন্নয়ন নিয়েই সওয়াল করলেন তিনি। আক্রমণ করলেন বিরোধীদেরও।

শুক্রবার সিওয়ানে গিয়েছিলেন মোদী। সেখানে লোকোমোটিভ কারখানা থেকে উৎপাদিত প্রথম ইঞ্জিনের উদ্বোধন করেন তিনি। বিহারে দাঁড়িয়ে মোদী আশ্বাস দেন, ভারতের উন্নতিতে বিহার বড় ভূমিকা পালন করবে। তিনি বিহারে তিন কোটি পাকা বাড়ি তৈরির আশ্বাস দিয়েছেন। বক্তৃতার সময় তিনি বলেন, ‘মোদী শান্তিতে ঘুমোবে না, আপনাদের সবার জন্য কাজ করবে। আপনারা সবাই আমার পরিবার।’

মোদী এদিন বিহারে একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। সিওয়ানে লোকোমোটিভ কারখানা থেকে উৎপাদিত প্রথম ইঞ্জিনের উদ্বোধনের পাশাপাশি তিনি ৫৯০০ কোটি টাকার ২৮টি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী বৈশালী-দেওরিয়া রেল প্রকল্পেরও উদ্বোধন করেন।  এইসব প্রকল্প উদ্বোধনের পাশাপাশি তিনি ভোট প্রচারের মতো মোক্ষম সুযোগ হাতছাড়া করেননি। তাই স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে মোদী আরজেডি ও কংগ্রেসকে নিশানা করেন। তাঁর আক্রমণের লক্ষ্য ছিল কংগ্রেস ও আরজেডির নির্বাচনী প্রতীক। এই দুই দলের নাম না তুললেও মোদীর মুখে শোনা গিয়েছে ‘পাঞ্জা’ আর ‘লণ্ঠন’ শব্দবন্ধ। তিনি সিওয়ানের জনসভা থেকে বিরোধীদের তোপ দেগে বলেন, ফের বিহারে ‘জঙ্গলরাজ’ তৈরির চেষ্টা করছে বিরোধীরা। মোদী দাবি করেন, ‘পাঞ্জা ও লণ্ঠনের শাসনে বিহার দারিদ্রের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। এনডিএ বিহারকে উন্নয়নের রাস্তায় ফিরিয়ে এনেছে।’

এদিন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ‘লাইসেন্স রাজ’-এর অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কংগ্রেসের নেতারা বড়লোক হলেও গরিবদের কোনও পরিবর্তন হয়নি। তাঁরা একই অবস্থায় রয়ে গিয়েছেন। তিনি আরজেডি ও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ তুলে দুই দলকে একসারিতে বসিয়েছেন।

এমনিতেই মানব উন্নয়নসূচকের নিরিখে বহুদিন ধরেই পিছিয়ে রয়েছে নীতীশের বিহার। এর সূচক জাতীয় গড়ের থেকেও অনেক নীচে রয়েছে। দারিদ্র, শিক্ষা, মাথাপিছু রোজগারের নিরিখে দেশের অন্য সব রাজ্যের তুলনায় বিহার অনেকটাই পিছিয়ে। বিহারে এখন ক্ষমতায় জেডিইউ-বিজেপি জোট। বারবার শিবির পাল্টে শেষ পর্যন্ত বিজেপির সঙ্গেই ঘর করছে নীতিশ কুমারের জেডিইউ। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বেরোনোর পর কেন্দ্রে এনডিএ সরকার গড়তে বিজেপির অন্যতম ভরসা ছিল বিহারের জেডিইউ এবং তেলঙ্গনার টিডিপি। সেজন্য শুরু থেকেই নীতীশ কুমার এবং চন্দ্রবাবুর মন জয়ের চেষ্টা করেছেন। কেন্দ্রীয় বাজেটেও এই দুই রাজ্যের বিভিন্ন খাতে নজিরবিহীনভাবে বরাদ্দ বাড়িয়েছেন। এ বার সেই উন্নয়নের কথা বলেই বিহারের ভোট প্রচারের সুর বেঁধে দিলেন নরেন্দ্র মোদী। দেশের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা এমনটাই মনে করছেন।

উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই পাঁচ দিনের বিদেশ সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই সফরের শুরুতে তিনি জি-৭ সম্মেলনের বৈঠকে যোগ দেন। সেখানে বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে ১০ ঘন্টায় ১২টি বৈঠক করেন। আর এদিন তাঁর বক্তৃতায় সেই বিদেশ সফরের প্রতিফলন ঘটে। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, অন্য দেশের রাষ্ট্রনেতারা ভারতের উন্নতিকে সমীহর চোখে দেখছেন। ওরা মনে করছেন, ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক সুপার পাওয়ার হয়ে উঠছে। তাঁর আশ্বাস, বিহার এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এদিকে মোদীর এই ভোট প্রচার ধর্মী ভাষণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন আরজেডি-র বর্ষীয়ান নেতা ও বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রাসাদ যাদব। মোদীকে নিশানা করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও সতর্কবার্তা দেওয়ার ছলে লালু রাজ্যবাসীকে বার্তা দেন, ‘মিথ্যার ভারী বৃষ্টি হতে চলেছে, সাবধান।’ সেই সঙ্গে লালু অতীতে বিজেপির ১৫ লক্ষ টাকা, বছরে ২ কোটি চাকরি-সহ নানান মিথ্যা প্রতিশ্রুতির তথ্য তুলে ধরে একটি গানের ভিডিও পোস্ট করেন। যে ভিডিও-তে বিজেপিকে তুলোধোনা করা হয়েছে। পাশাপাশি লালুপুত্র তেজস্বী যাদবের প্রশংসা করেছে আরজেডি।

লালু সামাজিক মাধ্যম এক্স হ্যান্ডলে নাম না করে লেখেন, ‘বিহারবাসীর স্বার্থে আবহাওয়ার পূর্বাভাস… আজ বিহারে মিথ্যা, জুমলা ও বিভ্রান্তির ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। প্রবল বজ্রপাতের সঙ্গে মিথ্যা ও প্রলোভনের প্রতিশ্রুতির শিলাবৃষ্টি পড়ছে। ফলে সকলে সাবধানে থাকুন।’

অন্যদিকে লালুর পক্ষ থেকে ভিডিও পোস্ট করার পাশাপাশি সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একহাত নিয়েছেন তেজস্বী যাদব। তিনি বলেন, যেখানে খুন-ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটে, নীতীশ কুমার সেই সব জায়গা এড়িয়ে চলেন। উনি শুধু মোদিজির মঞ্চে যান।

এদিন তেজস্বী কেন্দ্রের এনডিএ সরকারকে নিশানা করে বলেন, ‘এনডিএ এখন ‘ন্যাশনাল দুলহা (জামাই) কমিসন’-এ পরিণত হয়েছে। তাঁর কথায় বিহারে এখন জুমলা চলছে। এখানে সরকারি কর্মসূচিতে বিজেপির পতাকা ওড়ে। মোদি সভায় এলে সেখানকার মানুষের খাবারের প্যাকেটের জন্য খরচ হয় ১০০ কোটি টাকা। ভিড় বাড়ানোর জন্য ৫০০ টাকা করে দেওয়া হয়। সম্রাট চৌধুরীর ৫ বারের হেলিকপ্টার সফরেরও একটা বড় খরচ রয়েছে।’