দিল্লি, ৫ জুলাই – অমরনাথ যাত্রা শেষ হলেই জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা ভোট। খুব শীঘ্রই এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত জম্মু-কাশ্মীরের বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে বিধানসভা ভোট নিয়েই মূলত আলোচনা হয়েছে। তিনি উপত্যকার বিজেপি নেতাদের ভোটের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। তাই অনুমান করা হচ্ছে, অমরনাথ যাত্রা শেষ হলেই ভূ-স্বর্গে ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দেবে নির্বাচন কমিশন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাও জম্মু-কাশ্মীরের বিজেপি নেতাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। বিজেপি ৯০টি আসনেই লড়তে চলেছে।
লোকসভা ভোটের সঙ্গেই জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা ভোট হতে পারে এমন সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তেমন কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি নির্বাচন কমিশন। এদিকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে , ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন করাতেই হবে। তারই প্রেক্ষিতে মনে করা হচ্ছে অমরনাথ যাত্রা শেষ হলেই আগস্ট মাসের শেষের দিকে হতে পারে এই ভোট। শুক্রবার কেন্দ্রের একটি সূত্রে এই খবর জানানো হয়।ঘটনাচক্রে, শুক্রবারই ওই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যা কার্যত বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। ইতিমধ্যেই অমরনাথ যাত্রা চলছে। আগামী ১৯ অগস্ট এই যাত্রা শেষ হবে। সূত্রের খবর, যাত্রার শেষ হওয়ার পরই জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভা নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু করে দেবে নির্বাচন কমিশন।
সুপ্রিম কোর্ট আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা ভোট করানোর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র এবং কমিশনকে। জল্পনা ছিল, জম্মু ও কাশ্মীরের পাঁচ এবং লাদাখের একটি লোকসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের সঙ্গেই জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা ভোট হবে। কিন্তু তা হয়নি। তবে লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পরেই সেখানে বিধানসভা নির্বাচন আয়োজনের প্রক্রিয়া শুরু করা কথা জানায় কমিশন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার বলেন, ‘‘শীঘ্রই জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।’’ গত ৮ জুন কমিশনের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বলা হয়, ‘‘জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচনের জন্য ‘নির্বাচনী প্রতীক আদেশ, ১৯৬৪’-এর ১০বি অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রতীক চিহ্ন বরাদ্দের আবেদন গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দ্রুত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।’’ প্রসঙ্গত, নরেন্দ্র মোদি সরকার ২০১৯ সালের ৫ অগস্ট কেন্দ্র সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদে বর্ণিত জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপ করেছিল। বর্তমানে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে জম্মু-কাশ্মীরকে।সাবেক জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখে ভাগ করা হয়।
জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের বহু পুরনো দাবি ছিল। জনসংঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের অন্যতম স্লোগানই ছিল, এক দেশে এক বিধান, এক নিশান ও এক প্রধানই থাকবে। উপত্যকায় পৃথক বিধি থাকতে পারে না । বহু সময় ধরে উঠতে থাকা সেই দাবি পূরণ হয়, ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট। ৩৭০ ধারা বাতিলের বিষয় গড়িয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, জম্মু ও কাশ্মীরকে যে বিশেষ অধিকার দেওয়া হয়েছিল, তা সাময়িক। কাশ্মীরের গণপরিষদ বাতিল হয়ে যাওয়ার পরেও রাষ্ট্রপতির ওই অনুচ্ছেদ বাতিল করার অধিকারও ছিল। ফলে কেন্দ্রীয় সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা কখনই অসাংবিধানিক বা অনৈতিক নয়। তবে জম্মু ও কাশ্মীরকে পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা দিতে কেন্দ্রকে নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।
সূত্রের খবর, বিজেপি জানিয়েছে, তারা নির্বাচনের আগে কোনও দলের সঙ্গে জোট বাঁধবে না। সমমনস্ক দলের সঙ্গে আসন সমঝোতা করা হতে পারে। বিজেপির তরফে আপাতত কোনও মুখ্যমন্ত্রীর মুখও ঘোষণা করা হবে না।