৪৬ টাকার বেশি খরচই করতে পারেন না বহু ভারতীয়, জানাল সরকারি সমীক্ষাই

Written by SNS February 26, 2024 4:41 pm

দিল্লি, ২৬ ফেব্রুয়ারি– ভারত তথা এশিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ ধনী ব্যবসায়ী মুকেশ আম্বানীর ছেলের বিয়েতে নাকি বিদেশ থেকে রেহানাও নাঁচতে আসবেন৷ ভারতের এমন কোন তারকা নেই যারা অতিথির তালিকায় নেই৷ অর্থাৎ কোটি-কোটি টাকা ব্যয় হবে এই বিয়েতে৷ সেই ভারতেই নাকি একজন সাধারণ মানুষের তার দৈনিক খরচ হিসেবে ব্যয় করতে পারেন মাত্র ৪৬ টাকা৷ ব্যয়ের মধ্যে খাবার ছাড়াও নিত্যকার প্রয়োজনীয় যাবতীয় জিনিসের দাম ধরা আছে৷ ভাবুন তাহলে!

বিশেষজ্ঞদের মতে, যা থেকে উঠে আসে অনাহার, অর্ধাহার, অপুষ্টির দিকটি৷ ভারত সরকারের সংস্থা ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অফিস (এনএসএসও) তাদের মাসিক মাথাপিছু ভোক্তা ব্যয় সমীক্ষার ২০২২-’২৩-এর রিপোর্টে এই চিত্র তুলে ধরেছে৷ তারা জানিয়েছে, গ্রামীণ ভারতে একজন মানুষের মাসে গড় ব্যয় ক্ষমতা হল ৩৭৭৩ টাকা৷ তবে শহরাঞ্চলে কিন্তু এই খরচের হিবেস প্রায় দ্বিগুণ, ৬৪৫৯ টাকা৷ গ্রামের মানুষের মাসিক মোট গড় খরচের মধ্যে খাবার বাবদ ব্যয়ের অঙ্ক হল মাত্র ১৭৫০ টাকা৷ তারা গডে় ২০২৩ টাকা খরচ করেন৷ অন্যদিকে, শহরের মানুষ খাবারের জন্য মাথাপিছু মাসে ব্যয় করেন গডে় ২৫৩০ টাকা বাকি টাকা ব্যয় হয় বিদু্যৎ, পানীয় জলের বিল, যাতায়াত খরচ, বাডি়ভাড়া, টিফিন-সহ হাত খরচ, গৃহস্থালীর নানা সামগ্রী ইত্যাদি খাতে৷

সমীক্ষায় দেখা যায়, বহু মানুষ বহু নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ছাড়াই দিন চালাতে বাধ্য হচ্ছেন৷ এনএসএসও এই সমীক্ষা চালায় ২০২২-এর অগাস্ট থেকে পরের বছরের জুন পর্যন্ত৷ সারা দেশে দু লাখ ৬০ হাজার পরিবারের প্রায় ২৬ লাখ মানুষের সঙ্গে কথা বলে রিপোর্টটি তৈরি করেছে তারা৷

সরকারি সংস্থার সর্বশেষ রিপোর্টেও দেখা যাচ্ছে ধনী-দরিদ্রের খরচের মধ্যে বিস্তর ফারাক৷ গ্রামে ও শহরে বহু মানুষ দিনে গডে় সাডে় দশ হাজার এবং ২১ হাজার টাকার কাছাকাছি ব্যয় করে থাকেন৷

তবে গোটা ভারতের নিরিখে এই ক্ষেত্রে সামান্য পিছিয়ে আছে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওডিশা-সহ দেশের নয়টি রাজ্য৷ বাংলায় গ্রাম ও শহরে মাসিক গড় খরচের অঙ্ক হল যথাক্রমে ৩২৩৯ টাকা এবং ৫২৬৭ টাকা৷ এনএসএসও তাদের রিপোর্টে আরও জানিয়েছে, গ্রামীণ ভারতে গড় খরচের সারণির শেষের পাঁচ শতাংশের মাসে ব্যয় ক্ষমতা মাত্র ১৩৭৩ টাকা৷ শহরাঞ্চলে যার পরিমাণ হল ২০০১ টাকা৷ এনএসএসও-র ২০১১-১২ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী সেই সময় গ্রাম ও শহরে মাসিক মাথাপিছু ভোক্তা ব্যয়ের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৪৩০ টাকা ও ২৬৩০ টাকা৷

সরকারি সংস্থার এই রিপোর্টকে হাতিয়ার করে বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তাঁর সময়ে আর্থিক সাফল্যের দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন৷ এমনকী এনএসএসও-র প্রাক্তন আধিকারিকেরাও সংশয় প্রকাশ করেছেন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারের দাবি করা সাফল্য নিয়ে৷ বিরোধীরা অনেক দিন ধরেই ধনী-দরিদ্রের মধ্যে আয়ের ফারাক নিয়ে সরব৷

এই রিপোর্ট হাতিয়ার করে খাদ্য সুরক্ষা আন্দোলনের নেত্রী দীপা সিনহার বক্তব্য, মাত্র ৪৬ টাকায় সারাদিনের খরচ চালাতে হলে বোঝা যায় মানুষকে কেমন অসহনীয় অবস্থার মধ্যে কাটাতে হচ্ছে৷ তাঁর বক্তব্য, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকার যে উন্নয়নের দাবি করে থাকে, এই রিপোট তাতে প্রশ্ন চিহ্ন জুডে় দিল৷ প্রসঙ্গত, বিগত দু-আড়াই দশক হল, দারিদ্র পরিমাপের জন্য আয়ের পরিবর্তে ব্যয়কে মাপকাঠি করা হয়েছে৷ খাবার-সহ অত্যাবশ্যক, জরুরি কিছু ক্ষেত্র চিহ্নিত করে দেখা সেগুলি ক্রয় বাবদ কী পরিমাণ অর্থ মানুষ খরচ করেন৷