• facebook
  • twitter
Wednesday, 31 December, 2025

চুরি ইভিএমে নয়, ভোটার তালিকায় হচ্ছে কমিশনকে নিশানা অভিষেকের

রোহিঙ্গাদের তালিকা প্রকাশের দাবি তৃণমূল সাংসদের

রাজ্যে এসআইআর চালু হওয়ার আগে থেকেই অনুপ্রবেশ ইস্যুতে সরব গেরুয়া শিবির। এসআইআর চালু হলে রোহিঙ্গা ধরা পড়ার দাবি করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বর্তমানে বাংলা-সহ ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এসআইআর প্রক্রিয়া চলছে। ভোটার তালিকায় ম্যাপিং প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। চলছে খসড়া ভোটার তালিকার শুনানি পর্ব। যাঁদের ২০০২ সালের ভোটার তালিকার সঙ্গে ম্যাপিং প্রক্রিয়া মেলেনি তাঁদের ডাকা হচ্ছে। এর মধ্যেই বুধবার দিল্লিতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের সঙ্গে বৈঠক করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই এদিন নির্বাচন কমিশনে যান  ডেরেক ও ব্রায়েন, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, নাদিমুল হক, প্রদীপ মজুমদার, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মানস ভুঁইয়া, মমতা ঠাকুর, সাকেত গোখেল এবং ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় পৌনে ৩ ঘণ্টার বৈঠক যে আদতে সারবত্তাহীন ছিল তা এদিন জানান অভিষেক। এদিনের বৈঠকে ১০-১২টি প্রশ্নের মধ্যে  ২-৩টি ছাড়া কোনটির জবাব দিতে পারেনি কমিশন, দাবি অভিষেকের।

Advertisement

ইভিএমে নয়, চুরি হচ্ছে ভোটার তালিকায় এবং তা হচ্ছে কমিশনের অফিস থেকেই। বৈঠকের পর বিস্ফোরক অভিযোগ করেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলায় এক কোটির বেশি ভোটারের অসঙ্গতি থাকার তথ্য উঠে এসেছে। তারা কারা, মূলত এই প্রশ্নের উত্তর পেতেই দিল্লিতে গিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ১ কোটির বেশি ভোটারের নামে ‘লজিক্যাল ডিসক্রিমেন্সি’ বা বাতিলের তালিকা থাকলে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। সেই সঙ্গে তালিকায় ক’জন রোহিঙ্গা  বা বাংলাদেশি  রয়েছে, তারও নথি প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন অভিষেক।

Advertisement

এদিন অভিষেক বলেন, ‘মহারাষ্ট্রে, হরিয়ানা, বিহারে, দিল্লিতে ভুলগুলি ধরতে পারেনি কংগ্রেস, আরজেডি, আম আদমি পার্টি। সব জায়গায় বিজেপি ৮৮ শতাংশের স্ট্রাইক রেটে জিতেছে, এটা কোনও কাকতালীয় ঘটনা নয়। এটা হয়েছে কারণ ভোটার তালিকায় চুরি হয়েছে এবং তা করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের দ্বারা।’ তিনি আরও বলেন ‘উপরতলার নির্দেশে ভোটচুরি করছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু কারচুপি ইভিএমে হচ্ছে না। ইভিএম তো পরীক্ষা করা যায়। আসল কারচুপি হচ্ছে ভোটার তালিকায়। সেই কারচুপি তৃণমূল কংগ্রেস ধরে ফেলেছে।‘

একই সঙ্গে নাম না করে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীকেও নিশানা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। অভিষেক বলেন, ‘শুধু সোশাল মিডিয়ায় বসে রাজনীতির জ্ঞান দিলে হবে না। চুরি হয়েছে, চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ করলে হবে না। মাঠে নেমে সেই চুরি ধরতে হবে। মাঝে মাঝে ২ ঘণ্টা ধরে জ্ঞান দিলে হবে না। মহারাষ্ট্রে, হরিয়ানায় কংগ্রেস সেটা পারেনি। এনসিপি পাওয়ার যেটা পারেনি। সেটা তৃণমূল কংগ্রেস করে দেখিয়েছে।‘

এদিন বৈঠকে কমিশনকে মোট দশটি বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। ‘সন্দেহজনক ভোটার’-এর নামের তালিকা প্রকাশ না করা নিয়ে প্রশ্ন করেন অভিষেক। শুনানিতে বিএলএ-দের কেন রাখা হচ্ছে না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে সম্মতি না পাওয়া গেলে এটি নিয়ে একটি সার্কুলার জারি করার কথা জানানো হয় তৃণমূলের তরফে। তবে এরকম কোনও সার্কুলার জারি করা হবে না বলে কমিশন জানিয়েছে । এর পরেই অভিষেকের আক্রমণ, ‘ওঁরা সার্কুলার জারি করবে না কারণ, ওঁরা জানেন সার্কুলার জারি করলেই সেই বিষয়টি নিয়ে আমরা আদালতে চ্যালেঞ্জ করব।‘ ইআরও-কে না জানিয়ে নাম ডিলিট করে দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান অভিষেক।

কোন সফটওয়্যার দিয়ে ম্যাপিং বা তালিকা সংক্রান্ত কাজ করা হচ্ছে, এরকম একাধিক প্রশ্ন বৈঠকে তোলা হয়েছে। এর পাশাপাশি ৫৮ লক্ষ যে নাম বাদ গিয়েছে, তার মধ্যে কতজন রোহিঙ্গা বা বাংলাদেশি রয়েছে, সেই সংখ্যাও জানানোর জন্যে বলা হয় কমিশনের কাছে। এ দিনের বৈঠকের মাঝে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার মেজাজ হারিয়ে কথা বলেন বলে দাবি অভিষেকের। তাঁর কথায়, ‘উনি দেখলাম আমাদের দিকে আঙুল উঁচিয়ে কথা বলছেন, আমরা সেটা করতে মানা করি। আমি বলি, আঙুল নামিয়ে কথা বলুন। আমরা এখানে যাঁরা আছি, প্রত্যেকে জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, মনোনীত নয়।’ জ্ঞানেশ কুমার ছাড়া বাকি দুই কমিশনার বৈঠকে চুপ ছিলেন বলেই দাবি অভিষেকের। এ দিনের বৈঠকের সিসিটিভি ফুটেজ প্ৰকাশ করার চ্যালেঞ্জও করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement