• facebook
  • twitter
Saturday, 17 May, 2025

চন্দ্রভাগার জল বন্ধ করল ভারত

ঝিলাম নদীর প্রবাহ বন্ধেরও পরিকল্পনা

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর পাকিস্তানকে চাপে রাখতে সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। এই সিদ্ধান্তের কয়েক দিনের মধ্যেই এবার চন্দ্রভাগা বা চেনাব নদীর উপর বাগলিহার বাঁধ দিয়ে জলের প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। এর পাশাপাশি ঝিলাম (বিতস্তা) নদীর উপর কিষাণগঙ্গা বাঁধ নিয়েও একই ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে এক সংবাদ সংস্থার রিপোর্টে এই খবর জানানো হয়েছে।

ঝিলাম, চেনাব, সিন্ধু নদীগুলি পাকিস্তানের লাইফলাইন হিসাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এবার সেই লাইফলাইনই নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করল মোদী সরকার। চেনাব তথা চন্দ্রভাগা নদীর উপর রয়েছে বাগলিহার বাঁধ। পাকিস্তানমুখী ওই জলপ্রবাহে বাগলিহার বাঁধের মাধ্যমে জলের প্রবাহ বন্ধ করেছে ভারত। রামবানের বাগলিহার এবং উত্তর কাশ্মীরের কিষাণগঙ্গা বাঁধের মাধ্যমে পশ্চিমমুখী জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে ভারত। কখন জল আটকানো হবে, কখন ছাড়া হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পহেলগাম কাণ্ডের পর পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে দিল্লি। কাশ্মীরে সিন্ধু এবং তাঁর উপনদীগুলির জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ অনেকাংশেই এই চুক্তির উপর নির্ভরশীল। সিন্ধু, চন্দ্রভাগা এবং ঝিলাম নদীর জল পাকিস্তানের দিকে বয়ে যায়। ভারত চুক্তির শর্ত না মানলে ইচ্ছামতো জলপ্রবাহ আটকে দিতে পারে বা বাড়তি জল ছাড়তে পারে। দুই ক্ষেত্রেই পাকিস্তানে সঙ্কট তৈরির আশঙ্কা রয়েছে।

কিছু দিন আগে ঝিলামের জল ছেড়েছিল ভারত। তাতে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের একাংশে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। অভিযোগ, ভারত না জানিয়ে কোনও সতর্কবার্তা ছাড়াই জল ছেড়েছিল। ফলে নদী তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষ নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার সময় পাননি। অবশ্য একটি অংশের দাবি ছিল, নিয়ম মেনেই জল ছাড়া হয়েছে।

চেনাব নদীর উপর ভারতের বাগলিহার বাঁধ নিয়ে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরেই বিরোধ রয়েছে। অতীতে এ বিষয়ে বিশ্বব্যাঙ্কের হস্তক্ষেপও চেয়েছিল পাকিস্তান। যদিও তাতে কোনও লাভ হয়নি। অভিযোগ ছিল, এই বাঁধ তৈরি করে পাকিস্তানের জল আটকাতে চায় ভারত। সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের পর সেই বাঁধ দিয়েই জলপ্রবাহ আটকানো হল। তবে কত ক্ষণের জন্য এই জল আটকানো হয়েছে, ভবিষ্যতে কী ভাবে এই বাঁধ ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে দিল্লির, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

অন্যদিকে কিষাণগঙ্গা বাঁধ নিয়েও কূটনৈতিক স্তরে বিতর্ক হয়েছিল। উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতাতেই একসময় হয়েছিল সিন্ধু চুক্তি। তবে প্রকৃতপক্ষে বিশ্বব্যাঙ্ক এই ক্ষেত্রে মধ্যস্থতা করতে পারে বা খুব বেশি হলে ‘পরামর্শ’ দিতে পারে। এদিকে ভারত থেকে জলের প্রবাহ ক্রমেই কমে আসায় এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে পাকিস্তানের ওপর। প্রসঙ্গত, বিশ্ব ব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় ইন্দো ওয়াটার চুক্তি ১৯৬০ সাল থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নদী এবং এর উপনদী গুলির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।

উল্লেখ্য, ভারতের পদক্ষেপে যে নদীগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেগুলি হল – ঝিলাম, চেনাব এবং সিন্ধু। ভারতের উরি, বাগলিহার ও নিমু-বাগজা বাঁধ এবং পাকিস্তানের মংলা, মারালা ও জিন্নাহ বাঁধ রয়েছে। ব্যবহারিক দৃষ্টিকোণ থেকে, পাকিস্তানের বাঁধগুলি কৃষি ও জলবিদ্যুতের সাথে সংযুক্ত।

জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাম সন্ত্রাসবাদী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর কয়েক দশকের পুরনো এই চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত।