• facebook
  • twitter
Thursday, 18 December, 2025

স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে আমদানি বন্ধ, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে বড় ক্ষতির মুখে বাংলাদেশ

ভারতের স্থলবন্দর দিয়ে রেডিমেড পোশাক, খাবারের মতো বেশ কয়েকটি বাংলাদেশি পণ্যের আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

ভারতের স্থলবন্দর দিয়ে রেডিমেড পোশাক, খাবারের মতো বেশ কয়েকটি বাংলাদেশি পণ্যের আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়তে চলেছে ভারত-বাংলাদেশের বাণিজ্যে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তে বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়তে চলেছে বাংলাদেশ। গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ-এর (জিটিআরআই) একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, স্থলবন্দর বন্ধ করার ফলে বাংলাদেশের ৪২ শতাংশ আমদানিতে কোপ পড়েছে।

বাংলাদেশি রেডিমেড পোশাক, খাদ্যসামগ্রীর মতো কিছু দ্রব্যের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের অধীনে থাকা বৈদেশিক বাণিজ্য দপ্তর (ডিজিএফটি)। স্থল বন্দরগুলি দিয়ে আর এই জাতীয় পণ্য ভারতে প্রবেশ করতে পারবে না। অবশ্য ভারত হয়ে নেপাল বা ভুটানের মতো দেশে এই সমস্ত সামগ্রীও পাঠাতে পারে বাংলাদেশ। সেই বিষয়ে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি কেন্দ্র। বাংলাদেশ থেকে আসা মাছ, এলপিজি, ভোজ্য তেলের মতো পণ্যের ক্ষেত্রে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। সেগুলি যেমন ভারতে আসতে পারবে, ঠিক তেমনই ভারত হয়ে অন্য দেশেও পৌঁছানো যাবে। আর পোশাকের জন্য কেবল খোলা রাখা হয়েছে কলকাতা এবং মুম্বইয়ের বন্দর।

Advertisement

এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশ থেকে অসম, মিজোরাম, মেঘালয় কিংবা ত্রিপুরার কোনও শুল্ককেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না ফল, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যদ্রব্য, তুলা, সুতির পোশাক, প্লাস্টিক এবং পিভিসি দিয়ে তৈরি জিনিস, রঞ্জকের মতো পণ্য। পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা এবং ফুলবাড়ি শুল্ককেন্দ্রের ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। গত মাসেই তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে ‘ট্রান্সশিপমেন্ট’ সুবিধা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল ভারত। অর্থাৎ, ভারতের শুল্ককেন্দ্র ব্যবহার করে তৃতীয় কোনও দেশে পণ্য রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ।

Advertisement

দিন কয়েক আগেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস দাবি করেন, উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত রাজ্য, নেপাল, ভুটান এবং বাংলাদেশের আলাদাভাবে কাজ করার বদলে এক সঙ্গে কাজ করলে বেশি লাভবান হবে। ইউনূসের এই মন্তব্য ভালোভাবে নেয়নি নয়াদিল্লি। চিনের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধিও নজর এড়ায়নি। এর আগে ভারত থেকে স্থলপথে সুতো আমদানি বন্ধ করে দেয় ঢাকা। তার পরেই নয়াদিল্লির এই সিদ্ধান্ত। ওয়াকিবহল মহলের মতে, এই সমস্ত কারণের জন্যই বাংলাদেশি পণ্য আমদানি নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল। তবে স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও কলকাতা কিংবা মুম্বইয়ের মতো সমুদ্রবন্দর হয়ে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশের অধিকার রয়েছে।

এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আশঙ্কা ও উদ্বেগে রয়েছেন সীমান্ত বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত গাড়ির চালক থেকে খালাসি এবং ব্যবসায়ীরা। পেট্রোপালের ব্যবসায়ী কার্তিক চক্রবর্তী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘পেট্রাপোল সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর। এখান দিয়ে বস্ত্র আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় প্রচুর ব্যবসায়ী, যাঁরা লজিস্টিক সাপোর্ট দিতেন, তাঁদের বিরাট ক্ষতি হবে। তবে বাংলাদেশেরও বোঝা উচিত। ওদের কাছে আমরা ভিলেন হয়ে গিয়েছি! কিন্তু ওদের স্বাধীনতায় আমাদের কতটা অবদান আছে, তা ওরা ভুলে গিয়েছে। তাই ওদের শিক্ষা দেওয়াটা দরকার।’

গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই)-এর একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, স্থলবন্দর বন্ধ করার ফলে বাংলাদেশের ৪২ শতাংশ আমদানিতে কোপ পড়েছে। জিটিআরআই-এর পরিসংখ্যান বলছে, ভারতীয় মুদ্রায় এই সমস্ত পণ্যের (নিষেধাজ্ঞায় থাকা) বার্ষিক আমদানির মোট মূল্য সাড়ে ছ’হাজার কোটি টাকার বেশি। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকার কারণে এবার থেকে ভারতে পোশাক, তেল, ফল বা সুতো রপ্তানি করতে হলে বাংলাদেশের একমাত্র ভরসা জলপথ। এর ফলে খরচ পরিমাণে বাড়বে। এতে রপ্তানির পরিমাণ কমতে বাধ্য। ফলে বাংলাদেশ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।

Advertisement