• facebook
  • twitter
Friday, 19 December, 2025

শোকবিহ্বল শ্রীলেখার ভাষায় বেঁচে গেলেন বুদ্ধবাবু

আজ শোকের থেকেও বেশি ক্রোধ হচ্ছে। ভয়ংকর রাগ হচ্ছে। জানালেন অনীক বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়ানে আকাশ মেঘলা। দীর্ঘ কয়েক দশকের রাজনৈতিক জীবন কাটিয়ে পরলোকে পাড়ি দিয়েছেন কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য । বাম জমানার শেষ মুখ্যমন্ত্রী। শেষ আইকনকে হারিয়ে ‘অভিভাবক’হীন বামপন্থীরা। তবে শুধু প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নন, একজন অভিজাত, রুচিশীল, সৎ তথা সংস্কতিমনস্ক রাজনীতিক

আজ শোকের থেকেও বেশি ক্রোধ হচ্ছে। ভয়ংকর রাগ হচ্ছে। জানালেন অনীক

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়ানে আকাশ মেঘলা। দীর্ঘ কয়েক দশকের রাজনৈতিক জীবন কাটিয়ে পরলোকে পাড়ি দিয়েছেন কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য । বাম জমানার শেষ মুখ্যমন্ত্রী। শেষ আইকনকে হারিয়ে ‘অভিভাবক’হীন বামপন্থীরা। তবে শুধু প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নন, একজন অভিজাত, রুচিশীল, সৎ তথা সংস্কতিমনস্ক রাজনীতিক হিসেবেও তাঁর আলাদা পরিচয়ের স্বীকৃতি রয়েছে রং-দল নির্বিশেষে। এদিন তাঁর চলে যাওয়ায়  শোকবিহ্বল রাজনীতি থেকে বিনোদন দুনিয়ার সদস্যরা।

Advertisement

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য চলে গেছেন শোনার পরই বামপন্থী তারকাদের চোখ ছলছল। অনীক দত্তর থেকে শুরু করে শ্রীলেখা  শোকবিহ্বল কমলেশ্বরও। স্মৃতির সরণিতে হেঁটে গিয়ে পরিচালক কমলেশ্বর মনে করলেন বাংলার শিল্পায়ণের কথা। যে কমরেড একাই লড়ে গিয়েছিলেন বাংলাকে শিল্পসমৃদ্ধ করতে। সোশ্যাল  মিডিয়ায় প্রোফাইল ছবি কালো করে নিজেকে বুদ্ধপন্থী বলে পরিচয় দিলেন জীতু কমল।

Advertisement

খবর অনুসারে, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে পাম অ্যাভিনিউয়ের নিজের ফ্ল্যাটেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অশীতিপর বুদ্ধবাবু। গত কয়েকদিন ধরেই শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। এদিন সকাল থেকে শ্বাসকষ্ট বেড়েছিল। অক্সিজেন দেওয়া হলেও শেষরক্ষা হয়নি! সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন তিনি। মৃত্যুর আগে কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য চিকিৎসাশাস্ত্রে গবেষণায় মরোণত্তর দেহদান করছেন। শ্রীলেখার কথায়, “বাংলার মানুষ বুদ্ধবাবুর সঙ্গে যেটা করেছে, সেটা ক্ষমার অযোগ্য। কারও কাছে মাথা নোয়ালেন না। কোনও আপোস করলেন না। ওই দুঃখ, এই কষ্ট ভিতরে রেখে মাথা উঁচু করে চলে গেলেন। যেরকমভাবে একজন কমিউনিস্ট নেতার যাওয়ার কথা, সেভাবেই গেলেন। কোনও ঢাকঢোল না বাজিয়ে! এবং আমি বলব, বেঁচে গেলেন। আমার মনে হয়, বুদ্ধবাবুর যোগ্য আমরা নই।”

শোক সামলে অনীক দত্তর মন্তব্য, “গভীর অন্ধকারে কোথাও এককোণে নিভৃতে একটা ছোট্ট প্রদীপ জ্বলছিল। সেটাও নিভে গেল। আজ শোকের থেকেও বেশি ক্রোধ হচ্ছে। ভয়ংকর রাগ হচ্ছে।” কেন? সেই উত্তরও অনীক নিজেই দিয়েছেন। বুদ্ধস্মরণে তাঁর মন্তব্য, “আমরাই আপনাকে ব্যর্থ হতে দিয়েছি স্যার। আমাদের ক্ষমা নেই। তার ফল ভুগছি। আরও ভুগতে হবে।”

পরিচালক-অভিনেতা কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, যিনি বরাবর বামপন্থায় বিশ্বাস করেন, সিনেমার কাজের বাইরে দুস্থ মানুষদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসাও করেছেন, তিনি জানালেন, “আজ বাংলায় যদি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের হাত ধরে শিল্পায়ন শুরু হত, তাহলে আপামর বাংলার মানুষ একটা অন্য ধরনের পশ্চিমবঙ্গ দেখতে পেত।” যে সিঙ্গুরকাণ্ড পশ্চিমবঙ্গে বামশিবিরের অবসান ঘটিয়েছিল, সেই দগদগে ক্ষত যে আজও কমরেডরা ভোলেননি, সেকথা আবারও প্রকাশ পেল তাঁর কথায়।

বুদ্ধ প্রয়ানে সিপিএম ছাড়লেন বামপন্থী বিশ্বাসী জীতু কমল।  জানালেন, “আজ থেকে আর কমরেড বলে আমায় নাই বা ডাকলেন। আর যদি ডেকেও ফেলেন, দয়া করে একটিবারের জন্য অনুমতি চাইবেন। সিপিআইএম রইলাম না আর। বুদ্ধপন্থী বলে রইল আমার পরিচয়। সুবিধা-অসুবিধা কোন কিছুই কিন্তু নিইনি কোনদিন। তাই পাল্টিবাজ, ধাপ্পাবাজ, চিটিংবাজ ভাষাজ্ঞান শূন্য মন্তব্য নাই বা করলেন সিপিআইএম। আমার বন্ধু, আমার পথপ্রদর্শক, আমার ঈশ্বর বিদায় তোমায়। পরপারে স্লেট হাতে আবার যাব, পিছু পিছু তোমার।”  লোকসভা ভোটের বামেদের হয়ে লড়েছিলেন দেবদূত ঘোষ। পিতৃহারা কমরেড হিসেবে তাঁর মন্তব্য, “বহিবারে দাও শক্তি।”

শেষবার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দলীয় কর্মসূচিতে দেখা গিয়েছিল ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। ভগ্ন শরীর নিয়েই কোনওক্রমে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড পর্যন্ত এসেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, যদি খারাপ সময়ে একবার মঞ্চে গিয়ে দলীয় কর্মীদের সাহস জোগানো যায়।

Advertisement