• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

বিহারে ভোটার তালিকা ঘিরে বিতর্ক, সুপ্রিম কোর্টে মহুয়া, সুর নরম কমিশনের

বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধন বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নতুন নির্দেশিকার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধন বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নতুন নির্দেশিকার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। নির্বাচন কমিশনের সেই নির্দেশ বাতিলের আবেদন জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি বাংলা সহ অন্যান্য রাজ্যের ক্ষেত্রে কমিশন যাতে এরকম কোনও নির্দেশ দিতে না পারে সেই আবেদনও জানিয়েছেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ। এই আবহে রবিবার কিছুটা নমনীয় হয়েছে নির্বাচন কমিশন। বিহারের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তর থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রয়োজনীয় নথি আপাতত না দিলেও চলবে। এখন শুধু ফর্ম পূরণ করে জমা দিলেও হবে। পরে স্থানীয় স্তরে তদন্তের ভিত্তিতে কার নাম তালিকায় থাকবে আর কার নাম থাকবে না তা ঠিক করা হবে। সংশ্লিষ্ট বুথ স্তরের আধিকারিকরা এই তদন্তের কাজ করবেন। আধিকারিকদের যদি মনে হয় কোনও ভোটার বৈধ তাহলে তাঁর নাম তালিকা থেকে বাদ যাবে না।

চলতি বছরের শেষের দিকে বিহারে বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে। তার আগে গত ২৪ জুন নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে, বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর করা হবে। অর্থাৎ তালিকায় নাম থাকা ভোটারদের নির্দিষ্ট নথি দেখিয়ে ফের নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে। আধার কার্ড বা রেশন কার্ডের মতো নথি দেখালে হবে না। জন্মের শংসাপত্র, বোর্ডের অ্যাডমিট কার্ড ছাড়াও মোট ১১টি নথি গ্রহণযোগ্য হবে। দেশজুড়ে আধার জালিয়াতির জেরেই এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে বলে যুক্তি দেখিয়েছে কমিশন। তবে বিরোধীদের অভিযোগ, এভাবে ভোটার তালিকা সংশোধন করা হলে বহু মানুষ ভোটাধিকার হারাবে। কারণ অনেক ভোটারের কাছেই নির্ধারিত ১১টি নথির মধ্যে কোনওটিই নেই। সেগুলি জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে অনেককে। জানা গিয়েছে, তালিকাভুক্ত ভোটার বা নতুন আবেদনকারীদের একটি ফর্ম দেবেন বুথ স্তরের অফিসাররা। সেই ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে হবে। পাশাপাশি দিতে হবে ১১টি নথির যে কোনও একটি। কিন্তু এই নিয়ে বিতর্কের আবহে কিছুটা নমনীয় হয়েছে নির্বাচন কমিশন।

Advertisement

কমিশনের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে বেশ কয়েকটি মামলা রুজু হয়েছে। শনিবার শীর্ষ আদালতে মামলা দায়ের করেছে বেসরকারি সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস’। রবিবার তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্র এই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা রিট পিটিশনে মহুয়ার বক্তব্য, ‘কমিশনের এই নির্দেশ ভারতীয় সংবিধানের ১৪, ১৯(১), ২১, ৩২৫, ৩২৬ ধারা, জনপ্রতিনিধি আইন এবং ভোটার নিবন্ধনের নিয়ম লঙ্ঘন করছে। এই নির্দেশ বাতিল করা না হলে অনেক মানুষ ভোটাধিকার হারাবেন।’ রিট পিটিশনের নথি এক্স হ্যান্ডলে শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনের এসআইআর-এর নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে সবেমাত্র সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করলাম। বাংলা-সহ অন্যান্য রাজ্যের ক্ষেত্রে যাতে কমিশন এই রকম নির্দেশ দিতে না পারে, তার জন্য স্থগিতাদেশও চেয়েছি।’ তিনি আরও জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের এই ধরনের নির্দেশ দেশে প্রথম। ভোটার তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও ভোটারদের নিজেদের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে বলা হচ্ছে। এমনকী তাঁদের বাবা–মায়েরও নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হচ্ছে। আর প্রমাণ করতে না পারলেই ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাবে নাম।

Advertisement

ভোটার তালিকার সংশোধন সংক্রান্ত ফর্ম জমা দেওয়ার শেষ দিন ২৬ জুলাই। অর্থাৎ হাতে আর মাত্র দুই সপ্তাহ সময়। এত কম সময়ে একজন বিএলও-র উপরে হাজারেরও বেশি ফর্ম যাচাইয়ের দায়িত্ব এসে পড়ছে। বেশিরভাগেরই নথি নেই। তাই এই অল্প সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা প্রায় অসম্ভব। অন্যদিকে প্রয়োজনীয় নথি জোগাড় করার সময়ও পাচ্ছেন না ভোটাররা। এই আবহে জেলাশাসকদের চিঠি দিয়ে কমিশন জানিয়েছে, আপাতত নথি ছাড়াই ফর্ম গ্রহণ করা যাবে। পরে বিএলও ড্যাশবোর্ডে নথি আপলোড করতে বলা হবে। যদিও এই ড্যাশবোর্ডের কাজ এখনও চলছে।

Advertisement