• facebook
  • twitter
Tuesday, 29 July, 2025

চিনকে অনুসরণ করে ভারতের পক্ষে আমেরিকার সঙ্গে দ্রুত বাণিজ্যচুক্তি করা সম্ভব নয়

ফেব্রুয়ারিতে পরস্পরের উপরে শুল্ক বাড়িয়ে বাণিজ্যে প্রাচীর তোলার খেলায় নেমেছিল ট্রাম্প ও শি জিনপিং। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পরেই শেষে দু’দেশের মধ্যে রফা হয়ে যায়।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

চিনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সেরে ফেলার পর আশাবাদী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই পন্থা অনুসরণ করে ভারতের সঙ্গেও দ্রুত বাণিজ্য চুক্তি সেরে ফেলতে চান তিনি। কিন্তু ভারতের পক্ষে চিনের পদাঙ্ক অনুসরণ করা সম্ভব নয়। সেই পথে রয়েছে অনেকগুলো অন্তরায়। কূটনৈতিক এবং বণিকমহলের একাংশের মতে, চিনের মতো আমেরিকার সঙ্গে এতো দ্রুত ঐক্যমত হওয়া সম্ভব নয় ভারতের পক্ষে। যদিও শুক্রবার ভারতের প্রতিনিধিদল বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য আমেরিকায় পৌঁছে গিয়েছে।

গত এপ্রিলে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স ভারতে এসেই ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে বলেছিলেন, ‘২০৩০ সালে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৫০ হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে চুক্তি করব আমরা।’ এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা সবে মাত্র চিনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করলাম। সবার সঙ্গে আমরা চুক্তি করব না। তবে কিছু দারুণ চুক্তি হবে। যেমন পরেরটাই হয়তো হবে ভারতের সঙ্গে। খুব বড় চুক্তি হবে সেটা।’ ট্রাম্প আশা প্রকাশ করে বলেন, দুই দেশের বাণিজ্যচুক্তি হলে ভারত তার বাজার খুলে দেবে আমেরিকার জন্য। যদিও ট্রাম্প সম্ভাব্য সেই চুক্তির রূপরেখা সম্পর্কে আগাম কিছু জানাননি।

প্রসঙ্গত এই মুহূর্তে ভারত ও আমেরিকার বাণিজ্যের অঙ্ক প্রায় ১৯ হাজার ১০০ কোটি ডলারের মতো। নতুন করে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তি কার্যকর হলে সেই অঙ্ক আরও অনেকটা বেড়ে যাবে। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমেরিকা সফরের সময়ে ট্রাম্প এবং ভান্স দু’জনেই দ্রুত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যচুক্তির বার্তা দিয়েছিলেন। যদিও পরে ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে শুল্কযুদ্ধ ঘোষণা পরিস্থিতির অনেক পরিবর্তন ঘটে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট পণ্য আমদানির উপর বাড়তি আমদানি শুল্ক ধার্য করেন। সেই তালিকা থেকে বাদ পড়েনি ভারত। অন্যান্য দেশের মতো ভারতীয় পণ্যের উপরেও বাড়তি ২৬ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করে ট্রাম্প প্রশাসন। পরে ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত রাখা হলেও ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়ামজাত পণ্যে ২৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক বহাল রাখা হয়।

এর পরেই মোদী সরকার আমেরিকা থেকে আমদানি করা ২৯টি পণ্যের উপর শুল্ক বসানোর জন্য ডব্লিউটিও-র কাছে বার্তা দিয়েছিল। তা নিয়ে দু’দেশের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়, যা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-র কাছে পৌঁছে গিয়েছে। যদিও নতুন বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে ইতিমধ্যেই ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। কিন্তু গাড়ির যন্ত্রাংশ, ইস্পাত এবং কৃষিজাত পণ্যের আমদানি শুল্ক নিয়ে মতবিরোধের কারণে তা নিয়ে চুক্তির রূপরেখা এখনও চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। এমনটাই সরকারি সূত্রের খবর। সম্প্রতি মোদীকে ‘টাফ নেগোশিয়েটর’ বলে দাগিয়ে দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেজন্য মোদীর সঙ্গে দর কষাকষি করা ‘কঠিন’ বলেও উল্লেখ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লির দর কষাকষির ক্ষমতা কতটা রয়েছে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

বাণিজ্য পরিসংখ্যান থেকে জানা গিয়েছে, ভারতের মোট রপ্তানির প্রায় ১৮ শতাংশ যায় আমেরিকার বাজারে। আমদানির ক্ষেত্রে দেশীয় বাজারের ৬.২২ শতাংশ মার্কিন পণ্য আসে ভারতে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য হয় ১০.৭৩ শতাংশ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, বাণিজ্যচুক্তি চূড়ান্ত না হলে ভারতীয় চিংড়ি, কার্পেট, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং সোনার গহনা রপ্তানিকারকরা ধাক্কা খেতে পারেন। যদিও আমেরিকার সামগ্রিক বাণিজ্য পরিসংখ্যানে তার তেমন প্রভাব পড়বে না। তবে মোটরগাড়ি ও তার যন্ত্রাংশ, সয়াবিন এবং ভুট্টার মতো কৃষিপণ্যে ভারত শুল্ক কমালে তার কিছুটা সুফল পাবে ওয়াশিংটন।

এদিকে ভারতের পক্ষে নিজের স্বার্থরক্ষা নিশ্চিত করে বাণিজ্যচুক্তির রূপরেখা স্থির করা কঠিন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকে। এ ক্ষেত্রে চিনের যে সুবিধা ছিল, ভারতের তা নেই। কারণ, চিনের উপর আমেরিকার অনেক নির্ভরতা রয়েছে। বিরল খনিজ থেকে বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের কাঁচামাল– বহু ক্ষেত্রে বেজিংয়ের উপর নির্ভর করতে হয় ওয়াশিংটনকে। ভারতের ক্ষেত্রে সেরকম কোনও পরিস্থিতি নেই। ফলে সাউথ ব্লকের একটি সূত্র শরতের মধ্যে বাণিজ্যচুক্তির প্রথম পর্ব চূড়ান্ত করার বার্তা দিলেও তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারিতে পরস্পরের উপরে শুল্ক বাড়িয়ে বাণিজ্যে প্রাচীর তোলার খেলায় নেমেছিল ট্রাম্প ও শি জিনপিং। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পরেই শেষে দু’দেশের মধ্যে রফা হয়ে যায়। আমেরিকা চিনা পণ্যে শুল্কের হার ১৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করে। আবার চিনও আমেরিকার পণ্যের উপর শুল্কের হার ১২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করে। প্রথম দফায় এই সমঝোতা ৯০ দিন চলবে বলে স্থির হয়। এরপর সেই সময় পেরনোর পরেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করে ফেলল চিন ও আমেরিকা।