• facebook
  • twitter
Monday, 28 July, 2025

অবসরে পাঠানো হচ্ছে মিগ-২১ যুদ্ধবিমানকে, সেপ্টেম্বরে শেষবার উড়বে চণ্ডীগড় থেকে

তৎকালীন বায়ুসেনাপ্রধান বিআর চৌধরি জানিয়েছিলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে মিগ-২১-এর ব্যবহার বন্ধ করে তার পরিবর্তে এলসিএ মার্ক-ওয়ানএ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করা হবে।

ফাইল চিত্র

দীর্ঘ ৬২ বছর পর অবসর নিতে চলেছে মিগ-২১ বাইসন যুদ্ধবিমান। আগামী সেপ্টেম্বরে চণ্ডীগড়ের বায়ুসেনাঘাঁটি থেকে শেষ বারের মতো উড়বে বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই বিমানটি। তারপর আর কোনও কাজে এই যুদ্ধ বিমানটিকে ব্যবহার করা হবে না।

জানা গিয়েছে, ১৯৬৩ সালে ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে আসে মিগ-২১ যুদ্ধবিমান। ভারত-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুসারে, মস্কো এই যুদ্ধবিমান তৈরির কৌশল এবং স্থানীয়ভাবে তৈরির অনুমোদনও দিল্লির হাতে তুলে দেয়। ওই বছরেই বিমানটির পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হয়। তারপর থেকে এই বিমানটি প্রতিটি যুদ্ধ বা সংঘাতে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হয়ে ওঠে বায়ুসেনার কাছে। ষাটের দশকে ভারতের হাতে এসেছে প্রায় ১২০০-রও বেশি মিগ-২১ যুদ্ধবিমান। এই যুদ্ধবিমান তখন খ্যাতির মধ্যগগনে। বায়ুসেনার ১৯টি স্কোয়াড্রন ৪০০টি মিগ-২১ ব্যবহার করত। ১৯৬৫, ১৯৭১ ভারত-পাক যুদ্ধ এবং ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে কার্গিল যুদ্ধ, এমনকি বালাকোট অভিযান এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ এই যুদ্ধ বিমান সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে।

কিন্তু ১৯৬০ এবং সত্তরের দশকে বিভিন্ন যুদ্ধে অনেক সাফল্য দেখালেও পরবর্তী সময়ে মিগ-২১ যুদ্ধবিমান বহু দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়। জানা গিয়েছে, ১৯৭০ সালের পর এই যুদ্ধবিমান বিভিন্ন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ১৭০ জন পাইলট এবং ৪০জন সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, কেবল ২০১০ আর ২০১৩ সালের মধ্যে ১৩ বার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে মিগ-২১ যুদ্ধবিমান। এরপরই এই যুদ্ধবিমানকে ‘উড়ন্ত কফিন’ হিসেবে অভিহিত করা শুরু হয়ে যায়। ২০০১ সালে বায়ুসেনার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট অভিজিৎ গ্যাডগিলের মৃত্যু হয় মিগ-২১ যুদ্ধ বিমান ভেঙে। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। ২০০৬ সালে আমির খান, সোহা আলি খান আর মাধবন অভিনীত বলিউডের বিখ্যাত ‘রং দে বসন্তী’ সিনেমাটি নির্মিত হয় এই ঘটনাকে ভিত্তি করেই। ছবিতে অভিজিতের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন আর মাধবন।

অন্যদিকে, ২০১৯ সালে মিগ-২১ বাইসন গোত্রের যুদ্ধবিমানকে কেন্দ্র করে ঘটে চাঞ্চল্যকর ঘটনা। একটি সামরিক মহড়ার সময় এই বিমানকে গুলি করে নামায় পাকিস্তানের একটি যুদ্ধবিমান। আপৎকালীন প্যারাস্যুটে পাকিস্তান সীমান্তে নামার ফলে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বায়ুসেনার তৎকালীন উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। কিন্তু তাঁকে আটক করে পাকিস্তান। পরে অবশ্য ভারতের কূটনৈতিক তৎপরতায় তাঁকে মুক্তি দেয়।

এমতাবস্থায় ২০২২ সালেই বায়ুসেনার পক্ষ থেকে আগামী তিন বছরে ধাপে ধাপে এই যুদ্ধবিমানের ব্যবহার কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ২০২৪ সালের একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ভারত মাত্র ৪০টি মিগ-২১ ব্যবহার করছে। তৎকালীন বায়ুসেনাপ্রধান বিআর চৌধরি জানিয়েছিলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে মিগ-২১-এর ব্যবহার বন্ধ করে তার পরিবর্তে এলসিএ মার্ক-ওয়ানএ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করা হবে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী সেপ্টেম্বরেই মিগকে বিদায় জানানো হবে। এমনটাই মনে করা হচ্ছে।