শুক্রবার ভোটমুখী বিহার ও কলকাতার একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন ছিল প্রধানমন্ত্রীর। এদিনের সফরে প্রথমে বিহারের সমাবেশে গিয়ে দাগি মন্ত্রীদের বরখাস্তের বিলকে সমর্থন করে মোদী বলেন, ‘যদি কোনও সরকারি কর্মচারীকে ৫০ ঘন্টার জন্য কারারুদ্ধ করা হয়, তাহলে তিনি স্বাভাবিকভাবেই চাকরি থেকে বরখাস্ত হন, সে তিনি চালক, কেরানি বা পিওন যাই হোন না কেন। কিন্তু একজন মুখ্যমন্ত্রী, একজন মন্ত্রী, এমনকি একজন প্রধানমন্ত্রী যদি জেলে থাকেন, তাহলে কী তাঁর সরকারে থাকা উচিত?’ তিনি বলেন, দেশের এই আইন এতদিন জেলে যাওয়া রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষেত্রে খাটত না, এটা বিরাট ভুল।
সম্প্রতি বাদল অধিবেশনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভায় ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল পেশ করেছেন। বিহারের জনসভা থেকে এবার বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারি কর্মচারীদের উদারহণ দিয়ে তিনি প্রশ্ন তুললেন, কেন জেলে থাকলে মন্ত্রিত্ব যাবে না? জেল থেকে সরকার চালানোর নজিরও এদিন তুলে ধরেন তিনি। তবে কারও নাম উল্লেখ করেননি।
Advertisement
বিহারে সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে শুক্রবার গয়ায় প্রধানমন্ত্রীর একটি জনসভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানেই ভাষণ দিতে গিয়ে নতুন বিল নিয়ে মন্তব্য করেছেন মোদী। বিল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী পদের সঙ্গে সরকারি অফিসের কেরানি-পিওনদের তুলনা টানেন মোদী। তাঁর এই মন্তব্যের নিশানা ছিল বিধানসভা ভোটের মুখে বিহারের প্রাক্তন শাসক জোট রাষ্ট্রীয় জনতা দল এবং কংগ্রেস।
Advertisement
অতীতের উদাহরণ দিয়ে মোদী বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমরা দেখেছি, জেলে বসে ফাইলে সই করা হচ্ছিল। সরকারের নির্দেশিকা জেল থেকে জারি করা হচ্ছিল। নেতারাই যদি এমন আচরণ করেন, তবে আমরা কীভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ব? এনডিএ সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইন এনেছে। এই আইনের আওতায় প্রধানমন্ত্রীও আছেন।’ মোদীর প্রশ্ন, ‘কলঙ্কিত মন্ত্রীদের কি তাঁদের পদে বহাল থাকা উচিত? জনগণ আশা করেন, তাঁদের নেতারা নৈতিক সততা বজায় রাখবেন।’
দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলায় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করেছিল ই়ডি। কিন্তু তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা না দিয়ে জেল থেকেই সরকার পরিচালনা করেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মাস ছয় পর জামিন পান কেজরি। তার পর তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দায়িত্ব তুলে দেন অতীশীর হাতে। কারও নাম না করেও প্রধানমন্ত্রী কেজরিওয়ালকেই নিশানা করেছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
বিরোধীদের অভিযোগ, এই বিল আইনে পরিণত হলে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন সরকার তা রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগাবে। ইডি, সিবিআইয়ের মতো সংস্থাগুলিকেও কাজে লাগানো আরও সহজ হবে। বুধবার বিরোধীরা আইনের খসড়া প্রতিলিপি ছিঁড়ে ফেলেন এবং লোকসভার ওয়েলে এসে তীব্র প্রতিবাদ জানান। বলা হয় যে, বিলগুলি সাংবিধানিক নীতি লঙ্ঘন করেছে, রাজনৈতিক কারণে অপব্যবহারের জন্য এবং দেশকে একটি পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। বুধবার লোকসভায় এই বিল পেশের সময় প্রবল বিরোধিতার জেরে লোকসভার অধিবেশন মুলতুবি করে দিতে হয়। এমনকি, বিলের কাগজ ছিঁড়ে শাহের দিকে ছো়ঁড়া হয়। পর্যবেক্ষকদের মতে, এই বিল আইনে পরিণত হওয়া সহজ নয়। কারণ আইনে পরিণত করতে গেলে সংসদের উভয় কক্ষের দুই তৃতীয়াংশের সম্মতি প্রয়োজন হয়।
Advertisement



