নামেই ‘দুর্নীতি দমন বিভাগ’। তাঁদের বার্ষিক বাজেট এবার আতশকাচের তলায়। বিলাসবহুল মহার্ঘ বিএমডব্লু গাড়ির আবেদন জানিয়েছেন দেশের দুর্নীতি দমন বিভাগ লোকপালের আধিকারিকরা। গাড়ির মূল্য রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো। সম্প্রতি লোকপালের আধিকারিক কর্তৃক প্রকাশিত টেন্ডারে দেখা গিয়েছে, ৭ জন আধিকারিক ৭০ লক্ষ টাকা মূল্যের একেকটি গাড়ির আবেদন জানিয়েছেন। ওই ৭ জনের মধ্যে রয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অজয় মানিকরাও খানউইলকরও। তিনিই সংস্থার চেয়ারম্যান। সেই সঙ্গে এও জানানো হয়েছে, গাড়িগুলি নিয়ে বিলম্ব না করে দ্রুত তা সরবরাহ করতে হবে। সময়সীমা বেঁধে দিয়ে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, দু’সপ্তাহের মধ্যে গাড়িগুলি দিতে হবে। কিন্তু কোনোভাবেই ৩০ দিনের বেশি দেরি করা যাবে না বলেও উল্লেখ টেন্ডারে।
এই ঘটনায় নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে দুর্নীতি দমনকারী সংস্থার আধিকারিকদের জন্য কেন এত বিলাসবহুল গাড়ির প্রয়োজন? এই ইস্যুতেই বুধবার এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জয়রাম রমেশ বলেন, ‘লোকপাল আর লোকপাল নেই। এটি শোকপাল বা শকপালে পরিণত হয়েছে। আন্না হাজারে, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, ‘ইন্ডিয়া এগেনস্ট কোরাপশন’ এবং ‘আরএসএস’ ২০১২-১৩ সালে এই লোকপালের দাবিতে প্রচুর প্রচার চালিয়েছিল। কিন্তু সংস্থা প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর এর হাল দেখুন। এঁরা এতদিনে কী তদন্ত করেছে? কতজনকে গ্রেপ্তার করেছে?’
Advertisement
লোকপালের আধিকারিকদের বিঁধে কটাক্ষ করেছে বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যসভার দলীয় সাংসদ সাকেত গোখলের আক্রমণ, ‘লোকপালের বিলাসিতা।’ সমাজমাধ্যমে তাঁর পোস্টটি রিপোস্ট করে সহমত জ্ঞাপন করেছেন সাংসদ তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকপালের বার্ষিক বাজেটের খতিয়ান তুলে সাকেত লিখেছেন, ‘লোকপালের বিলাসিতা’। ভারতের লোকপালের বার্ষিক বাজেট ৪৪.৩২ কোটি। এখন লোকপাল প্রায় ৫ কোটি টাকায় ৭টি বিলাসবহুল বিএমডব্লিউ গাড়ি কিনছে সব সদস্যদের জন্য। অর্থাৎ, পুরো বার্ষিক বাজেটের প্রায় ১০% শুধু গাড়ির জন্য ব্যয় হচ্ছে।’ তাঁর সংযোজন, ‘লোকপাল তো দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা হওয়ার কথা। তাহলে দুর্নীতিগ্রস্ত লোকপালের বিরুদ্ধে কে তদন্ত করবে?’ সাকেতের এই পোস্টটি নিজের এক্স হ্যান্ডলে শেয়ার করেছেন অভিষেক।
Advertisement
তণমূলের রাজ্যসভার আরেক দলীয় সাংসদ সুস্মিতা দেব কেন্দ্র ও লোকপালকে বিঁধে বলেছেন, ‘এটি লজ্জাজনক! যে সংস্থা দুর্নীতি দমন করতে গঠিত হয়েছিল, উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিকদেরও আতশকাচের নিচে রাখতে যেই সংস্থা দায়বদ্ধ, তাঁদের এহেন আচরণ সমাজে কী বার্তা দিচ্ছে? তাঁদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলবে কে? এটি গণতন্ত্রের লজ্জা।’ উল্লেখ্য, ১৬ অক্টোবর এক পাবলিক টেন্ডার আহ্বানের মধ্য দিয়ে লোকপাল নিজেদের জন্য ৭টি বিলাসবহুল গাড়ি কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। যে সংস্থা সরকারি ব্যয়ের উপর নৈতিক নজরদারি করার দায়িত্বে রয়েছে, সেই সংস্থার এই বিলাসবহুল বাহন কেনার সিদ্ধান্ত ও প্রয়োজন নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিভিন্ন মহল।
Advertisement



