সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের আগেই ফড়নবীশের পদত্যাগ, পরবর্তী জোটের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে

মহারাষ্ট্রে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন ৫৯ বছর বয়সী উদ্ধব ঠাকরে। জানা গেছে, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদে শপথ নেবেন আগামী রবিবার।

Written by SNS Mumbai | November 27, 2019 2:48 pm

উদ্ধব ঠাকরে ও রাজ্যপাল ভগত সিং কোশিয়ারি। (Photo: IANS)

মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের রায় আসার পরেই মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন দেবেন্দ্র ফড়নবীশ। মঙ্গলবার রাতেই শিবসেনা-কংগ্রেস-এনসিপি’র বিধায়কদের বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে মনােনীত হন শিবসেনা প্রমুখ উদ্ধব ঠাকরে। মহারাষ্ট্রে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন ৫৯ বছর বয়সী উদ্ধব ঠাকরে।

জানা গেছে, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদে শপথ নেবেন আগামী রবিবার। পরিষদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর উদ্ধব বলেন, তিনি কোনওদিন মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেননি। নেতা নির্বাচিত হওয়ার পরেই তিনি কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট সােনিয়া গান্ধিকে ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির অভিনন্দন একেবারে সাগরের জলে ভেসে গেল। উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার পদত্যাগ করার পরই দেবেন্দ্র ফড়নবিশ মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। কারণ সুপ্রিম কোর্ট বুধবারই বিকেল ৫ টায় বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে নির্দেশ দেয়। বিধায়কদের শপথ গ্রহণ ও প্রােটেম স্পিকার নিযুক্ত হওয়ার পরই সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।

সাংবাদিকদের মুখােমুখি হয়ে দেবেন্দ্র ফড়নবিশ জানান অজিত পাওয়ার উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ পত্র জমা দেন। ফলে বিজেপি বিধায়ক কেনাবেচায় যেতে চায় না। আমরা কেবল এনসিপির সমর্থন পাওয়ায় সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু এনসিপির নেতা অজিত পাওয়ার পদত্যাগ করায় আমাকেও পদত্যাগ করতে হল।

তিনি আরও জানান, বিজেপি জনগণের ভােটে সরকার গঠনের প্রক্রিয়ায় ছিল। কিন্তু শিবসেনা ক্ষমতার জন্য দর কষাকষিতে নামায় তা সম্ভব হল না। কারণ এই দর কষাকষি ভবিষ্যতেও থামবে না বলেই মনে করে বিজেপি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র সঙ্গে বৈঠক করেই ফড়নবিশ পদত্যাগ করেন বিধান সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের একদিন আগেই।

বিজেপি-শিবসেনা জোট বেঁধে মহারাষ্ট্র বিধানসভার নির্বাচনে লড়াই করে এবং ২৮৮ বিধানসভা আসনের মধ্যে বিজেপি পায় ১০৫ এবং শিবসেনা পায় ৫৬ আসন। ফলে জোট সরকার গঠনের কোনও বাধাইছিল না। কিন্তু বাস্তবে বিজেপি নির্বাচনপূর্ব প্রতিশ্রুতি মতাে শিবসেনার সঙ্গে ক্ষমতার ভাগাভাগিতে রাজি না হওয়ায় এককভাবে কারও পক্ষে সরকার গঠন অসম্ভব হয়ে পড়ে। কিন্তু সেনা-বিজেপি ক্ষমতার ভাগাভাগির শর্তমেনে কেন সরকার গঠন করল না তা বােঝা মুস্কিল। কারণ জনগণের রায় তাদের দিকেই ছিল। কিন্তু বিজেপির অনড় মনােভাবের কারণে প্রমথবার সেনা দলের প্রতিষ্ঠাতাদের পরিবারের কোনও সদস্য বিধানসভায় গিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসতে না পারায় তারা সরকার গঠনে বেঁকে বসে। এর পর শুরু হয় তৃতীয় পক্ষের সমর্থনে সেনার সরকার গঠনের প্রক্রিয়া। সেখানে এনসিপি-কংগ্রেস জোট বিজেপিকে ঠেকানাের উদ্দেশ্যে সেনার নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী করে সরকার গঠনে সম্মতি জানায়। এরই মধ্যে নানান নাটক সংঘটিত হতে থাকে। রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়। সেনা-এনসিপি-কংগ্রেস সুপ্রিম কোর্টে যায়। কারণ এরই মধ্যে এনসিপির পক্ষে শরদ পাওয়ারের ভাইপাে অজিত পাওয়ার তার বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেওয়ার শর্তে বিজেপিকে সমর্থন দিয়ে সরকার গঠনের প্রস্তাব দেয়।

সেই মতাে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি তাঁর বিশেষ ক্ষমতা প্রয়ােগ করে রাতারাতি রাষ্ট্রপতি শাসনে অবসান ঘটিয়ে রাতেই সেই সংবাদ রাজ্যপালকে জানিয়ে দেন সরকারি নিয়ম মেনেই। আর রাজ্যপালও অগ্রপশ্চাৎ কোনও বিবেচনা না করেই ফড়নবিশকে মুখ্যমন্ত্রী ও অজিত পাওয়ারকে উপমুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ দিয়ে দেন ভাের ৫,৪৭ মিনিটে। এর বিরুদ্ধে সেনা-এনসিপি-কংগ্রেস সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করে। সেই মতাে সুপ্রিম কোর্ট উভয় পক্ষের বক্তব্য শােনার একদিন পর নবগঠিত সরকারকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের সময়সীমা বেঁধে দেয়।

এরই মধ্যে অজিত পাওয়ারের বিরুদ্ধে শর্তমতাে আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলাগুলি কেন্দ্রের নির্দেশে প্রত্যাহার হয়ে যাওয়ায় অজিত পাওয়ার উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ অসম্ভব জেনেই ফড়নবিশ প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রক্রিয়া কোনও গােপন ব্যালটের পরিবর্তে সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরার সামনে সমর্থন জানাতে হবে বিধায়কদের।

এর আগে ফড়নবিশ প্রথাগতভাবে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পরে একটি ত্রাণ তহবিলের চেক স্বাক্ষর করেন। একটি বৈঠকও করেন কিন্তু সেখানে উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার যােগ দেননি। গত সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর অন্য একটি বৈঠকেও অজিত পাওয়ার অনুপস্থিত ছিলেন। এমনকী সকালে ২৬/১১ শহিদদের স্মরণ সভাতেও যাননি। পরবর্তী সরকার যার নেতৃত্বেই গঠিত হােক, তা খুবই স্বল্প সময় টিকবে বলে ফড়নবিশ মন্তব্য করেছেন। নতুন সরকারের নির্দেশের চাকা তিন দিকে পরিচালিত হবে।