‘ফণী’ নামকরণের নেপথ্যে

ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের ইতিহাস।

Written by Basudeb Dhar Kolkata | May 3, 2019 7:39 am

ঘূর্ণিঝড় ফণী-র (Photo: Twitter/@pibvijayawad)

ফণী আসছে, আতঙ্কে ভারত ও বাংলাদেশের মানুষ। কিন্তু ভয়ঙ্কর এই ঘূর্ণীঝড়ের নামকরণটি কীভাবে হলাে ছােবলের আগেই তা জেনে নেওয়া যেতে পারে।

ফণী নামটি দিয়েছে বাংলাদেশ। এর অর্থ সাপ বা ফণা তুলতে পারে এমন প্রাণী। ইংরেজিতে Fani লেখা হলেও এর উচ্চারণ ফণী। একসময় ঝড়গুলােকে নানা নম্বর দিয়ে শনাক্ত করা হতাে। কিন্তু সেসব নম্বর সাধারণ মানুষের কাছে বােধগম্য হতাে না। ফলে সেগুলাের পূর্বাভাস দেওয়া, মানুষ বা নৌযানগুলােকে সতর্ক করাও কঠিন মনে হতাে। এ কারণে ২০০৪ সাল থেকে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের উপকূলবর্তী দেশগুলােয় ঝড়ের নামকরণ শুরু হয়। সে সময় আটটি দেশ মিলে মােট ৬৪টি নাম প্রস্তাব করে। সেসব ঝড়ের নামের মধ্যে এখন ফণীকে বাদ দিলে আর সাতটি নাম বাকি থাকে।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আঞ্চলিক কমিটি একেকটি ঝড়ের নামকরণ করে। যেমন ভারত মহাসাগরের ঝড়গুলাের নামকরণ করে এই সংস্থার আটটি দেশ। দেশগুলাে হচ্ছে বাংলাদেশ ,ভারত, পাকিস্তান, মায়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং ওমান, যাদের প্যানেলকে বলা হয় WM / ES CAP ।

এর আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বা অস্ট্রেলিয়া অঞ্চলে ঝড়ের নামকরণ করা হত  ভারত মহাসাগরে ঘুণীঝড়কে সাইক্লোন বলা হলেও আটলান্টিক মহাসাগরীয় এলাকার ঘুণীঝনকে বলা হয় ‘হারিকেন’, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বলা হয় ‘টাইফুন’। বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর উপকূলের আটটি দেশের প্রস্তাব অনুসারে একটি তালিকা থেকে একটির পর একটি ঝড়ের নামকরণ করা হয়। আঞ্চলিক এই আটটি দেশ একেকবারে আটটি করে।ঝড়ের নাম প্রস্তাব করেছে। প্রথম দফায় মােট ৬৪টি নাম নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন ‘ফণী’ নামটি বাংলাদেশের দেওয়া। এরপরের ঝড়ের নাম হবে ভারতের প্রস্তাব অনুযায়ী ‘বায়ু’। তারপরে আরও ছয়টি ঝডের জন্য এখনও নাম তালিকায় রয়েছে। সেগুলাে হলাে হিকা, কায়ার, মাহা, বুলবুল, পাউয়ান এবং আম্মান।
ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার বৈঠকে বাংলাদেশের এক বা একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অংশ নিয়ে থাকেন। আগে থেকে তারা আলােচনা করে নেন যে, কী নাম হবে। তিনি বলেন, ঝড়ের নাম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা হয়, যাতে সেটি ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক বা সামাজিকভাবে কোনােরকম বিতর্ক বা ক্ষোভ তৈরি না করে। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ২০১৩ সালে একটি ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়া হয়েছিল ‘মহাসেন’। নামটি প্রস্তাব করেছিল শ্রীলঙ্কাই। কিন্তু সেখানকার সাবেক একজন রাজার নাম ছিল ‘মহাসেন’ যিনি ওই দ্বীপে সমৃদ্ধি নিয়ে এসেছিলেন। ফলে এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। এমনকি শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যমে সেটিকে ‘নামহীন ঝড’ বলে বর্ণনা করা হয়। পরবতী রেকর্ডপত্রে ঝডটির নতুন নাম নির্ধারণ করা হয় ‘তিয়াক’।
উল্লেখ্য, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ এক সপ্তাহ আগে ঘুর্ণীঝড়ে রূপ নেয়। আশঙ্কায় ভারত, ও বাংলাদেশের নাগরিকরা উদ্বেগে সময় পার করছে। বাংলাদেশে উপকুলীয় এলাকার লােকজনকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সারাদেশে নৌচলাচল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকুলীয় এলাকায় শুক্রবার সকাল নাগাদ অতিপ্রবল ঘূণীঝড় ফণীর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব শুরু হতে পারে। ঘূণীঝড় কেন্দ্রের ৭কিমির মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০কিমি, যা দমকা অথবা ঝড়াে হাওয়ার আকারে ১৮০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘুণীঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।