ঐতিহাসিক রায়, খুশির জোয়ারে ভাসল আপামর ভারতবাসী

সুপ্রিম কোর্টের রায়দান পর্ব শেষ হওয়ার পরই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সহ বিশিষ্ট জনেরা তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

Written by SNS New Delhi | November 10, 2019 2:56 pm

অযোধ্যায় রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ শিরোনাম বিতর্ক মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে দেশকে সম্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। (Photo: IANS)

দেশের প্রধান বিচারপতি পদ থেকে অবসর গ্রহণের এক সপ্তাহ আগে স্বাধীন ভারতের সবথেকে বেশি চর্চিত সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক জটিলতার ঐতিহাসিক সমাধান করলেন রঞ্জন গগৈ- অযােধ্যা মামলায় ঐতিহাসিক রায় দান করলেন। টান টান উত্তেজনা নিয়ে সকাল থেকে আপামর ভারতবাসী টেলিভিশন থেকে চোখ সরাননি, সাড়ে দশটার পর থেকে প্রতি মুহুর্তে উদ্বেগের পারদ বেড়েছে– কি হতে চলেছে রাম জন্মভূমি- বাবরি মসজিদ জমি বিতর্কের চুড়ান্ত ফয়সালা। তারপরই ভারতের ইতিহাসে এক বিতর্কিত অধ্যায়ে চিরকালের ইতি টেনে ঘােষণা করলেন ‘অযােধ্যা মামলার ঐতিহাসিক রায়’।

সুপ্রিম কোর্টের রায়দান পর্ব শেষ হওয়ার পরই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সহ বিশিষ্ট জনেরা তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী মােদি বলেন, ‘অযােধ্যা মামলায় সুপ্রিম কোর্ট ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে– যা থেকে দেশের আইন ব্যবস্থার স্বাধীনতা, স্বচ্ছতা ও দরদর্শিতা আরও একবার প্রমাণিত হল। দেশের আইন ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেল’।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ‘অযােধ্যা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানাই। সবকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছি। আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রশ্নে সমস্ত ধরণের প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছি’।

কংগ্রেসের তরফেও অযােধ্যা মামলার রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলা হয়েছে, রাম মন্দির নির্মাণের পক্ষে রায় দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার প্রশ্নে আবেদনও করা হয়েছে।

অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বাের্ডের তরফে জাফরইয়ার জিলানি বলেন, ‘কমিটি যদি সম্মত হয় তাহলে আমরা রায় পুনর্বিবেচনা করে দেখার জন্য আবেদন করব। এটা আমাদের অধিকার। পাশাপাশি এটা আবার সুপ্রিম কোর্টের শাসনাধীনও বটে’।

দিল্লির জামা মসজিদের শাহি ইমাম সঈদ আহমেদ বুখারি অযােধ্যা মামলার রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়ে বলেন, ‘আমরা সবসময় বলে এসেছি যে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দেবে আমরা তা মেনে নেব। আশা করি, দেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে। সুপ্রিম কোর্টের রায় পুনর্বিবেচনা করে দেখার আবেদন করার প্রশ্নে আমি সম্মত নই’।

সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বাের্ডের চেয়ারম্যান জাফর আহমেদ ফারুকি বলেন, অযােধ্যা মামলার রায়কে স্বাগত। শীর্ষ কোর্টের উক্ত রায় পরিবর্তন করার ব্যাপারে আমাদের কোনও পরিকল্পনা নেই’।

সমস্ত কেবল জামাইথুল উলেমায়’র তরফে বলা হয়, ‘অযােধ্যা মামলার রায় হতাশাজনক। কিন্তু আমরা গ্রহণ করেছি। ভারতীয় সংবিধান ও বিচার ব্যবস্থাকে আমরা সম্মান করি। দাঙ্গা ও সাম্প্রদায়িক কোনও বচসা না হওয়াই কাম্য। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বন্ধুত্বের পরিবেশ বজায় রাখার আবেদন জানাচ্ছি’।

শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে অযােধ্যা মামলার রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ভারতের ইতিহাসে আজকের দিনটা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আপামর ভারতবাসী রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। ২৪ নভেম্বর অযোধ্যা যাব’।

মুরলী মনােহর জোশী বলেন, ‘ঐতিহাসিক রায়– সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতাে রাম জন্মভূমিতে রাম মন্দির নির্মাণ করার দায়িত্ব ট্রাস্ট্রের’।

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কার্যনির্বাহী সভাপতি অলােক ভার্মা বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট অযােধ্যার জমি বিতর্ক মামলায় নিস্পত্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এখন কোর্টের নির্দেশমতাে মন্দির নির্মাণ করার লক্ষ্যে কেন্দ্রের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। রাম মন্দিরের ৬০ শতাংশ থাম ও বিম তৈরি হয়ে রয়েছে’।

শিয়া সম্প্রদায়ের মৌলবি মৌলানা কালবে জাওয়াদ বলেন, ‘অযােধ্যা মামলার রায়কে স্বাগত। মুসলিম পার্সোনাল ল’ বাের্ডের রায় পুনর্বিবেচনা করে দেখার অধিকার থাকতে পারে, কিন্তু মুসলিম সম্প্রদায়ের সিংহভাগ ওই ঐতিহাসিক রায় গ্রহণ করেছে। আশা করি অযােধ্যা জমি বিতর্কে ইতি পড়ল’।

বিএসপি নেত্রী মায়াবতী বলেন, ‘রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ জমি বিতর্ক মামলায় সুপ্রিম কোর্টে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত ঐতিহাসিক রায়কে স্বাগত জানাই। পরম পূজ্য বাবা সাহেব ডক্টর ভীমরাও আম্বেদকরের লিখিত সংবিধানে নিরপেক্ষতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাম মন্দির নির্মাণের প্রশ্নে ভবিষ্যতে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে পদক্ষেপ গ্রহ্ন কার আবেদন করছি’।

কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান বলেন, ‘ভারতীয় নাগরিক হিসেবে সংবিধানের ধারায় গৃহীত যে কোনও সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানাে আমাদের কর্তব্য। সংবিধানকে আমাদের মেনে চলতে হবে’।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি বলেন, ‘অযােধ্যা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই। এখন ভ্রাতৃত্ববােধ, বিশ্বাস ও ভালােবাসা দেখানাের সময় এসেছে- সম্প্রীতি বজায় রাখার আবেদন জানাচ্ছি।

শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর বলেন, ‘ঐতিহাসিক রায়কে স্বাগত জানাই। দীর্ঘ বছর ধরে মামলাটি চলছিল। অবশেষে মামলার সমাপ্তি হল। আমাদের এখন শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। 

আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার প্রাক্তন আঞ্চলিক ডিরেক্টর (উত্তর) কে কে মহম্মদ বলেন, ‘প্রত্নত্বাত্তিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শনের ওপর ভিত্তি করে সুপ্রিম কোর্ট চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। আগে ওখানে রাম মন্দির ছিল। আমাদের উচিত সেখানে ফের নতুন করে মন্দির তৈরি করা। বাবরি মসজিদের আগে ওখানে রাম মন্দিরে অস্তিত্ব ছিল। আমি গর্ব অনুভব করছি, আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার রিপাের্টের ওপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত রায় দেওয়া হয়েছে। আমরা এই ধরনের কোনও রায়ের জন্য অপেক্ষা করছিলাম’।

আজমেড় শরিফের দেওয়ান সৈয়দ জানিয়ুল আবেদিন বলেন, ‘এটা কারুর জয় বা পরাজয় নয়। সুপ্রিম কোর্টের রায় আমাদের মেনে নেওয়া উচিত। রায় যাই হােক না কেন, দেশ ও জাতির স্বার্থে বিতর্কের এখানেই শেষ হওয়া উচিত’।

এআইএমআইএম প্রধান আসাউদ্দিন ওয়াইসি বলেন, ‘আমি সন্তুষ্ট নই। সুপ্রিম কোর্ট প্রকৃতপক্ষে দেশের আইনি ব্যবস্থার শীর্ষ প্রতিষ্ঠান কিন্তু অভ্রান্ত নয়। সংবিধানের ওপর আমাদের পুরাে বিশ্বাস আছে। আমাদের অধিকার নিয়ে লড়াই করেছি। আমাদের অনুদানে ৫ একর জমি চাই না। আমাদের উৎসাহিত করার জন্য ৫ একর জমি দেওয়ার কোনও প্রয়ােজন নেই। মসজিদ নির্মাণের জন্য ৫ একর জমির প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়া উচিত’।

এমএনএস প্রধান রাজ ঠাকরে বলেন, ‘শিবসেনা প্রধান বালা সাহেব ঠাকরে যদি জীবিত থাকতেন তিনি খুব খুশি হতেন। আশা করি খুব শীঘ্রই রাম মন্দির নির্মাণ হবে। দীর্ঘ বছর ধরে রাম মন্দির নির্মাণের জন্য লড়াই চলেছে। আজ ওই লড়াইয়ের অবসান হল। সুপ্রিম কোর্টকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত’।

আরএসএস প্রধান মােহন ভাগবত বলেন, অতীতের সমস্যা ও গ্লানি ভুলে সকলে মিলে রাম মন্দির গড়ে তুলতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানাই, এটা কোনও পক্ষের হার বা জিত নয়’।

ভারতীয় জনতা পার্টির নেতা লালকৃষ্ণ আম্বানি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের ঘােষণায় আমার অবস্থান আজ প্রমাণিত হল। তার জন্য আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি’।