• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

করোনা লকডাউনের ফলে ভারতের আর্থিক ক্ষতি ৭-৮ লাখ কোটি টাকা

করোনা মোকাবিলায় ভারতে ২১ দিনের লকডাউনের ফলে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৭-৮ লাখ কোটি টাকায় দাঁড়াবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছে।

দেশজুড়ে লকডাউন। (File Photo: AFP)

করোনা মোকাবিলায় ভারতে ২১ দিনের লকডাউনের ফলে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৭-৮ লাখ কোটি টাকায় দাঁড়াবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছে। লকডাউনের সময়ে ফ্যাক্টরি, দোকানপাট, বিমান চলাচল যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল এবং অন্যান্য সকল যাত্রীবাহী যানবাহনের চলাচল বন্ধ রাখা হয়। ফলে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আকাশচুম্বি হওয়ার সম্ভাবনা।

করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২৫ মার্চ ২১ দিনের লকডাউনের কথা ঘোষণা করেন। কিন্তু অবস্থা আয়ত্বের বাইরে যাতে না চলে যায় সে কারণে লকডাউনের মেয়াদ আরও পনেরো দিন বাড়িয়ে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ৭০ শতাংশ আর্থিক কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। কেবল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ ও পরিষেবাগুলি চালু রয়েছে। কৃষি, খনি, পরিষেবা, কিছু আর্থিক কাজ ও তথ্য প্রযুক্তির কাজকর্ম এবং সাধারণের সম্পর্কযুক্ত পরিষেবা চালু রয়েছে।

Advertisement

ভারতের আর্থিক অবস্থা যে সময় অসুবিধা কাটিয়ে বৃদ্ধির হার বাড়ানোর সম্ভাবনা দেখা দেয় সেসময়েই করোনা সমস্যা এসে হাজির হওয়ায় চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে ভারতীয় অর্থনীতি। সেন্ট্রাম ইনস্টিটিউশনাল রিসার্চের মতে ২০২১ আর্থিক বর্ষে (এপ্রিল ২০২০ থেকে মার্চ ২০২১ পর্যন্ত) বৃদ্ধির হার একসংখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।

Advertisement

অন্য একটি সংস্থার মতে একুশ দিনের লকডাউনের ফলে প্রত্যেক দিন ভারতের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৪.৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (৩৫ হাজার কোটি টাকা) হওয়ার সম্ভাবনা। ফলে জিডিপি ক্ষতির পরিমাণ ৯৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (৭.৫ লাখ কোটি টাকায়) দাঁড়াবে।

করোনা সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ফলে কেবল বিশ্বজুড়ে আর্থিক ক্ষতি শুরু হয় তাই নয়, ভারতেও তার প্রভাব মার্চ মাসের শুরু থেকেই শুরু হয়ে এবং ২৫ মার্চ থেকে সম্পূর্ণভাবে চরম অবস্থার মধ্যে পড়ে।

তবে ১৫ এপ্রিল থেকে নিয়ন্ত্রণ আংশিক প্রত্যাহারের কথা। কিন্তু তাতেও দীর্ঘ সময় বন্ধ হয়ে থাকা আর্থিক কাজকর্ম পুরোদমে চালু হওয়ার ক্ষেত্রে চরম অনিশ্চয়তা দূর হওয়া নির্ভর করছে করোনার সংক্রমণের বাড়া কমার ওপরেই।

লকডাউনের ফলে পরিবহণ, হোটেল, রেস্তোরাঁ ভারতের রুশ দিনের এবং আবাসন ক্ষেত্র সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লকডাউন পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করবেন।

অল ইন্ডিয়া মোটর ট্রান্সপোর্ট কংগ্রেস সেক্রেটারি জেনারেল নবীন গুপ্তা জানিয়েছেন, লকডাউনের প্রথম পনেরো দিনে প্রতিটি লরির লোকসানের পরিমাম প্রতিদিন ২২০০ টাকা। এই সময়ে মোট ক্ষতির পরিমাণ ৩৫,২০০ কোটি টাকা। দেশে ৯০ শতাংশ ট্রাক চলেনি। কেবল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহণকারী ট্রাকগুলিই চালু রয়েছে।

লকডাউন প্রত্যাহারের পর অন্তত ২-৩ মাস লাগবে অবস্থা স্বাভাবিক হতে। কারণ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ব্যতীত অন্যান্য পণ্য বিষয়ে ক্রেতাদের আগ্রহ থাকলেও অর্থের অভাবে চাহিদা থাকবে না বলেই আশঙ্কা।

ন্যাশনাল রিয়েল এস্টেট ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকা বলে জানিয়েছে সংস্থার সভাপতি নিরঞ্জন হিরানন্দানি।

কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্সের তরফে খুচরো ব্যবসায় মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বলে জানানো হয়েছে। ভারতের খুচরো ব্যবসা ক্ষেত্রে ৭০ মিলিয়ন বা সাত কোটি ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় ব্যবসায় সংগঠনে অন্তত ৪৫ কোটি মানুষ নিযুক্ত। এদের মাসিক ব্যবসা লেনদেনের পরিমাণ ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

আন্তজাতিক সংস্থাগুলি ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার প্রত্যাশা মতো হবে না বলে জানিয়েছে। বিশ্বব্যাঙ্ক জানিয়েছে, ২০২০-২১ আর্থিক বর্ষে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার ১.৫ থেকে ২.৮ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। ১৯৯১ আর্থিক সংস্কারের পর বৃদ্ধির হারে এমন নিম্নগতি দেখা গেল।

এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, চলতি আর্থিক বর্যে বৃদ্ধির হার ৪ শতাংশ কম হবে। এস অ্যান্ড পি গ্লোবাল রেটিংসের মতে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার ৩.৫ শতাংশ হবে বলে জানিয়েছে। ফিচ রেটিং জানিয়েছে জিডিপি বৃদ্ধির হার ২ শতাংশের বেশি হবে না। মুডি ইনভেস্ট সার্ভিস জানিয়েছে জিডিপি বৃদ্ধির হার ২.৫ হওয়ার সম্ভাবনা ব্যক্ত করেছে।

Advertisement