দু’বছরের লড়াই শেষে কাফিল খান নির্দোষ

শিশু-বিভাগে অক্সিজেন সরবরাহকারী সংস্থাকে টাকা দেয়নি গোরক্ষপুরের সরকারি হাসপাতাল। ফলে আচমকা বন্ধ হয়ে গেছিল অক্সিজেন।

Written by SNS Gorakhpur | September 28, 2019 12:26 pm

গোরক্ষপুরের বাবা রাঘব দাস মেডিকেল কলেজ (বিআরডিএমসি) হাসপাতালে ভর্তি শিশুদের একটি দৃশ্য ১২ই আগস্ট, ২০১৭-তে বিআরডিএমসি হাসপাতালে গত পাঁচ দিনে ৬০০ শিশু মারা গিয়েছিল। (Photo: IANS)

শিশু-বিভাগে অক্সিজেন সরবরাহকারী সংস্থাকে টাকা দেয়নি গোরক্ষপুরের সরকারি হাসপাতাল। ফলে আচমকা বন্ধ হয়ে গেছিল অক্সিজেন। মৃত্যুর মুখে বহু শিশু। এই সময়ে নিজের উদ্যোগে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে এনে অনেকের প্রাণ বাঁচিয়ে সকলের কুর্নিশ কুড়িয়েছিলেন হাসপাতালের শিশুরােগ বিশেষজ্ঞ কাফিল খান।

রােগী-পরিবার থেকে জাতীয় সংবাদমাধ্যম— তাঁর ভূমিকার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন সকলেই। কিন্তু ২০১৭ সালের আগস্ট মাসের এই ঘটনার পরেই কাফিল খানকে রাতারাতি দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছিল যােগী আদিত্যনাথ সরকার। শুধু তা-ই নয়, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় দূনীতির, কাজে ফাকি দেওয়ার, প্রাইভেট প্র্যাকটিসের এবং চিকিৎসায় গাফিলতির।

ঘটনার পরে পেরিয়ে গিয়েছে দু’-দু’টো বছর। এর মধ্যে ন’মাস জেলও খেটেছেন কাফিল। অসহনীয় যন্ত্রণার সেই জেল-জীবনের কথা প্রকাশ পেয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। জামিন পাওয়ার পরে সিবিআই তদন্তের দাবি করেছিলেন কাফিল। দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে গিয়েছিলেন, নিজের মনের জোরে। অবশেষে, এতদিন পরে নির্দোষ প্রমাণিত হলেন তিনি। সিবিআই অফিসার হিমাংশু কুমারের ১৫ পাতার রিপাের্ট জানিয়ে দিল, কাফিলের বিরুদ্ধে ওঠা চারটি অভিযােগের একটিও প্রমাণিত হয়নি।

রিপাের্টে বলা হয়েছে, কাফিল খান তাঁর কর্তব্যে গাফিলতি তাে করেনইনি, বরং ১০ আগস্ট রাতে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে পরিস্থিতি যখন ভয়াবহ তখন তা সামাল দেওয়ার সর্বোত্তম চেষ্টা করে গেছেন। তাঁর প্রাইভেটে প্র্যাকটিস করা নিয়েও ওই রিপাের্ট বলেছে, ২০১৬ সালের অগাস্ট মাসের পর থেকে প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ করেছেন কাফিল। সরকারি হাসপাতালে কর্তব্যরত অবস্থায় অন্য কোথাও প্র্যাকটিস করেননি। এবং সর্বোপরি, যে এনসেফ্যালাইটিস বিভাগে চিকিৎসার গাফিলতির অভিযােগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে, সে বিভাগের দায়িত্বে ছিলেনই না কাফিল খান।

শুধু তা-ই নয়। হিমাংশু কুমারের ওই রিপাের্ট আরও বলছে, এতদিন কাফিল খানের বিরুদ্ধে যা তদন্ত হয়েছে, যার ভিত্তিতে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, তার কোনও তথ্য-প্রমাণ মেলেনি। যখন হাসপাতালে অক্সিজেন বিপর্যয় হয়েছিল, তখন স্বতঃপ্রণােদিত হয়ে পদক্ষেপ করার আগে কাফিল তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছিলেন বলে প্রমাণ রয়েছে, কিন্তু কেউ কোনও পদক্ষেপ করেননি। এমনই দাবি করছে ওই রিপাের্ট।

টেলিফোনে কফিল জানালেন, তিনি নির্দোষ তাই মুক্তি পানে, এ বিষয়ে তার আত্মবিশ্বাস ছিলই। কিন্তু সরকারের সঙ্গে এই লড়াই ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছিল। আসল অপরাধীরা আজও বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যে গাফিলতির কারণে হাসপাতালের শিশু বিভাগে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, সে গাফিলতিতে অভিযুক্তদের গায়ে এখনও আঁচও পড়েনি। অথচ আমার উপর দু’বছর ধরে চলছে এই অকথ্য চাপ।’ কাফিল খানের দাবি, সরকারের ক্ষমা চাওয়া উচিত। মৃত শিশুদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত। সর্বোপরি, সিবিআই তদন্ত করে আসল অপরাধীদের চিহ্নিত করুক, শাস্তি হােক তাদের।