অন্তর্বতী জামিনে মুক্ত ‘বিদেশি’ সানাউল্লাহ

ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সুবেদার, বর্তমানে অসম বর্ডার পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর মুহম্মদ সানাউল্লাহকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিল গুয়াহাটি হাইকোর্ট।

Written by SNS Guwahati | June 8, 2019 6:56 pm

ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে ছাড়া পেলেন মহম্মদ সানাউল্লাহ (Photo: IANS)

ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সুবেদার, বর্তমানে অসম বর্ডার পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর মুহম্মদ সানাউল্লাহকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিল গুয়াহাটি হাইকোর্ট। জাতীয় নাগরিক পঞ্জীতে নাম থাকায় কার্গিল যুদ্ধে লড়াকু সেনাকে ‘ঘােষিত বিদেশি’ হিসাবে গ্রেফতার করে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠান হয়। সানাউল্লাহকে মুক্তি দেওয়ার সঙ্গে মামলায় জড়িত সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নােটিশ পাঠিয়েছে গুয়াহাটি আদালত।

বিদেশি বলে পরিচিত প্রাক্তন সেনাকে আটকে রাখার কারণে মুক্তির আবেদন করে তাঁর পরিবার গুয়াহাটি হাইকোর্টে মামলা করে। হাইকোর্টের বিচারক মনােজিৎ ভূষণ ও বিচারক প্রশান্ত কুমার ডেকারের ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানি হয় আজ। সেই সময় আদালত মহম্মদ সানাউল্লাহকে সানা অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের নির্দেশ দেয়। আদালত জানি নির্দেশ দিয়েছে অবিলম্বে মহম্মদ সানাউল্লাহকে গােয়ালপাড়ার ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে মুক্তি দেওয়া হােক।

প্রাক্তন সেনাকে গ্রেফতার করার পর তদন্তে এনআরসি তালিকা তৈরির পদ্ধতিতে গলদ প্রকাশ্যে আসে। তদন্তকারী অফিসার চন্দ্রমল দাস স্বীকার করে নেন তদন্তে ভুলভ্রান্তির বিষয়টি। আদালতের তরফ থেকে আজ নােটিশ পাঠান হয়েছে অসম সরকার, এনআরসি কর্তৃপক্ষ, তদন্তকারী অফিসার চন্দ্ৰমাল দাস এবং নির্বাচন কমিশনকে।

অসমের কামরূপে কলহিকশ গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ সানাউল্লাহ তিন দশক ধরে ভারতীয় সেনা বাহিনীতে নিযুক্ত ছিলেন। ২০১৭ সালে অবসর নেন সেনা বাহিনী থেকে। তারপর যােগ দেন অসম বর্ডার পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর পদে। ফরেনার্স ট্রাইবুনালের তদন্তে তাঁকে বিদেশি চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হয়।

গুয়াহাটি হাইকোর্টের নির্দেশে স্বভাবতই খুশি সানাউল্লাহর আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং। টুইটে তিনি জানিয়েছেন, ‘অসাধারণ খবর, ৩০ বছর ধরে দেশের সেবায় নিযুক্ত বর্ষীয়ান সেনা আদালতের নির্দেশে মুক্তি পেলেন। দীর্ঘদিন ধরে দেশের জন্য লড়াই করার পরও তাঁকে বিদেশি বলা হয়েছে। এই মুহূর্তে আইনজীবী হিসাবে আমি গর্ববােধ করছি। সেই সঙ্গে দেশের বিচার ব্যবস্থার জন্য গর্ববােধ করছি’।এনআরসি প্রক্রিয়াটি প্রহসনে পরিণত হয়েছে বলে অভিযােগ তুলে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং।

আদালত সূত্রে খবর, প্রয়ােজনীয় আইনি জটিলতা কাটিয়ে মহম্মদ সানাউল্লাহকে শনিবার ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে এই মামলার শুনানি চলবে বলে আদালত জানিয়েছে। তবে পরবর্তী শুনানির দিন আজ জানান হয়নি।

মহম্মদ সানাউল্লাহ কন্যা শাহনাজ আখতার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘বাবার মুক্তির খবর পেয়ে পরিবারের সকলেই আমরা খুব খুশি। ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে মুক্তি পেতে বাবার কিছুটা সময় লাগবে। আমরা অপেক্ষ করছি’।

নাগরিক পঞ্জীতে বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হিসাবে চিহ্নিত প্রায় শতাধিক মানুষ আদালতে দ্বারস্থ হয়েছেন। বেআইনিভাবে তাঁরা অসমে অনুপ্রবেশ করেছে বলে অভিযোগ তােলা হয়েছে। চন্দ্রমাল দাসের রিপাের্টের ওপর ভিত্তি করে সানাউল্লাহকে নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য। ২০০৮ সালে নােটিশ পাঠান হয়েছিল।

গত সপ্তাহে এক সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তদন্তকারী অফিসার চন্দ্ৰমাল দাস দাবি করেন ভুল লােককে চিহ্নিত করে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠান হয়েছে। মহম্মদ সানাউল্লাহ নামে একজন শ্রমিককের কথা রিপাের্টে উল্লেখ করা হয়েছিল। উনি বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন।

২০০৮-এ রিপাের্ট তৈরির সময় তিনজন সাক্ষী সই করেছেন বলে রিপাের্টে দাবি করা হয়েছিল। বােকো পুলিশ স্টেশনে সানাউল্লাহর নামে অভিযােগ দায়ের করা হয় সেই সময়। তবে যে তিন গ্রামবাসীর সই রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছিল তাঁরা পরবর্তীকালে জানান, এই বিষয় নিয়ে কেউ তদন্ত করতে আসেননি। আবার ২০০৮ সালে যখন তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে সেই সময় সানাউল্লাহ গ্রামেই ছিলেন বলে উল্লেখ করা হলেও তাঁর সার্ভিস রেকর্ড বলছে ওই সময় তিনি জঙ্গি দমনের কাজে মণিপুরে কর্মরত ছিলেন।

এই মুহূর্তে গোটা অসমে ৬টি ডিটেনশন ক্যাম্পে ৯৮৬ জনকে আটক রাখা হয়েছে। অনুপ্রবেশ চিহ্নিতকারী ১০০টি ক্যাম্প নথিভুক্ত করার কাজ করছে। বর্ডার অর্গানাইজেশন এবং নির্বাচন কমিশন ডি ভােটারদের নামে তালিকা তৈরি করছে। মহম্মদ সানাউল্লাহের পরিবার এবার ঈদ উৎসব পালন করেননি। দেরিতে হলেও অবশেষে মুক্তি পেলেন মহম্মদ সানাউল্লাহ।