ফের বার্তাবাহী ব্যাগ রাজনীতির আঙিনায়। ‘ ফ্যাশন অ্যাকসেসরিজ’ এর জায়গায় এখন ব্যাগ হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক কটাক্ষের এক নতুন মাধ্যম। এর আগে কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর কাঁধে ঝুলতে দেখা গিয়েছিল ‘প্যালেস্টাইন’ কিংবা ‘বাংলাদেশি হিন্দু ও খ্রিস্টানদের পাশে আছি’ লেখা ব্যাগ। এবার বিজেপি সাংসদ বাঁশুরি স্বরাজের কাঁধে দেখা গেল ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড কি লুট’ লেখা ব্যাগ। মঙ্গলবার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে সংসদে যান তিনি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিজেপি সাংসদের এই ব্যাগকে ঘিরে রাজনৈতিক তরজা ফের মাথাচাড়া দিয়েছে। এই ব্যাগ বহন করা ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় সম্প্রতি চার্জশিট পেশ করেছে ইডি। সেখানে সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী এবং স্যাম পিত্রোদার নাম রয়েছে। আগামী ২৫ এপ্রিল এই মামলার শুনানি হবে বিশেষ আদালতে। উল্লেখযোগ্য হল, ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় নাম জড়ালেও এতদিন সোনিয়া-রাহুলের নামে চার্জশিট জমা পড়েনি। এই প্রথম তাঁদের নাম উঠেছে ইডির চার্জশিটে। ফলে বিরোধী শিবিরকে আক্রমণের সুযোগ পেয়েছে গেরুয়া শিবির। সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে প্রিয়াঙ্কার ব্যাগের রাজনৈতিক বার্তাকে পাল্টা ঠুকল বিজেপি। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ করতে ব্যবহার করা হল সেই ব্যাগ।
Advertisement
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে স্বরাজ বলেন, ‘গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ-মিডিয়াতে এই প্রথম দুর্নীতি হয়েছে।ইডি-র দায়ের করা চার্জশিটে কংগ্রেস দলের পুরনো কর্মপদ্ধতি ও আদর্শ তুলে ধরা হয়েছে, কীভাবে পরিষেবার আড়ালে তারা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বাড়ানোর হাতিয়ার করে তোলে।’
Advertisement
২০২১ সালে ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় তদন্ত শুরু করে ইডি। বিজেপি নেতা সুব্র্যহ্মণম স্বামীর দায়ের করা মামলায় আদালতের রায়ের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল যে গান্ধী পরিবার এবং অন্যান্য কংগ্রেস নেতারা ইয়ং ইন্ডিয়ান লিমিটেড কোম্পানির মাধ্যমে ন্যাশনাল হেরাল্ড সংবাদপত্রের প্রকাশক অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড-এর জালিয়াতি করে ৫০ লক্ষ টাকায় অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করেছিলেন।স্বামীর অভিযোগ ছিল, বেআইনিভাবে অ্যাসোসিয়েট জার্নাল লিমিটেডের ২০০০ কোটির সম্পত্তি দখল করেছে ইয়ং ইন্ডিয়া, যার শেয়ারহোল্ডার ছিলেন সোনিয়া এবং রাহুল-সহ আরও অনেকে।
স্বরাজের এদিনের ব্যাগ স্টান্ট প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সাম্প্রতিক ব্যাগ বার্তারই পাল্টা বলে মনে হচ্ছে। ডিসেম্বরে, প্রিয়াঙ্কা প্যালেস্টাইন লেখা একটি ব্যাগ বহন করে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। বিজেপি নেতাদের সমালোচনা করেই তাঁর এই ব্যাগ বার্তা এমনই বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। একে সাম্প্রদায়িক ইঙ্গিত বহনকারী বলে অভিযোগ এনেছিল বিজেপি।যদিও বিজেপির এই প্রতিক্রিয়ায় বিচলিত না হয়ে, প্রিয়াঙ্কা তাঁর পছন্দকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন এবং এই ধরণের আক্রমণকে পিতৃতান্ত্রিক বলে অভিহিত করেছিলেন।তিনি যা চান তা পরার অধিকার তাঁর আছে এমনও দাবি করেছিলেন।
বিজেপি নেতা সম্বিত পাত্র বলেছিলেন, গান্ধী পরিবার সবসময়ই তুষ্টির ব্যাগ বহন করে এসেছে।তাঁর কথায়, ‘নির্বাচনে তাদের পরাজয়ের কারণ হল তুষ্টির ব্যাগ। ‘
এর একদিন পর, প্রিয়াঙ্কা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা উপেক্ষা করা হচ্ছে, বিজেপির এমন সমালোচনার জবাবে ‘বাংলাদেশী হিন্দু ও খ্রিস্টানদের সাথে দাঁড়ান’ লেখা একটি ব্যাগ নিয়ে হাজির হন।এই বছরের শুরুর দিকে, বিজেপি সাংসদ অপরাজিত সারেঙ্গি প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে একটি ব্যাগ উপহার দিয়েছিলেন যার উপর লেখা ছিল “1984”-যা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পর শিখ বিরোধী দাঙ্গার একটি সুস্পষ্ট উল্লেখ। এবার কার্যত প্রিয়াঙ্কার পরিবারকেই খোঁচা দিয়ে বিজেপি সাংসদের কাঁধে দেখা গেল ন্যাশনাল হেরাল্ড নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ ব্যাগ।
Advertisement



