• facebook
  • twitter
Monday, 21 April, 2025

সাইবার ক্রাইমে ব্যাঙ্ক কর্মীদের মারফত গোপন নথি ফাঁস

উদ্বিগ্ন দেশের অপরাধ দমন শাখা

প্রতীকী ছবি

সাইবার ক্রাইম যেভাবে থাবা বসাচ্ছে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন গোটা দুনিয়া। বিশেষত আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত বিপদ  চরমে পৌঁছেছে। এই নয়া বিপদ নিয়ে উদ্বিগ্ন দেশের অপরাধ দমন শাখাও। নানারকম কৌশলে সাধারণ মানুষের পুঁজি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে আত্মসাত করা এখন প্রতিদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাইবার ক্রাইম নিয়ে তদন্তে নেমে গোয়েন্দা সংস্থাগুলির হাতে যে তথ্য এসেছে, তা চমকে দেওয়ার মতো। গোয়েন্দা ও বিশেষজ্ঞদের হাতে যে তথ্যপ্রমাণ মিলছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে, মূলত ব্যাঙ্ককর্মী এবং ব্যাঙ্কের হয়ে যাঁরা সরাসরি কাজ করে থাকেন সেই তৃতীয় পক্ষ মারফত ব্যাঙ্কের গুরুত্বপূর্ণ এবং গোপন নথি ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। সরকারের এক শীর্ষস্থানীয় আধিকারিক সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে।

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি নির্দিষ্টভাবে জানতে পেরেছে যে, ব্যাঙ্কের কর্মী ও তৃতীয় পক্ষের কাছে অত্যন্ত সুরক্ষিত থাকা তথ্য আদানপ্রদানে কোনও বাধা থাকছে না। ব্যাঙ্কের সমস্ত গোপনীয় তথ্য অবাধ হাতবদল অর্থাত অ্যাক্সেস পাওয়ার কারণেই বাইরে ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। আর এরই ফাঁকফোকর দিয়ে অপরাধীরা তথ্য হাতিয়ে গ্রাহকদের প্রতারণার জালে ফেলছে। যার ফল দাঁড়াচ্ছে, গ্রাহকদের লক্ষ লক্ষ টাকা মুহূর্তের মধ্যে অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে। শীর্ষস্তরের এক সরকারি আধিকারিক এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন, আউটসোর্স করা কর্মী, তৃতীয় পক্ষ এবং ব্যাঙ্ককর্মীদের হাতে অত্যন্ত গোপনীয় তথ্য সহজেই চলে আসছে। যে অ্যাক্সেস তাঁদের থাকার কথা নয়, তা এখন তাদের হাতের মুঠোয় চলে আসছে।

এই তথ্য হাতে আসার পরই সরকারের উচ্চ স্তরে হৈ হৈ পড়ে যায়। এই বিষয়ে কয়েক সপ্তাহ আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের উচ্চপদস্থ কর্তাদের নিয়ে একটি জরুরি গোপন বৈঠক বসে। যেখানে এই ভয়ানক সঙ্কটের সমাধান কী হবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাও হয়।

সাইবার অপরাধীরা এই পথেই কৌশলে অপব্যবহার করে চলেছে এবং নাগরিকদের প্রতারিত করছে। ওই বৈঠকে থাকা এক আধিকারিক এও জানান, ব্যাঙ্ক কর্তাদের বেশ কিছু সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট স্তরের আধিকারিকদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যা সবথেকে ভয় ও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে। অসংখ্য অভিযোগ আসা সত্ত্বেও সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষগুলি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে বৈঠকে জানিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। এক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যে, ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টালে আসা অভিযোগগুলির ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ প্রতারক অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলির গাফিলতি রয়েছে।
 
আর্থিক অপরাধের তদন্তে থাকা গোয়েন্দা সংস্থাগুলি সতর্ক করে বলেছে, ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের নিরাপত্তাতেও যথেষ্ট ঘাটতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। প্রতারণার প্রকৃতি, ভুয়ো অ্যাকাউন্ট এবং ব্যাঙ্কের প্রতিক্রিয়া সময় ধরে ধরে বৈঠকে বিশ্লেষণ করেছেন গোয়েন্দারা। সেখানে দেখা গিয়েছে, গলদ রয়েছে চলতি যে সুরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে সেখানেই, অথবা তা কাজ করেনি। ব্যাঙ্কগুলিও তা সংশোধন করার কোনওরকম চেষ্টা করেনি।ফলে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
 
সরকারের তরফে শীর্ষস্থানীয় স্তরের ওই বৈঠকে দ্রুত কঠোর পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার নয়া নির্দেশিকাকে কার্যকর করতে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ব্যাঙ্কগুলিকে তাদের অভ্যন্তরীণ তথ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে। পরিকাঠামোর উন্নতি,  তথ্য ফাঁসে কঠোর পদক্ষেপ করা ইত্যাদি  ব্যবস্থা না নেওয়া হলে সাইবার ক্রাইম রোধ করা দুঃসাধ্য বলে বৈঠকে আলোচনা করা হয়েছে।