• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

বাংলাদেশে পরপর ভূমিকম্পে ভয়ের বাতাবরণ, সতর্ক করলেন বিশেষজ্ঞরা

ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল ঢাকার মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে, নরসিংদীতে। ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে ছিল এই কম্পনের উৎসস্থল।

নিজস্ব গ্রাফিক্স চিত্র

বাংলাদেশে আবারও ভূমিকম্পের আতঙ্ক। শুক্রবার সকাল থেকে মাত্র ৩২ ঘণ্টার ব্যবধানে টানা চার বার কেঁপে উঠেছে দেশটি। রাজধানী ঢাকা সহ একাধিক অঞ্চলে ধসে পড়েছে বাড়ি, ফেটে গিয়েছে দেওয়াল, ভেঙে পড়েছে ছাদ। ভয়াবহ এই কম্পনে এখনও পর্যন্ত অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এর থেকেও আরও বড় বিপর্যয় সামনে অপেক্ষা করে আছে।

ঢাকা প্রশাসন জানিয়েছে, শুক্রবারের প্রথম বড় ভূমিকম্পে রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৫.৭। সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলিতে। রাজধানীর অন্তত ১৪টি বহুতল ভবন গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রশাসনের দাবি। যদিও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজুক)-এর তথ্য আরও বেশি উদ্বেগজনক। তাদের হিসাবে ৫০টিরও বেশি ভবনে ভয়াবহ ফাটল ধরা পড়েছে। রাজুক-এর চেয়ারম্যান মহম্মদ রিয়াজুল ইসলাম জানান, উদ্ধারকাজ ও পরিকাঠামোগত মূল্যায়ন অব্যাহত রয়েছে।

Advertisement

শুক্রবারের ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই শনিবার সকালেও একই সময়ে টানা তিন দফা কম্পন অনুভূত হয়েছে। সন্ধ্যাতেও আবার কেঁপে ওঠে ঢাকা। ফলে নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। বহু পরিবার নিরাপত্তার আশায় রাস্তায় রাত কাটাচ্ছেন।

Advertisement

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারি স্পষ্ট সতর্কবার্তা দিয়েছেন, ‘এটি আরও ভয়াবহ কোনও ভূমিকম্পের পূর্বাভাস হতে পারে। সেজন্য এখন থেকে আরও অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে।’ তাঁর মতে, জরাজীর্ণ ও বিপজ্জনক বাড়িগুলি দ্রুত খালি করা এবং জনসচেতনতা বাড়াতে নির্দেশিকা জারি করা প্রয়োজন। কারণ সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নিলে ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই কমানো সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।

প্রসঙ্গত, বিশ্বের ভূমিকম্পপ্রবণ ২০টি ঘনবসতিপূর্ণ শহরের তালিকায় রয়েছে ঢাকা। ইতিহাসও একাধিকবার জানিয়ে দিয়েছে এই বিপদের কথা। ১৮৬৯ থেকে ১৯৩০ সালের মধ্যে রিখটার স্কেলে ৭-এর বেশি মাত্রার পাঁচটি ভয়াবহ ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে ঢাকা শহরে। ২০২২ সালে রাজুক ঢাকা, গাজিপুর ও নারায়ণগঞ্জের ৪২টি ভবনকে বিপজ্জনক বলে চিহ্নিত করেছিল। তিন মাসের মধ্যে খালি করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই নির্দেশ মানা হয়নি। তাই এবার পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সিসমোলজিস্ট সৈয়দ হুমায়ুন আখতারের ব্যাখ্যা, বাংলাদেশ প্রধান টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষ অঞ্চলের উপর অবস্থিত। ভারত-মায়ানমার সাবডাকশন জোনে ক্রমাগত স্ট্রেন জমছে, যা বড়সড় কম্পন ঘটাতে সক্ষম। সেটি যে কোনও মুহূর্তে প্রবল শক্তি নিয়ে মুক্ত হতে পারে। তার সম্ভাব্য মাত্রা আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে তিনি সতর্কবার্তা দিয়েছেন।

শুক্রবার ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল ঢাকার মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে, নরসিংদীতে। ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে ছিল এই কম্পনের উৎসস্থল। কম্পন অনুভূত হয়েছে ভারতের কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেও।

মানুষের প্রাণহানি ও ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির পর বাংলাদেশ সরকার জরুরি প্রস্তুতিতে জোর দিলেও বিশেষজ্ঞদের মতে এখনও অনেক কিছু বাকি আছে। সময় থাকতে পদক্ষেপ না নিলে আরও বড় বিপর্যয় অনিবার্য। এমন আতঙ্কই ঘিরে ধরেছে দেশজুড়ে।

Advertisement