ভারত-পাক সংঘাতের আবহে নতুন করে জোর দেওয়া হচ্ছে প্রতিরক্ষায়। ফলে প্রয়োজন দেখা দিয়েছে বাড়তি বরাদ্দের প্রয়োজনীয়তার। ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী ও মজবুত করে তুলতে ৫০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দের জন্য একটি অতিরিক্ত বাজেট প্রস্তাব আনার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। সংসদের আগামী শীতকালীন অধিবেশনেই এই প্রস্তাব গ্রহণ ও পাশ করানো হতে পারে বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে। অতিরিক্ত এই বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব পাশ হয়ে গেলে তা দেশের প্রতিরক্ষা ভাণ্ডারকে আরও শক্তিশালী করবে।
জঙ্গিদের দীর্ঘদিন ধরে মদত দিয়ে আসছে পাকিস্তান। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক স্তরে এই বিষয়টি বারবার উত্থাপন করেছে ভারতের বিদেশমন্ত্রক। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এর আগেও বলেছেন, সন্ত্রাসবাদে মদত এবং ভারত-পাক আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না। ২২ এপ্রিল পহেলগামে জঙ্গি আক্রমণের পর আবার প্রমাণিত হয়েছে পাকিস্তানের ভূমিকা। পাকিস্তানে এবং পাক অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে জঙ্গিঘাঁটিগুলি ভেঙে দিতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযান চালিয়েছে ভারতীয় সেনা। অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রের শক্তি দেখেছে বিশ্ব। ভারতের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের মুখোমুখি হয়ে গুঁড়িয়ে গেছে পাক সেনার অস্ত্র। চিনের তৈরি যুদ্ধবিমান বা তুরস্কের ড্রোন ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সামনে ধূলিসাত হয়েছে।
এই আবহে অত্যাধুনিক অস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি করে অনুভূত হয়েছে। তাই দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে সামরিক খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতিরক্ষা খাতে অতিরিক্ত ৫০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করা হবে আরও নতুন নতুন অস্ত্র-গোলাবারুদ কিনতে। সেই সঙ্গে বাড়ানো হবে রণকৌশলের প্রযুক্তিও।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ২০২৫-২৬ সালের বাজেটে সামরিক খাতে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য বরাদ্দ করেছিলেন ৬.৮১ লক্ষ কোটি টাকা। গত বাজেটের তুলনায় চলতি বছরের বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৯.৫৩ শতাংশ। অবশ্য গত বছরে প্রতিরক্ষা বাজেট প্রায় তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর, অর্থাৎ ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে প্রতিরক্ষার জন্য ৬.২২ লক্ষ কোটি বরাদ্দ ছিল। অপারেশন সিঁদুর-এর পর অত্যাধুনিক অস্ত্রের চাহিদা বাড়ছে। তাই প্রতিরক্ষাকে আরও মজবুত করতে নতুন অস্ত্র ও প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য দরকার এই অতিরিক্ত ফান্ড। তাই শীতকালীন অধিবেশনে অনুমোদনের জন্য পেশ করা হবে এই অতিরিক্ত তহবিলের প্রস্তাব। পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক সংঘাতের পরেই ভারতের এই সিদ্ধান্তকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্য দেশ থেকে কেনা আধুনিক সমরাস্ত্রের পাশাপাশি দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি সমরাস্ত্রেও আস্থা রেখেছে ভারত। আবার পাক হামলা রুখতে কার্যকর ভূমিকা নিয়েছে রাশিয়া থেকে কেনা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বা এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এস-৪০০, ভারতে যা ‘সুদর্শন চক্র’ নামে পরিচিত। ইতিমধ্যেই পরীক্ষা হয়েছে ভারতের ভার্গবাস্ত্রের।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি তথ্যানুযায়ী দেশের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানি ২৩ হাজার৬২২ কোটির ঘরে পৌঁছেছে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে। ২০১৩-১৪ সালের তুলনায় এটি ৩৪ গুণ। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের লক্ষ্য হল ২০২৯ সালের মধ্যে রপ্তানির পরিমাণ ৫০ হাজার কোটির অঙ্কে নিয়ে যাওয়া। দেশীয় পদ্ধতিতে অত্যাধুনিক অস্ত্র তৈরির উপর জোর দিতেই বাজেট বরাদ্দে জোর দেওয়া হচ্ছে।